আঘাত হানার আগেই খুদে বার্তায় গ্রহকদের সচেতন করার পাশাপাশি নিয়ন্ত্রক কমিশন বিটিআরসি’র মাধ্যমে অপারেটরদের সতর্ক করেছিলো ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের ১৯ জেলায় অবস্থিত ১৩৯০২টি সাইটের মধ্যে ৭ হাজার ৩৪২ সাইটের ৬ হাজার মোবাইল টাওয়ার ডাউন হয়ে যায়। সিত্রাং তাণ্ডবের তিনদিন পার হয়ে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সচল করা সম্ভব হয়নি এক হাজার ১৭৬ মোবাইল টাওয়ার। তবে ব্রডব্যান্ড সংযোগ সঞ্চালন সেবাদাতাদের মধ্যে ৪ এনটিটিএন এর অধিকারে থাকা ৩৯টি পিওআই এর মধ্যে যে একটি আক্রান্ত হয়েছিলো ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তা সচল হয়েছে। একইভাবে ওই অঞ্চলগুলোতে গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবা দেয়া আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলোর ১৮৫টি পাওয়ার অব প্রেজেন্স বা পপ সক্রিয় রয়েছে। ফলে বিদ্যুৎহীনতায় সাময়িক সংযোগ বিচ্ছিন্নতার পর পুরো দেশেই উচ্চ গতির ইন্টারনেট সচল রাখা সম্ভ হয়েছে।
কিন্তু ঘুর্ণিঝড় তাণ্ডবের ৭২ ঘণ্টা পরও স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরেনি ঘূর্ণিঝড় কবলিত এলাকার মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা। নেটওয়ার্ক না থাকলেও পূর্বে পরিশোধিত মেয়াদী প্যাকেজ উত্তীর্ণ হওয়া নিয়ে ক্ষুব্ধতা সৃষ্টি হয়েছে মুঠোফোন গ্রাহকদের মধ্যে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বেশকিছু জেলায় মোবাইল নেটওয়ার্ক বিঘ্নিত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন গ্রাহকরা। তাদের অভিযোগ, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে বিকেল তিনটা মোবাইল নেটওয়ার্কে সমস্যা ছিল। এসময় মোবাইলে ডাটা থাকা সত্ত্বেও ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেননি। শুধু মেসেঞ্জারে মেসেজ আদান-প্রদান করা গেছে। মোবাইলে কল দিলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।
এমন পরিস্থিতিতে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে যেসব এলাকায় মোবাইলের নেটওয়ার্ক পাওয়া যাচ্ছে না তাদের টাকা ও ডাটা ফেরত দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন গ্রাহক স্বার্থ নিয়ে কাজ করা সংগঠন বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশেনর সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, বর্তমানে ইন্টারনেটের চাহিদা মোবাইল গ্রাহকদের মধ্যে বেড়েই চলেছে। তিন হাজার ৮৫০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করছেন গ্রাহকরা। মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ১০ কোটি ৭৫ লাখ। কিন্তু বিপুল সংখ্যক গ্রাহকের ইন্টারনেট ব্যবহারে দুর্ভোগের শেষ নেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় গ্রাহকের ডাটা আছে অথচ গতি (ডাউনলোড স্পিড) নেই। আমরা যখন অব্যবহৃত ডাটা ফেরত দেওয়ার জন্য আবেদন করলাম, তখন টেলিযোগাযোগমন্ত্রী নির্দেশ দিলেন গত আগস্ট থেকে ফেরত দিতে হবে। কিছু কিছু গ্রাহক অব্যবহৃত ডাটা ফেরত পেলেও অধিকাংশ গ্রাহক তা পায়নি। জ্বালানি সংকট ও বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের সঙ্গে সঙ্গে বর্তমান সময়ে ইন্টারনেটের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে।
বিটিআরসি সূত্রে প্রকাশ, সিত্রাং তাণ্ডবে দেশের ১৯ জেলায় চার মোবাইল অপারেটরের ১৩ হাজার ৯০২টি টাওয়ারের মধ্যে ছয় হাজার টাওয়ার একেবারেই অচল হয়ে যায়। বুধবার (২৬ অক্টোবর) রাত ১০টা পর্যন্ত চার হাজার ৮৩১টি টাওয়ার সচল করা হয়। বাকি এক হাজার ১৭৬টি টাওয়ার সচলের কাজ চলমান রয়েছে। দুই-একদিনের মধ্যে এগুলোও সচল করা সম্ভব হবে।
এ নিয়ে বিটিআরসি’র ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন্স বিভাগের প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদ , ঝড়ের কারণে বিদুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন এবং জলোচ্ছ্বাসের কারণে টাওয়ারগুলো বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশকিছু টাওয়ারে ঝড়ের কারণে পানি ঢুকেছে এবং নানা কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুই-একদিনের মধ্যে সব টাওয়ার সচল করা সম্ভব হবে।
বিটিআরসি’র গণমাধ্যম শাখা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ঘুর্ণিঝড় সিত্রাং হানায় গ্রামীণফোনের ৪৭১৮টি সাইটের ২৮৬৩টি, রবি’র ৫ হাজার ৩২টি সাইটের মধ্যে ২৪৯১টি, বাংলালিংক এর ২ হাজার ৯৩৭টি সাইটের মধ্যে ১৩৭৮টি এবং টেলিটকের ১ হাজার ২১৫টি সাইটের মধ্যে ৬১০টি সাইট অচল হয়ে যায়। এর মধ্যে জিপি’র ৬৯০টি, রবি’র ৫৭৪টি, বাংলালিংকের ২০টি এবং টেলিটকের ২৪৪টি মিলো মোট ১৫২৮টি টাওয়ার ২৮ ঘণ্টার মধ্যেই সচল হয়েছে। ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) প্রতিষ্ঠান সামিট কমিউনিকেশনের ৩৫২টি পয়েন্ট অবে প্রেজেন্স (পপ) বন্ধ হয়ে যায়। এর অধিকাংশ থেকেই মোবাইল অপারেটররা সেবা নিয়ে থাকে।