তপ্ত দুপুরে গরমের তীব্রতায় নাগরিক জীবনের এমন হাঁসফাঁস অবস্থার মধ্যে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, এবার এই এপ্রিল মাসে টানা যত দিন তাপপ্রবাহ হয়েছে, তা গত ৭৬ বছরেও হয়নি। গত বছর টানা ১৬ দিন তাপপ্রবাহ হয়েছিল। এবার তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে ১ এপ্রিল থেকে।
অতিরিক্ত গরম থেকে রক্ষা পেতে কমবেশি সবাই এসি ব্যবহার করে থাকেন। তবে এসি ব্যবহারে সবচেয়ে বেশি যে ব্যাপারটা চিন্তায় ফেলে সেটা হচ্ছে বিদ্যুৎ বিল। অনেকেই বিদ্যুৎ বিল কমানোর জন্য ছোট এসি কেনেন। তারপরও বিদ্যুৎ বিলের চিন্তা মাথা থেকে যায় না।
তবে এসি কেনার সময় ঘর কতটা বড়, তার উপর নির্ভর করে কিনতে হয়। ঘরের আকার বড় হলে অবশ্যই বড় এসি কেনা উচিত। সেক্ষেত্রে বিদ্যুৎ বিলেও কিছুটা তারতম্য হতে পারে। আজকের প্রতিবেদনে জেনে নিন কত টনের এসিতে কেমন বিদ্যুৎ বিল আসতে পারে।
দেশের জনপ্রিয় ইলেকট্রিক পণ্যের ব্র্যান্ড ওয়ালটনের এসি ইলেকট্রিসিটি বিল ক্যালকুলেশনের হিসেব থেকে জানা যায়, দেড় টনের একটি ওয়ালটন ইনভার্টার রেগুলার এসি ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় একটানা ৫০ মিনিট করে প্রতিদিন আট ঘণ্টা চালালে এক মাসে বিদ্যুৎ খরচ হবে ২৫৩ দশমিক ৪১ কিলোওয়াট। যার আনুমানিক বিল আসবে প্রায় এক হাজার ৫৬৩ টাকার কিছু বেশি।
একই সময়ে দুই টনের একটি এসির বিদ্যুৎ বিল আসবে প্রায় আড়াই হাজার টাকা। তবে এক টনের একটি এসি একই সময় ধরে চালালে বিদ্যুৎ বিল আসবে প্রায় এক হাজার ৩০০ টাকার কিছু বেশি।
এই হিসেবগুলো ওয়ালটনের এসি ইলেকট্রিসিটি বিল ক্যালকুলেশনের মাধ্যমে করা হয়েছে। উল্লেখ করা বিষয় এবং বিদ্যুৎ বিলের উপর নির্ভর করে এসির বিদ্যুৎ খরচও পরিবর্তিত হতে পারে।
অপর দেশী কোম্পানী ভিশন ব্র্যান্ড এসির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান প্রাণ আরএফএল সূত্র জানিয়েছে, একটি দেড় টন এসি প্রতি ঘণ্টায় ১২০০ থেকে ১৮০০ ওয়াট (প্রতি ঘণ্টায় ১.২ থেকে ১.৮ ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ) করতে পারে। ইইআর = অ্যামাউন্ট অব হিট রিমুভড পার আওয়ার/ পাওয়ার কনজিউমড। অর্থাৎ ইইআর রেটিং বেশি এসি কার্যকরী হবে আরও বেশি। ফলে ঘরের বাতাস থাকবে স্বাস্থ্যকর। এসি কার্যকরী হলে বিদ্যুৎ পুড়বে কম। এছাড়া এসির বিদ্যুৎ খরচ কমাতে আরও বেশ কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে। যেমন কোন তাপমাত্রায় এসি চালাচ্ছেন তাও গুরুত্বপূর্ণ। এসি কেনার সময় স্প্লিট নাকি উইন্ডো এসি বুঝে কিনুন। ঘরের মাপ অনুয়াযী এসির টন হিসাব করুন। এতে ঘর দ্রুত ঠান্ডা হবে এবং বিদ্যুৎ খরচও কম হবে। তাই এয়ার কন্ডিশনারটির তাপমাত্রা ২৪-২৮ ডিগ্রির মধ্যে সেট করলে ১০ মিনিটের ব্যবধানে ঘরের তাপমাত্রা যেমন কমে যায়, তেমনি বিদ্যুৎ খরচও কমে।
প্রকৌশলীদের মতে, এসির সঙ্গে একটি সিলিং ফ্যান ব্যবহার করলে ঘরের গরম বাতাস বেরিয়ে যাবে। আর এসির কারণে চারপাশের পরিবেশও দ্রুত ঠান্ডা হয়ে যাবে। এর জন্য অবশ্য একটা ট্রিক অবলম্বন করতে হবে। সেটা হলো এসির তাপমাত্রা ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সেট করা উচিত। এই তাপমাত্রায় রাখা এসি এবং সিলিং ফ্যান একসঙ্গে কাজ করলে ঘরের তাপমাত্রা হবে ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সেট করা এসি-র মতো। এছাড়াও এসির সঙ্গে ফ্যান ব্যবহার করলে ইলেকট্রিসিটি বিলও প্রায় ১২-২০ শতাংশ সাশ্রয় হবে।
এর পেছনের যুক্তি হিসেবে বলা হচ্ছে, সাধারণ মানুষের দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গরমের সময় আশপাশের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। আর এমনটা হলে আমাদের দেহ ঘাম নির্গত করে ঠান্ডা থাকে। আর্দ্রতার মাত্রা কম থাকলেই শুধু এটা হয়ে থাকে। কিন্তু আর্দ্রতার মাত্রা বৃদ্ধি পেলে ঘাম সেভাবে কাজ করে না। ফলে আমরা অস্বস্তিতে পড়ি। কারণ বাতাসে পর্যাপ্ত আর্দ্রতা থাকার ফলে আমাদের দেহ থেকে যে পানি নির্গত হয়, তা শোষণ করতে দেরি হয়, কিংবা তা শোষণ করতে পারে না। আর এখানেই সাহায্য করে ফ্যান। যদিও ফ্যান আশপাশটা ঠান্ডা করতে পারে না। তবুও ফ্যান থেকে নির্গত যে বাতাস এটি ঠেলে দেয়, তা ত্বক থেকে গরম বাতাস অপসারণ করতে এবং ঘামের বাষ্পীভবনে সহায়তা করে। এমনকী পরিস্থিতি আরামদায়ক করে তোলে।