প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যায়ে ‘সাইবার নিরাপত্তা’ পাঠ্য হিসেবে অন্তর্ভূক্তির দাবি জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
বৃহস্পতিবার বিটিআরসি সম্মেলন কেন্দ্রে ‘সাইবার সুরক্ষা কী, কেন, কীভাবে’ বিষয়ক দিনব্যাপী যুব কর্মশালা ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই দাবি তুলেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, এখন যুদ্ধের হাতিয়ার হয়ে গেছে ডিজিটাল ডিভাইস। তাই ডিজিটাল সংযুক্তির সাথে সাথে ডিজিটাল অপরাধ মোকাবেলার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে।
সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন (সিসিএ) ও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) যৌথ আয়োজনে সভায় মোস্তাফা জব্বার বলেন, ডিজিটাল অপরাধ ঠেকাতে ডিজিটাল প্রযুক্তি দরকার। মাথা ব্যথা হলেই মাথা কেটে ফেলবো না। ওষুধ খেতে হবে। সেক্ষেত্রে সচেতনতা প্রধান হাতিয়ার।
ডিজিটাল অপরাধের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক অপরাধের চেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়কে বেশি গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, প্রত্যেক থানায় একটি সাইবার বা ডিজিটাল ক্রাইম ইউনিট করা দরকার। সেখানে কর্মরতদের ব্যাপকভাবে প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
মন্ত্রী ডিজিটাল নিরপত্তা বিধানে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন কৌশল ও কর্মসূচি তুলে ধরে বলেন, আমরা ২৬ হাজার পর্নো সাইট ও ৬ হাজার জুয়ার সাইট বন্ধ করেছি। প্রতিদিনই এমন সাইট বন্ধ হচ্ছে। বাংলাদেশ এক সময় পর্নো ব্যবহারকারীর তালিকায় শীর্ষ দশের তালিকায় ছিলো। সে অবস্থা এখন পাল্টেছে, শত দেশের তালিকাতেও এখন বাংলাদেশের নাম নেই। তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ক্ষতিকর লিংক অপসারণে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তির সংযোজনের প্রচেষ্টা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। তা ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাথে সম্পর্কোন্নয়নের মাধ্যমে ক্ষতিকর উপাত্ত প্রত্যাহারে আশানুরূপ অগ্রগতি অর্জন সম্ভব হচ্ছে। ডিজিটাল প্রযুক্তি বিকাশের অগ্রদূত জনাব মোস্তাফা জব্বার বলেন, প্রত্যেক থানায় ডিজিটাল ক্রাইম ইউনিট থাকা উচিৎ। ডিজিটাল অপরাধ সম্পর্কে সচেতনতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজকে যে সব অপরাধ নিয়ে চিন্তা করতে হয় ২০ বছর আগে সেগুলোর অস্তিত্ব ছিল না। এখন এই অপরাধের পরিধি যুদ্ধ-বিগ্রহ পর্যন্ত পৌঁছেছে। তার মানে যুদ্ধের একটি হাতিয়ার হয়ে গেছে ডিজিটালি আক্রমণ করা। এক দেশ অস্ত্র দিয়ে যেমন হামলা করে তেমনি করে ডিজিটাল অস্ত্র দিয়ে হামলা করে তাকে বিপর্যস্ত করার চেষ্টা করে। অনুষ্ঠানে সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিটিআরসি‘র সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসিম পারভেজ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘কেপিআই’ এর মতো ‘সিআইএ’ তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এতে তথ্য সংগ্রহে সাংবাদিকদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
ডিজিটাল রূপান্তরে সমস্যার চেয়ে সুবিধাই বেশি এমন ইঙ্গিত করে মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘ ই-নথি’ আমাদের দেশে বিপ্লব ঘটিয়েছে।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদারের সভাপতিত্বে সভা সঞ্চালনা করেন সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের সভাপতি কাজী মুস্তাফিজ।
সভায় স্বাগত বক্তব্যে কমিশনের ভাইস-চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র বলেন, বর্তমানে সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টি বহুল আলোচিত এবং বিশ্বের প্রতিটি দেশই সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত নানা সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছে। তরুণ সমাজ যাতে সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতন হয়, সে বিষয়ে অধিক প্রচার প্রচারণা ও কর্মশালা আয়োজনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
এসময় আলোচনায় অংশ নেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি’র কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. তৌহিদ ভূঁইয়া, সাবাইর সুরক্ষা কর্তৃপক্ষ (ডিএসএ) পরিচালক তারেক বরকতুল্লাহ,পুলিশের সাইবার নিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার নাজমুল ইসলাম প্রমুখ।
অন্যান্যদের মধ্যে ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড অপারেশন্স বিভাগের কমিশনার প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদ, লীগ্যাল এন্ড লাইসেন্সিং বিভাগের কমিশনার আবু সৈয়দ দিলজার হোসেন, প্রশাসন বিভাগের মহাপরিচালক মো: দেলোয়ার হোসাইন, স্পেকক্ট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জুয়েল, লিগ্যাল এন্ড লাইসেন্সিং বিভাগের মহাপরিচালক আশীষ কুমার কুন্ডু, সচিব (বিটিআরসি) মো: নুরুল হাফিজ এবং যুব কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।