বেশ কিছুদিন ধরেই হুয়াওয়েকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে আসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সবেশেষে কোম্পানিটিকে সেখানে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। ফলে এখন থেকে হুয়াওয়ের সঙ্গে বাণিজ্য করতে হলে মার্কিন কোম্পানিগুলোকে আলাদা ভাবে লাইসেন্স নিতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে হুয়াওয়ে-কে নিরাপত্তাবিষয়ক আপডেট ও প্রযুক্তিগত সহায়তা স্থগিত করে গুগল। একে একে বাণিজ্যিক সম্পর্কচ্ছেদ করে ইন্টেল, কোয়ালকমের মতো চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। আপাতদৃষ্টিতে পুরো প্রক্রিয়াটি এখন রূপ নিয়েছে মার্কিন-চীন বাণিজ্য যুদ্ধে। তবে এই যুদ্ধ-কে চিপযুদ্ধ বলে মত বিশ্লেষকদের।
কেননা শুরু থেকে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, এই যুদ্ধের পেছনে রয়েছে মাইক্রোচিপের বাজার দখল। বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, বৈশ্বিকভাবে ইলেকট্রনিকস ডিভাইসের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে সংশ্লিষ্ট ডিভাইসগুলোয় চিপের চাহিদাও। এতে প্রসারিত হচ্ছে সেমিকন্ডাক্টর ব্যবসা বা চিপ নির্মাণ খাত। চিপ তৈরিতে এত দিন শুধু একচ্ছত্র আধিপত্য দেখিয়েছে মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু এখন চিপের রাজ্যে হানা দিচ্ছে চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো।
কেন চিপের দিকে ঝুঁকছে উভয় পরাশক্তি দেশই। উত্তর খুবই সোজা। কেননা ডেটা বা তথ্যকে আধুনিক যুগের তেল হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। আর চিপকে বলা চলে ইঞ্জিন। এই তথ্য-উপাত্ত বা তেলকে উপযোগী করতে মাইক্রোচিপ উৎপাদনের মাধ্যমে এখন কোটি কোটি ডলারের ব্যবসা হচ্ছে। সঙ্গত কারণেই কম্পিউটার চিপ এখন ডিজিটাল অর্থনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তার মূল ভিত্তি।
দ্য ইকোনোমিস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এতোদিন যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্রদেশগুলোর হাতে সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের লাগাম থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে এগিয়ে গিয়েছে। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন চিপের জন্য চীনকে এখনো যুক্তরাষ্ট্রের ওপরে নির্ভর করতে হচ্ছে। তেল আমদানিতে চীনের যত ব্যয় হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি ব্যয় হচ্ছে সেমিকন্ডাক্টর আমদানিতে। বিষয়টি বুঝতে পেরে ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই সেমিকন্ডাক্টর খাতটিকে এগিয়ে নিতে কাজ শুরু করে চীন।
বিশেষ করে সেমিকন্ডাক্টর খাতে স্বনির্ভর হতে চীন সরকারের প্রণোদনা বাড়ানো হয়। জেডটিইর ঘটনার পরে দেশটির বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কথা বলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। এরপর আলিবাবা, বাইদু ও হুয়াওয়ে চিপ তৈরিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। চীন দেখিয়ে দিচ্ছে যে তারা মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে রুখে দিতে পারে। সেই ভয়েই হুয়াওয়ের উচ্চাভিলাষ ঠেকাতেই নতুন আঘাত হানল যুক্তরাষ্ট্র।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে ১ ট্রিলিয়ন ইউয়ান (১৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) সেমিকন্ডাক্টর খাতে বিনিয়োগ করার ঘোষণা দেওয়া হয়। ‘মেড ইন চায়না ২০২৫’ লক্ষ্য নিয়ে ২০১৫ সালে একটি জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা পেশ করে দেশটি। চীনের এ ঘোষণায় সতর্ক হয় যুক্তরাষ্ট্র। চীনের উন্নত প্রযুক্তির শিল্প তৈরির লক্ষ্য আটকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তৎকালীন ওবামা প্রশাসন। ২০১৫ সালে চীনের বাজারে ইনটেলকে পণ্য বিক্রিতে বাধা দেওয়া হয়। এমনকি, ২০১৬ সালে কোনো চীনা প্রতিষ্ঠান যাতে সহজে চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অধিগ্রহণ করতে না পারে, সে ব্যবস্থাও করা হয়। ওবামা আমলের গৃহীত ব্যবস্থাগুলো আরও শক্ত করে ট্রাম্প প্রশাসন।