নাগরিক অভিযোগসমূহ চিহ্নিতকরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারের অনলাইন অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা বা গ্রিভেন্স রিডরেস সিস্টেম (জিআরএস) সাতক্ষীরা জেলায় পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছে। জিআরএস প্রথম চালু করা হয় ১৯৮৬ সালে। ২০১৫ সালে ২১টি জেলায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এই সিস্টেমটির অনলাইন সংস্করণ চালু করে। কিন্তু সিস্টেমটির কার্যক্রম শুধুমাত্র জেলা পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকার কারণে এটির পরিপূর্ণ ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি। নতুনভাবে অনলাইন জিআরএস সিস্টেমটি পরীক্ষামূলকভাবে সাতক্ষীরার সদর ও আশাশুনি উপজেলায় শুরু করা হয়।
সাতক্ষীরা জেলার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির প্রধান অতিথি হিসেবে অনলাইন জিআরএস এর উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে ইউএনডিপি বাংলাদেশের ডেপুটি রেসিডেন্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ ভ্যান নুয়েন বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এটুআই-এর পলিসি অ্যাডভাইজর আনির চৌধুরীর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্যানেল হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর, প্রকল্প পরিচালক (যুগ্ম সচিব), এটুআই; মোঃ খালেদ হাসান, যুগ্ম সচিব, সোশ্যাল সেফটি নেট (এসএসএন), মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ; আঙ্গা আর টিমিলসিনা, এন্টি-করাপশন গ্লোবাল অ্যাডভাইজার, ইউএনডিপি, এসিপিআইএস; এসআইডিএ এর প্রতিনিধি এবং জনপ্রতিনিধি আসাদুজ্জামান বাবু। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে ইউএনডিপি, এটুআই, আইসিটি বিভাগ এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
জিআরএস এর নতুন সংস্করণটিতে জাতীয় হেল্পলাইন 333 এবং ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যুক্ত করা হয়েছে। জিআরএস অ্যাপের মাধ্যমেও নাগরিকগণ অনলাইনেও তাদের অভিযোগ তুলে ধরতে পারবেন। ফলে নাগরিকদের অভিযোগের সমাধান করার জন্য এটি একটি কার্যকর হাতিয়ার এবং এসডিজি-১৬ অর্জনের পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।
প্রধান অতিথি মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর বলেন, “নাগরিকদের সর্বোচ্চ সেবা প্রদানের জন্য সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে। নাগরিকগণ এখন সশরীরে সরকারি দপ্তরে না এসেও ঝামেলাবিহীন অনলাইনে তাদের অভিযোগ জানাতে পারবেন”। তিনি বিশ্বাস করেন যে, নতুন এই সিস্টেম নাগরিকদের অভিযোগ করতে আরো বেশি কার্যকর হবে এবং একইভাবে নাগরিকদের সন্তুষ্টি অর্জনে সক্ষম হবে। ”
বিশেষ অতিথি ভ্যান নুয়েন, বলেন, “জিআরএস হল সেবা প্রদানকারী এবং সেবা গ্রহণকারীদেরকে একই প্ল্যাটফর্মে একীভূত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার।” তিনি নাগরিকদের জিআরএস ব্যবহার করতে উৎসাহিত করেন। নাগরিকদের অংশগ্রহণের উপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, প্ল্যাটফর্মটিকে সফল করতে নাগরিকদের অবশ্যই সিস্টেমটি ব্যবহার করতে হবে। যদি তারা অভিযোগ দায়ের না করেন, তাহলে সেবা প্রদানকারীদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না।” তিনি তার বক্তব্যের শেষে বলেন, “অগ্রগতির বিভিন্ন স্তরে সক্ষমতার পাশাপাশি নতুন জিআরএস বৃহত্তর সেবা সরবরাহের পথ প্রশস্ত করতে পারে, যা বৃহত্তর নাগরিক সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে এসডিজি-১৬ অর্জন করতে সহায়ক হবে।”
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কাজী আরিফুর রহমান; এরপর নতুন জিআরএস সম্পর্কে বিস্তারিত উপস্থাপন করেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব মোঃ মোখলেসুর রহমান। খন্দকার মনোয়ার মোর্শেদ জিআরএস-এর পরবর্তী পদক্ষেপগুলো সম্পর্কে ধারণা দেন এবং কীভাবে অফলাইন ও অনলাইন যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে নাগরিকদের সর্বোচ্চ সচেতনতা ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে তা ব্যক্ত করেন।
আনীর চৌধুরীর সঞ্চালনায় জনসেবা প্রদানকে শক্তিশালী করার উপর জিআরএস-এর ভূমিকা এবং ভবিষ্যত প্রভাব নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় বক্তারা দেশে জিআরএস-এর প্রয়োজনীয়তা এবং জিআরএস-এ সদ্য সমন্বিত জাতীয় হেল্পলাইন 333 এবং সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভূমিকা এবং কীভাবে এই প্ল্যাটফর্মগুলো নাগরিকদের সর্বোচ্চ সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে সে সম্পর্কে কথা বলেন। তারা জিআরএস এর প্রভাব সম্পর্কেও আলোচনা করেন এবং মানসম্পন্ন পরিষেবা সরবরাহের মাধ্যমে নাগরিকদের সন্তুষ্টি নিশ্চিত করার জন্য কীভাবে এই সিস্টেমটিকে আরও উন্নত করা যেতে পারে সে বিষয়েও আলোকপাত করেছেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে স্থানীয় প্রশাসন ও মন্ত্রনালয়, এনজিও, প্রাইভেট ক্লাব, মিডিয়া, উপজেলা ও ইউনিয়ন, এটুআই এবং ইউএনডিপি-এর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।