প্রযুক্তি-ভিত্তিক প্রতিযোগিতা ‘ডিজিটাল ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ ফর উইমেন ২০২৩’ এর চতুর্থ আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে টিম সানশাইন। প্রথম রানার্সআপ হয়েছে টিম এলিসা ও দ্বিতীয় রানার্সআপ টিম গ্র্যান্ডে। এছাড়াও চতুর্থ ও পঞ্চম হয়েছে টিম লুমেনিসিনস ও আইএসটি অ্যাসপাইরেশন।
রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব শেষে শনিবার (২০ মে) সন্ধ্যায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
প্রতিযোগিতায় সেরা পাঁচ বিজয়ী টিমকে অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসের সল্যুশনসের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে ৩ লাখ টাকা। প্রথম টিমকে পুরস্কার হিসেবে দেয়া হয়েছে ৫০ হাজার টাকা, দ্বিতীয় টিমকে ৩০ হাজার টাকা এবং তৃতীয় ও চতুর্থ টিমকে ৩০ হাজার টাকা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, অসম্ভব মনে হলেও ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী একজন পুরুষের সঙ্গে আরেকজন নারী উদ্যোক্তা তৈরির সুযোগ করে দিয়েছেন। ২০১৪ সাল থেকে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার পর আইসিটি উপদেষ্টার পরামর্শে জেলা পর্যায়ে হাইটেক পার্ক স্থাপনের কাজ শুরু করি। কালিয়কৈর হাইটেক পার্ক করার পর এরইমধ্যে সেখান থেকে ২০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ পেয়েছি। আরো ৩০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ পাইপলাইনে আছে। আশা করা যায় ২০২৫ সালের মধ্যে প্রায় অর্ধ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হবে এই হাইটেক সিটিতে।
প্রতিমন্ত্রী আরো জানান, এআই, রোবটিকস, ডেটা অ্যানালেটিক্স, মাইক্রোচিপ ডিজাইনার ও সাইবার সিকিউরিটির মতো ফ্রন্টিয়ার প্রযুক্তি দক্ষতা অর্জনে ৩০০ মিলিয়ন ডলারের ইডিসি প্রকল্পের অধীনে ট্রেইন অ্যান্ড হায়ার নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে আইসিটি বিভাগ। এই প্রকল্পের অধীনে লক্ষাধিক মানবসম্পদ তৈরির সুযোগ রয়েছে। সুযোগটি গ্রহণে উইমেন ইন ডিজিটাল নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান পলক।
উইমেন ইন ডিজিটালের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের পাটোয়ারির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন উইমেন ইন ডিজিটালের ফাউন্ডার অ্যান্ড চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার আছিয়া খালেদা নীলা। তিনি বলেন, উইমেন ডিজিটাল টেকনোলজি কোম্পানি হওয়া সত্বেও প্রতিবছর এ ধরনের কম্পিটিশন করেন যাতে টেকনোলজিতে নারীদের পদার্পণ বাড়ানো যায়, এখনো ডিজিটাল টেকনোলজিতে নারীরা অনেক পিছিয়ে আছে, তাদের কিছুটা সাহস দিতে আমাদের এই আয়োজনl আমরা চেষ্টা করি সমগ্র বাংলাদেশ থেকে নারীদের ঢাকা এনে প্রপার মেন্টরিং এর মাধ্যমে একটি ডিজিটাল টেকনোলজি বেজ প্রডাক্ট ডেভলপ করতেl।
অনুষ্ঠানে পর্যায়ক্রমে বক্তব্য দেন দ্য ন্যাশনাল উইমেন হ্যাকাথন ২০১৭-এর বিজয়ী শামসুন নাহার লিপি।প্রোগ্রামটির বিচারক হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন সিটি ইউনিভার্সিটির সিএসই ডিপার্টমেন্টের হেড শেফায়েত হোসেন, বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ, ইউএনডিপি বাংলাদেশের ডেপুটি রেসিডেন্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ ভ্যান নগুয়েন, বিশ্বব্যাংকের ভুটান ও বাংলাদেশস্থ কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদেললাহি সেখ প্রমুখ।
বিশ্বব্যাংক ও ইউএনডিপি বাংলাদেশ এক্সেলেরেটর ল্যাব সহযোগিতায় উইমেন ইন ডিজিটাল অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ছিল আমন্ত্রিত অতিথিদের নিয়ে প্যানেল আলোচনা সভা। ‘ডিজিটাল স্কিলস ফর লাইফ’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন ইউএনডিপি বাংলাদেশ এক্সেলেরেটর ল্যাবের প্রধান এম এম জিমরান খান। এতে আলোচক হিসেবে ছিলেন বিশ্বব্যাংকের ডিজিটাল ডেভেলপমেন্ট স্পেশালিস্ট সুপর্না রায়, সিনিয়র সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট স্পেশালিস্ট সাবা মোয়েম, বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরাম (বিআইজেএফ)-এর প্রেসিডেন্ট নাজনীন নাহার, ব্যাবিলন রিসোর্সেস লিমিটেডের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার অ্যান্ড কো-ফাউন্ডার লিয়াকত হোসেন, সুমাইয়া টেকনোলজিস লিমিটেডের চেয়ারম্যান অ্যান্ড কো-ফাউন্ডার রিপা আর জাহান।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ‘ডিজিটাল: ইনোভেশন অ্যান্ড টেকনোলজি জেন্ডার ফর ইকুয়ালিটি’ শিরোনামের এই প্রতিযোগিতার শুরু হয়। বিজ্ঞ বিচারক প্যানেলের সদস্যরা প্রাথমিকভাবে ১৩২টি প্রজেক্ট থেকে ৫৮টি প্রজেক্টকে প্রতিযোগিতার জন্য নির্বাচন করেন। কয়েকটি পর্বে যাচাই-বাছাইয়ের পর সেরা আটটি প্রজেক্টকে চূড়ান্ত পর্বের জন্য নির্বাচন করা হয়।
প্রতিযোগিতার বিচারক প্যানেলের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন বুয়েটের প্রফেসর সিলিয়া শাহনাজ, সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের হেড অব রিসার্চ অ্যান্ড কমিউনিকেশন সৈয়দ মাহফিজ কামাল অনিক, আইসিটি ডিভিশনের বিগ-এর হেড অব অপারেশন অ্যান্ড কো-অর্ডিনেটর সিদ্ধার্থ গোস্বামী, ক্রিয়েটিভ কনসারভেশন অ্যালায়েন্সের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার অ্যান্ড কো-ফাউন্ডার শাহরিয়ার কেইসার রহমান ও ইউনাইটেড ন্যাশনস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম প্রজেক্ট অফিসার রেবেকা সুলতানা।
প্রতিযোগীদের মেন্টর হিসেবে ছিলেন টেক জায়ান্ট কোম্পানি অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসের সল্যুশনস আর্কিটেক্ট লিডার অ্যান্ড আইটি বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ মাহদী উজ জামান।
প্রতিযোগিতায় মেন্টরস হিসেবে ছিলেন ডিভাইন আইটি লিমিটেড প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইকবাল আহমেদ ফখরুল হাসান, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কন্টাক্ট সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং মহাসচিব তৌহিদ হোসেন, রেডলাইম সলিউশন ইউএক্স ম্যানেজার আরাফাত হোসেন, সিটি ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের প্রধান সাফায়েত হোসেন, অ্যাক্টিভেশন: উই অটোমেট সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের প্রধান রায়হান এস রাজন, কো-ফাউন্ডার স্ট্রেইট চিফ টেকনোলজি অফিসার জুবায়ের এল বিল্লাল খান এবং সর ভেঞ্চুরেস ও কন্সালটেন্সি ফাউন্ডার এন্ড সিইও সায়মা রাহমান।