রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বেসিক ও বিডিবিএল—এই ছয় ব্যাংককে দেশীয় সফটওয়্যার ব্যবহারের তাগিদ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
এই ছয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) সঙ্গে দেশীয় কোর ব্যাংকিং সফটওয়্যার ব্যবহার, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় রোধ শীর্ষক অনলাইন বৈঠকে এই তাগিদ দেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম।
গত বৃহস্পতিবার (১৩ আগস্ট) অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে বৈদেশিক মুদ্রা দেশের বাইরে চলে যাওয়ার পাশাপাশি দেশ কর্মসংস্থানের সুযোগ হারাচ্ছে বলে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়।
বৈঠকে জানানো হয়, দেশে সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা খাতে রফতানি আয় গত ২০১৯ সালে এক বিলিয়ন বা ১০০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে, যা টাকার হিসেবে প্রায় সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা। এমনকি সরকার আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে সফটওয়্যার রফতানি করে ৫০০ কোটি ডলার আয় করার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করলেও দেশের বেশিরভাগ ব্যাংক এখনো বিদেশি সফটওয়্যার ব্যবহার করছে।অথচ প্রতিবেশী ভারতের ব্যাংকগুলো শতভাগ দেশীয় কোর ব্যাংকিং সফটওয়্যার (সিবিএস) ব্যবহার করছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ বেশ পিছিয়ে আছে। দেশের ৬০টি ব্যাংকের মধ্যে বর্তমানে ২৮টি দেশীয় সিবিএস ব্যবহার করছে।
জানা গেছে, বিদেশি সফটওয়্যারের চেয়ে দেশি সফটওয়্যার ব্যবহার অধিক সাশ্রয়ী। দেশি সফটওয়্যারে লাইসেন্স ফি বাবদ খরচ হয় ১০ থেকে ১৫ কোটি টাকা, বিদেশি সফটওয়্যারে এই খরচ ৩০ থেকে ৪০ কোটি টাকা। বিদেশি সফটওয়্যারের বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণ (এএমসি) খরচ চার থেকে ছয় কোটি, আর দেশি সফটওয়্যারে তা তিন থেকে চার কোটি টাকা।
বিদেশি সফটওয়্যারের ক্ষেত্রে কাস্টমাইজেশনে প্রতিদিন বিদেশিরা ৬০ হাজার থেকে ৭৫ হাজার টাকা নিয়ে যায়, সেখানে দেশীয় সফটওয়্যারের ক্ষেত্রে এই খরচের প্রয়োজন হয় না। এছাড়া বিদেশি সফটওয়্যারে বাস্তবায়ন খরচ আরও ১৮ থেকে ২৫ কোটি টাকা, সেখানে দেশি সফটওয়্যারের ক্ষেত্রে এই খরচ মাত্র তিন থেকে পাঁচ কোটি টাকা।
দেশে মোট ব্যাংকের সংখ্যা ৬৩টি। এখানে কোর ব্যাংকিংয়ে স্থানীয় সফটওয়্যার ব্যবহার হয় ৪০ শতাংশ। আর বিদেশি সফটওয়্যার ব্যবহার হয় ৬০ শতাংশ। অথচ ভারতে মোট ব্যাংকের সংখ্যা ৫১টি। সেখানে কোর ব্যাংকিংয়ে স্থানীয় সফটওয়্যার ব্যবহার হয় ৯২ শতাংশ। আর বিদেশি সফটওয়্যার ব্যবহার হয় মাত্র ৮ শতাংশ।
প্রসঙ্গত, কোর ব্যাংকিং সফটওয়্যারের মাধ্যমে এক অ্যাকাউন্টের সেবা সবখানে পাওয়া যায়। কোর ব্যাংকিং সফটওয়্যারের মাধ্যমে দেশের যেকোনো স্থান থেকেই অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সব ধরনের লেনদেন করা যায়।