মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে আইসিটি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা ও স্কুলে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন সরকারের ‘অনন্য দুই উদ্ভাবনী উদ্যোগ’ বলে উল্লেখ করেছেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ছেলে ও আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের নির্দেশনায় এই দুই উদ্যোগ বাস্তবায়নের ফলে গ্রামের শিক্ষার্থীরাও এখন সহজেই আইসিটি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ফ্রিল্যান্সিং করছে। তরুণরা ‘টেকস্যাভি’ হয়েছে। এছাড়াও নিজেদের উদ্ভাবিত ‘ই-নথি’র কল্যাণে অতিমারি করোনাতে সবকিছু বন্ধ থাকলেও একমহুর্তের জন্য সরকারের কার্যক্রম থেমে থাকেনি। আইসিটি বিভাগের তরুণ ৫ প্রোগ্রামারের তৈরি ‘সুরক্ষা’ অ্যাপ করোনার টিকা ব্যবস্থাপনাং বিশ্বে স্বকীয় হয়ে উঠেছে। আরো আছে ক্যাশলেস কেনাকাটার ‘ডিজিটাল পশুর হাট’। পাশাপাশি ডিজিটাল সার্ভিস সেন্টার স্থাপনের মাধ্যমে গ্রাম-শহর; ধনী-দরিদ্র এবং নারী পুরুষের বৈষম্য ও দূরত্ব কমেছে। সময়, ভোগান্তি ও খরচ কমেছে।
এভাবেই গেলো ১৪ বছরে শ্রম থেকে দেশের অর্থনীতিকে প্রযুক্তি নির্ভর করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবার উদ্ভাবন, জ্ঞান ও গবেষণার সম্মিলনে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার রাজধানীর বাংলা একাডেমি’র আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘ইনোভেশন টক’ -এ এসব তথ্য তুলে ধরেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। বিষয়ভিত্তিক এই একক সাহিত্য আড্ডা সঞ্চালনা করেন বিশ্বনন্দিত বাংলাদেশী অণুজীববিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহা। আড্ডায় নিজের টুকরো অভিজ্ঞতা তুলে ধরার পাশাপাশি আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সঙ্গে নানা উদ্ভাবনী আলাপ নিয়ে মেতে ওঠেন তরুণ এই বিজ্ঞানী।
আলোচনায় আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘আমি প্রথমবারের মতো এই আয়োজনে এসেছি। এটি একটি চমৎকার আয়োজন। ডিজিটাল বাংলাদেশের একটি গল্প আমি শোনাতে চাই এই উদ্ভাবনী আলাপে। যখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশের ঘোষণা দিলেন যখন আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছিলাম। এরপর ওনার লক্ষ্য ছিল প্রযুক্তি নির্ভর কর্মসংস্থান তরুণদের জন্য তৈরি করা, লক্ষ্য ছিল দ্রুত গতির ইন্টারনেট সেবা সব নাগরিকের জন্য নিশ্চিত করা, সরকারি সব সেবা যাতে অনলাইনের পাওয়া যায় এবং সেবা মানুষের দোরগোড়ায় যেন পৌঁছে যায়।’
এসময় সেঁজুতি বলেন, ‘বিজ্ঞান সাহিত্য ছাড়া চলে না, সাহিত্য বিজ্ঞান ছাড়া চলে না। আর আমার জন্য বিজ্ঞানের সাহিত্য হচ্ছে ইনোভেশন। ইনোভেশন হচ্ছে – নতুন জিনিস যার দ্বারা মানুষ লাভবান হয়। আমি যখন কানাডাতে বসবাস করতাম তখন আমি ভাবতাম, আমি যা যা শিখেছি সেগুলো কিভাবে দেশের মানুষের কাছে নিয়ে যাবো? আমি কিভাবে নিশ্চিত হবো যে আমার কাজ দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ লাভবান হচ্ছে ,যাদের কাছে আমি বড় হয়েছি। আমি যেটা নিয়ে কাজ করছিলেন কানাডায় সেসময় হয়তো সেটি বাংলাদেশের তেমন কোনও কাজে আসতো না। তার পেছনে কারণ হচ্ছে- সব জায়গায় বসে উদ্ভাবন করা যায় না। তাই আমি যখন বাংলাদেশে ফিরে আসলাম তখন নতুন কিছু উদ্ভাবনের কাজ করার চিন্তা করলাম। সেটি ছিল ১০/৯০ গ্যাপ কমিয়ে নিয়ে আসা।
প্রসঙ্গটা লুফে নিয়ে জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার তেমনি একটি উদ্ভাবন যা নাগরিক ও নাগরিক সেবা প্রাপ্তির ব্যবধান কমিয়ে এনেছে।
উদাহরণ টেনে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ১৪ বছর আগে দেশে বিদ্যুতের অধীনে ছিলো মাত্র ১৪ শতাংশ মানুষ। ইন্টারনেট ব্যবহারকারি ছিলে মাত্র ৫০ লাখ। আইসিটি বলে কিছুই ছিলো না। কিন্তু এখন কম্পিউটার ও আইসিটিতে ব্যাপক উন্নতি ঘটেছে। শেরপুরের কাকরকান্দা গ্রাসে বসেই এইচএসসি’র ছাত্রী তৃষ্ণা আইটি আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে হ্যান্ডসাম আয় করছে। শতভাগ মানুষ বিদ্যুতের আওতায় এসেছে; ইন্টারনেটে সংযুক্ত।
ডিজিটাল বাংলাদেশ এর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের নতুন সাহিত্য রচনায় সরকারে পরিকল্পনা তুলে ধরে পলক বলেন, এবার স্মার্ট বাংলাদেশ লক্ষ্য বাস্তবায়নে আমরা ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের সঙ্গে যৌথ অংশীদারিত্বের মাধ্যমে ‘সেন্টার ফর ফোর্থ ইন্ড্রান্ট্রিয়াল রেভ্যুলিশন’ এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ৫৭টি বিশেষায়িত গবেষণা ল্যাব স্থাপন করার উদ্যোগ নিয়েছি। এরইমধ্যে এমআইটি’র সঙ্গে অংশীদারিত্বে বুয়েটে একটি ন্যানো টেক ল্যাব স্থাপন করেছি। ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের উন্নত দেশের কাতারে যেতে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রোবটিক্স, ক্লাউড কম্পিউটিং, এআই ও ভিএলসি ল্যাব স্থাপন করেছি। আমরা চাই উদ্ভাবনের মাধ্যমেই স্মার্ট হতে।
ঢাকা লিট ফেস্টের দশম এই আসরে আড্ডায় প্রতিমন্ত্রী পলক ও বিজ্ঞানী সেঁজুতি বিভিন্ন দেশ থেকে আগত উপস্থিত দর্শক ও শ্রোতাদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন।