শেরপুর জেলাকে স্মার্ট বাংলাদেশের অংশ হিসেবে গড়ে তুলতে প্রযুক্তিবান্ধব বিশ্ববিদ্যালয়, সীমান্ত রক্ষায় প্রযুক্তির উন্নয়নে আইটি পার্ক স্থাপন ও জেলায় কৃষি উন্নয়নে প্রযুক্তির ব্যবহারসহ ৮ দফা দাবি পেশ করেছে শেরপুর জেলা উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদ। মঙ্গলবাার (৩ জানুয়ারি ২০২৩) দুপুরে শেরপুর জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তারে মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক মহিউদ্দিন আহমেদ। এসময় শেরপুর মডেল কলেজের সিনিয়র অধ্যাপক মাসুদ করিম বাদল, শেরপুর জেলার রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মারুফ রহমান, মেহেদী হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলন।
স্মারকলিপি গ্রহণ করে স্মারকলিপিটি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেয়ার আশ্বাস দেন জেলা প্রশাসক। এসময় দ্রুতই শেরপুর জেলাকে স্মার্ট জেলা হিসেবে ঘোষণা দেয়ার দাবি করা হয়।
স্মারক লিপি প্রদান শেষে প্রধান সমন্বয়ক মহিউদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চান। কিন্তু একটি জেলাকে অন্ধকারে রেখে কখনো একটি দেশের সার্বিক উন্নয় গড়ে তোলা তো সম্ভবই না স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলাও সম্ভব হবে না। সরকার ২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা করে সারা দেশকে যেভাবে প্রযুক্তি বান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছেন সেটি থেকে একমাত্র বঞ্চিত জেলা শেরপুর। শেরপুর জেলায় যোগাযোগের জন্য এখনো কোনো রেলপথ নির্মাণ করা হয়নি, গড়ে তোলা হয়নি কোন প্রযুক্তিবান্ধব বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ। শিল্প উন্নয়ন ব্যবস্থাপনার জন্য নেই কোন প্রযুক্তি বান্ধব শিল্প জোন। স্থলবন্দর থাকলেও এখনো কোনো আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা ও উন্নয়ন হয়নি। পর্যটনে বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বে ও পর্যটন জেলা হিসেবে এখনো স্বীকৃতি প্রদান করা হয়নি। আমরা চাই সরকার শেরপুর জেলাকে স্মার্ট বাংলাদেশের অংশ হিসেবে গড়ে তুলুক। আমরা শেরপুরে জনগণ কখনো সরকারের কাছে খাদ্য বাসস্থানের জন্য আন্দোলন করি নাই। কৃষি খাতে এখনো ২৫ শতাংশ আমরা যোগান দিয়ে থাকি। শেরপুরে প্রায় ছয় শতাধিক অটো হাস্কি রাইস মিল থাকা ও কৃষিখাতে বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও এখানে কৃষি বিপ্লব গড়ে তোলা হয়নি। উন্নয়ন বলতে কেবলমাত্র প্রশাসনের কিছু উন্নয়ন সাধন করা হয়েছে। কিন্তু একটি জেলার এবং দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখার জন্য শেরপুর জেলাকে যেভাবে গড়ে তোলার প্রয়োজন ছিল সেটি করা হয়নি।
৮ দফা দাবি
১) ঢাকা থেকে শেরপুর যাতায়াতের জন্য ময়মনসিংহ হয়ে শেরপুরের নকলা উপজেলার মধ্য দিয়ে শেরপুর সদর পর্যন্ত রেল সড়ক নির্মাণ। যা পরবর্তীতে শ্রীবরদী বকশীগঞ্জ ও রাজিবপুর রৌমারী পর্যন্ত প্রশস্ত করা যেতে পারে
২) আধুনিক উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থার পাশাপাশি চিকিৎসার শাস্ত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার লক্ষ্যে একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের দাবি জানাচ্ছি
৩) শেরপুর যেহেতু কৃষি সমৃদ্ধ এলাকা তাই এখানে কৃষি, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থার সমন্বয়ে একটি আধুনিক উচ্চতর বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবি জানাচ্ছি
৪) শেরপুর শহরের নাগরিকদের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান করার লক্ষ্যে শেরপুর পৌরসভার পাশাপাশি নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নামে আলাদা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে এবং পর্যাপ্ত বরাদ্দ প্রদানের মাধ্যমে আধুনিক শহরে উন্নীতকরণ করার দাবি জানাচ্ছি
৫) ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণকে লক্ষ্য রেখে সরকার সারাদেশে ১০০ (একশ)টি আইটি পার্ক স্থাপন করছে। আমাদের দাবি শেরপুর জেলায় কৃষি উন্নয়নে প্রযুক্তির ব্যবহার ও সীমান্ত রক্ষায় প্রযুক্তির উন্নয়নে একটি আইটি পার্ক স্থাপনের
৬) ১৯৯৬ সালে নাকোগাঁও স্থলবন্দর চালু হলেও এখানে যাতায়াতের উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়নি। আমাদের দাবি নাকোগাঁও স্থল বন্দরকে আধুনিক উন্নত স্থলবন্দরে রূপান্তর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক
৭) শ্রীবরদী, নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী উপজেলাকে পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলা হোক।
(৮) শেরপুর জেলার দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ, সরকারি বেসরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি সহ যারা দুর্নীতিতে অভিযুক্ত এবং যাদের কারণে সে জেলার উন্নয়ন সম্ভব হয়নি তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।