মেট্রোরেল উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে একই সঙ্গে প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ চারটি মাইলফলক ছুঁয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মেট্রোরেল চালু হওয়াকে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় নতুন পালক বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী বললেন, বাংলাদেশ আরও চারটি মাইলফলক স্পর্শ করল।
তিনি বলেন, ‘১. মেট্রোরেল নিজেই একটি মাইলফলক।
‘২. এই প্রথম বাংলাদেশ বৈদ্যুতিক ট্রেনের যুগে প্রবেশ করল।
‘৩. মেট্রোরেল দূর নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে পরিচালিত হবে। রিমোট কন্ট্রোল দ্বারা ডিজিটাল পদ্ধতিতে এটা পরিচালিত করা হবে। তার ফলে আমরা যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছি, এটি তারই একটি অংশ হিসেবেই কাজ করবে। তার নুতুন মাত্রা সংযোজিত হলো।
‘৪. বাংলাদেশ দ্রুত গতির ট্রেনের যুদে পদার্পণ করল। এই মেট্রোরেলে সর্বোচ্চ গতি হবে (প্রতি ঘণ্টায়) ১১০ কিলোমিটার।’
বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর উত্তরার ১৫ নম্বর সেক্টরের ‘সি’ ব্লকের মাঠে মেট্রোরেল উদ্বোধনের পর সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে ছোটবোন শেখ রেহানাকে নিয়ে দেশের প্রথম মেট্রোরেল এমআরটি লাইন-৬-এর একাংশের উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুধী সমাবেশের মঞ্চে আসন গ্রহণ করেন। ১১টার পর উদ্বোধনী ফলকের প্রতিরূপ (রেপ্লিকা) জনসম্মুখে উন্মোচন করেন। প্রতিরূপ উন্মোচনের পর মোনাজাত করা হয়। সুধী সমাবেশের প্রথমে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করা হয়। স্বাগত বক্তব্য দেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী।
এসময় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের উপস্থিত ছিলেন। সুধী সমাবেশ শেষে ছোট বোনকে নিয়ে মেট্রোরেলে ভ্রমণ করবেন সরকারপ্রধান।
উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নে আরেকটি পালক মেট্রোরেল। আরেকটি নতুন অহংকারের পালক বাংলাদেশের মানুষের মাথার মুকুটে সংযোজন করলাম।
উদ্বোধনকালে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিনুল্লা নুরী, মেট্রোরেল কোম্পানির এমডি এম এন সিদ্দিকসহ সরকারের পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনের পর রাজধানীর উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে দুপুর ১টা ৪০ মিনিটের দিকে প্রধানমন্ত্রী সবুজ পতাকা নাড়িয়ে বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল চলাচলের আনুষ্ঠানিক যাত্রার সূচনা করেন। তার আগে প্রধানমন্ত্রী মেট্রোরেলের টিকিট (কার্ড) কেনেন।
প্রধানমন্ত্রীর ট্রেনের চালক ছিলেন মরিয়ম আফিজা, যিনি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেমিস্ট্রি অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতকোত্তর করে মেট্রোরেলের চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। দুপুর ১টা ৫৩ মিনিটে রাজধানীর উত্তরা থেকে ছেড়ে আসে প্রথম ট্রেনটি। এই ট্রেনে ১০ মিনিট ১০ সেকেন্ডে আগারগাঁওয়ে এসে পৌঁছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা।
এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিলেন তার ছোট বোন শেখ রেহানাসহ পরিবারের ১০ সদস্য। এছাড়াও সঙ্গী ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থী, মসজিদের ইমাম, পোশাক কর্মী, রিকশা চালক, সবজি বিক্রেতা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী আর সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা। অনলাইন ও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই মাইলফলক সফরে সঙ্গী হন কোটি মানুষ। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বিটিভি’র সরাসরি সম্প্রচারে ব্যবহার করে ড্রোন প্রযুক্তি।