তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আয়োজনে ৫ম বারের মতো আগামী ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০২২। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। এর মাধ্যমে মেড ইন বাংলাদেশ থেকে আইসিটি পণ্য রপ্তানিকারক দেশে হিসেবে বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে চায় সরকার। বুধবার রাতে রাজধানীর হোটেল শেরাটনে ৩০টিরও বেশি রাষ্ট্রদূতের সামনে তুলে ধরা হয় চার দিনের এই আয়োজনের বিস্তারিত।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবুল কালাম আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের সক্ষমতা বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০২২ হবে অনন্য একটি সুযোগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদের নেতৃত্বে বাংলাদেশের তরুণ্য ও নারী সমাজ ডিজিটাল শক্তিতে বলীয়ান হয়েছে। এখন তারা মুঠোফোনেই সব কাজ করতে পারেন। অবশ্য বৈশ্বিক বিভাজন সত্ত্বেও আমরা ডিজিটালি সংযুক্ত। আমরা এই শক্তিতেই বিশ্বকে জয় করতে চাই। তাই আশা করবো ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০২২ এ অংশ গ্রহণ করে স্মার্ট বাংলাদেশের যাত্রায় অংশীদার হবে অন্যান্য দেশগুলো। আমরা আশা করি, প্রযুক্তি খাতে আমাদের সক্ষমতা এবং ভবিষ্যত সুযোগ সম্পর্কে এই আয়োজন আমাদের ধারণা দেবে। আমাদের মানুষেরা প্রমাণ দিয়েছে যে, তারা কতটা দক্ষ। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা এবং আইসিটি উপদেষ্টার পরামর্শে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে পরিষ্কার লক্ষ্যমাত্রা ছিল আমাদের। আজ যে বাংলাদেশ আপনারা দেখছেন, সেটা আমাদের প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বের ফলাফল। আপনারা যদি কোন স্বপ্ন দেখেন, আমরা সেটি বাস্তবায়ন করতে পারি; শুধু কাগজে কলমে না বরং বাস্তবেও।
আইসিটি খাতে বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোকে সাথে নিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে চায় উল্লেখ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের যে পররাষ্ট্র নীতি দিয়ে গেছেন “সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারোও সাথে বৈরিতা নয়” আমরা সেটি অনুসরণ করে যাচ্ছি। সেই যাত্রায় আমরা আপনাদের সকলকে আমাদের পাশে চাই। সবশেষে নিজ বক্তব্যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী।
ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০২২ আয়োজনের মাধ্যমে ২০২৫ সালের মধ্যে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা আইসিটি খাত থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পরিকল্পনা তুলে ধরে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, এর মাধ্যমে ৩০ লাখ নতুন কর্ম সংস্থান গড়ে তোলা হবে। এবারের আয়োজনে স্কুল পর্যায়ের উদ্ভাবকেরা তাদের উদ্ভাবনী সল্যুশন প্রদর্শন করবে বিশ্ববাসীর সামনে। থাকবে রোবটিক জোন, ই-গভ জোন, বিপিও ও ই-কমার্স জোন সহ আরো অনেক আয়োজন। বৈশ্বিক অংশীদারদের অংশীদারিত্বের মাধ্যমে স্বনির্ভর বাংলাদেশ গঠনে স্মার্ট ট্রেড, ইনোভেশন, স্মার্ট অর্থনীতি গড়ে তুলে স্মার্ট সোসাইটির অংশ হবে বাংলাদেশ। দুই দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে ম্যাচ মেকিং, কুটনীতিক ও মন্ত্রী সভা বৈঠক ছাড়াও নানা উদ্ভাবনী আয়োজন থাকছে। মন্ত্রী সভা বৈঠকে ক্রস বর্ডার ব্যবসায়ের চ্যালেঞ্জ ও বাধার সমাধান খোঁজা হবে আলোচনার মাধ্যমে।
প্রায় দুই হাজার সরকারি সেবা ডিজিটাল মাধ্যমে নিয়ে আসার পাশাপাশি দেশে বিক্রিত মোবাইলের ৮০ ভাগ এখন দেশেই তৈরি হয় উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০১১ সাল থেকে এই আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠান আমরা আয়োজন করে যাচ্ছি। আমরা এই অনুষ্ঠানে বৈশ্বিক নেতৃবৃন্দদের, গবেষকদের এবং বিনিয়োগকারীদের অংশ নিতে আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা চাই তারা আমাদের বাজার পরিদর্শন করুন, আমাদের সক্ষমতা দেখুক। আমরা ডিজিটাল খাতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে কাজ করতে চাই। পাশাপাশি বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে অংশীদার হয়ে সমন্বয় করে কাজ করতে চাই।
এসময় বিভিন্ন দেশ থেকে অর্থমন্ত্রী কিংবা আইসিটি মন্ত্রীদের ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড এ অংশ নিতে স্ব স্ব রাষ্ট্রদূতের সহযোগিতা কামনা করেন জুনাইদ আহমেদ পলক।
বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক রণজিৎ সরকারের সভাপতিত্বে অংশীজন সভায় সবাইকে স্বাগত জানান বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের পরিচালক এনামুল কবির। এরপর অনুষ্ঠানের নানা দিক তুলে ধরেন স্টার্টআপ বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সামি আহমেদ।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাক্কো অর্থ সম্পাদক আমিনুল হক, বিসিএস সভাপতি সুব্রত সরকার, ই-ক্যাব সভাপতি শমী কায়সার ও বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ।
অন্যান্যের মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মাসুদ বিন মোমেন ও আইসিটি বিভাগের জ্যৈষ্ঠ সচিব এন এম জিয়াউল আলম ছড়াও রাষ্ট্রাদূদের মধ্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ান রাষ্ট্রদূত জেরোমি ব্রুআ, তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মোস্তাফা ওসমান তুরান, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত অ্যালেক্স বার্ক ফন লিন্ডে, কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জ্যাং কিউন, সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলান ইউরোপিয় ইউনিয়নের দূত চার্লস হুইটলে বক্তব্য রাখেন।
এবারের ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড এর প্রতিপাদ্য “Be Innovative & Smart”.