৩০ সেপ্টেম্বর ছিল জাতীয় কন্যাশিশু দিবস। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য-‘সময়ের অঙ্গীকার, কন্যাশিশুর অধিকার’। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক (বিডিওএসএন), বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতি (এসপিএসবি), বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াড (বিডিআরও) এবং মাকসুদুল আলম বিজ্ঞানাগার (ম্যাসল্যাব) যৌথভাবে বিভিন্ন আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছিল। এ উপলক্ষে দিনব্যাপী আইসিটি ও বিজ্ঞান কুইজ, স্ক্রাচ প্রোগ্রামিং এবং রোবটিক্স কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
সকাল থেকে বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াডের আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবটিক্স এন্ড মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের রোবটিক্স ল্যাবে শুরু হয় দুইদিনব্যাপী স্কুল অব রোবটিকস ক্যাম্প। ১০ থেকে ১৮ বছর বয়সী মেয়ে শিশু, যারা আগে কখনও আরডুইনো বা রোবটিকস নিয়ে কাজ করেনি, তাদেরকে নিয়েই মুলত এই আয়োজন। এই ক্যাম্পে অংশ নেয়া মেয়ে শিশুদেরকে হাতেকলমে সকার রোবট বানানো শেখানো হয়।
এর পাশাপাশি রোবট সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা, ইলেক্ট্রনিক্সে হাতেখড়ি, আরডুইনো পরিচিতি, এলইডি ব্লিঙ্ক (ডিজিটাল আউটপুট), এলইডি ফেডিং (এনালগ আউটপুট), সেন্সর পরিচিতি, পুশবাটন (ডিজিটাল ইনপুট), পটেনশিওমিটার (এনালগ ইনপুট), সোনার সেন্সর, আইআর সেন্সর, সারভো মোটর, ডিসি মোটর, L298 মোটর ড্রাইভার, মোটর দিয়ে চলমান রোবট তৈরি, ব্লুটুথ নিয়ন্ত্রণ এবং বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াড সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেয়া হয় । অংশগ্রহণকারী মেয়ে শিশুদেরকে সার্টিফিকেট বিতরনের মধ্য দিয়ে আজ ১ অক্টোবর, শনিবার বিকালে এই ক্যাম্প শেষ হবে।
এছাড়া ৭ থেকে ১৬ বছর বয়সী মেয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে গতকাল বিকেল ৩ টা থেকে একঘন্টাব্যাপী অনলাইনে একটি স্ক্র্যাচ প্রোগ্রামিং কর্মশালার আয়োজন করে বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক (বিডিওএসএন)। স্ক্র্যাচ (Scratch) হল একটি ব্লক ভিত্তিক প্রোগ্রামিং ভাষা যার মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে যে কোন বয়সের মানুষ খুব সহজেই প্রোগ্রামিং এর লজিক শিখে গেইম, এনিমেশন ভিডিও ও নানা রকম প্রোজেক্ট তৈরি করতে পারে। একটি কম্পিউটার বা ট্যাব ও ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই স্ক্র্যাচ প্রোগ্রামিং শেখা শুরু করা যায়। সারা দেশ থেকে মেয়ে শিক্ষার্থীরা অনলাইনে এই কর্মশালায় অংশ নেয়।
এর বাইরে বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতি (এসপিএসবি) এবং মাকসুদুল আলম বিজ্ঞানাগার (ম্যাসল্যাব) যৌথভাবে বিজ্ঞান ও আইসিটি কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। ৬ষ্ঠ থেকে ১০ শ্রেণির মেয়ে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান, আইসিটি-তে আগ্রহী করে তুলতেই অনলাইনে এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। গতকাল সন্ধ্যায় শুরু হওয়া ৩০ মিনিটের এই কুইজে হাই-স্কুল পড়ুয়া মেয়ে শিক্ষার্থীরা অনলাইনে নিজ নিজ বাসা থেকেই অংশগ্রহণ করে । এ প্রতিযোগিতায় মোট ৩০ টি বিজ্ঞান ও আইসিটির উপর প্রশ্ন করা হয়, যেখানে সকল প্রশ্নের মান সমান। সকল প্রশ্নের উত্তরের জন্য ৩টি বা ৫টি বিকল্প থেকে একটি সঠিক উত্তর বাছাই করা সুযোগ রাখা হয়। এ প্রতিযোগিতা থেকে মোট ৩ জন বিজয়ীকে পুরস্কৃত করা হয়। ১ম পুরষ্কার হিসেবে তিন হাজার টাকা, ২য় পুরস্কার হিসেবে দুই হাজার টাকা এবং ৩য় পুরষ্কার হিসেবে এক হাজার টাকা বা সমমূল্য মানের রকমারি কুপন প্রদান করা হয়।
উল্লেখ্য, ২০০৩ সালে কন্যাশিশুদের সুরক্ষা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় সরকারীভাবে ৩০ সেপ্টেম্বরকে জাতীয় কন্যাশিশু দিবস ঘোষণা করা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দেশের মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ শিশুর উন্নয়ন, সুরক্ষা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে বর্তমান সরকার। এই শিশুদের অন্তত ১৫ শতাংশ কন্যাশিশু। করোনাকালে কন্যাশিশুর ওপর বঞ্চনা বেড়ে যাওয়ায় দিবসটি বিশেষ গুরুত্ব সহকারে পালনের উদ্যোগ নেয়া হয়।