দাবিতে অনড় কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার মানোন্নয়ন ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজে (টিএসসি) কর্মরত শিক্ষকরা। পদোন্নতি, টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের দাবিতে বার বার কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে আবেদন জানানোরপরও দাবিসমূহ বাস্তবায়নের কোনরূপ দৃশ্যমান পদক্ষেপ না নিয়ে ৩৮ তম বিসিএস থেকে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ এবং ৪০ তম বিসিএস থেকে নিয়োগের চেষ্টাকে সরকারের রূপকল্পের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
কর্মরত শিক্ষকগণের পদোন্নতি না দিয়ে ৩৮ তম বিসিএস থেকে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ এবং ৪০ তম বিসিএস থেকে চলমান নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ শিক্ষক সমিতির নেতারা।
প্রতিবাদ সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন, ৬৪টি টিএসসিতে ২০০৪ সালের পর থেকে কোন কারিগরি শিক্ষক নিয়োগ প্রদান না করায় সরকারের লক্ষ্য অর্জনের জন্য টিএসসিতে কর্মরত কারিগরি শিক্ষকগণ ৩-৪ গুন দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। নিয়মিত কোর্স ১ম ও ২য় শিফটের নবম,দশম,একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির সাথে অতিরিক্ত কোর্স হিসেবে ২০১৭ সাল হতে ২০২০ সাল পর্যন্ত বিনা পারিশ্রমিকে ৪বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স সফলতার সাথে পরিচালনা করে বর্তমানে নিয়মিত কোর্সের সাথে ৬ষ্ঠ,৭ম,৮ম,এবং বিএমটি একাদশ শ্রেণি অতিরিক্ত কোর্স হিসেবে পরিচালনা করছেন।
কারিগরি বান্ধব সরকার ২০২১ সালে ৬৪টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের অনুকুলে ২৬৯৫ টি পদ এবং ১০০টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের জন্য ৬৪০০টি নতুন পদ রাজস্ব খাতে সৃজন করলেও অত্যন্ত দুঃখের বিষয় দীর্ঘ ১৮ বছর রাজস্ব খাতের চাকরি করে নিয়োগ বিধি ২০২০ এবং সরকারি চাকরি আইন এর বিধি ৮(১) পদোন্নতির সকল শর্ত পূর্ণ থাকার পরেও দেশ-বিদেশে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত এই দক্ষ শিক্ষকগণকে পদোন্নতি প্রদান করা হচ্ছে না। টিএসসিতে কর্মরত শিক্ষকগণ দীর্ঘ দিন (প্রকল্পের চাকরি সহ ২২-২৩ বছর) চাকরি জীবন অতিবাহিত করায় তাদের মূলবেতন পদোন্নতির পর প্রাপ্য বেতন অপেক্ষা অধিক। তাই ঐ সকল শিক্ষকগণকে পদোন্নতি প্রদান করা হলে সরকারের আর্থিক ব্যয় বৃদ্ধি পাবে না। এতে টিএসসিতে কর্মরত শিক্ষকগণের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় তাদের কর্মস্পৃহা বৃদ্ধি পাবে।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, কর্মীদের কর্মস্পৃহা বাড়াতে সরকার কর্মচারীদের বিভিন্ন প্রণোদনা প্রদান করে থাকেন, যেমন- সিলেকশন গ্রেড, টাইমস্কেল, ওভারটাইম, লভ্যাংশ, বোনাস ইত্যাদি। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, টিএসসিতে কর্মরত শিক্ষকগণ ১৮ বছর রাজস্ব খাতের একই পদে কর্মরত থাকার পরও কোন সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল প্রদান করা হয় নাই। এতে করে দেশের কারিগরি শিক্ষা প্রদানকারী শিক্ষকগণ হতাশার মধ্যে রয়েছেন এবং আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।
প্রতিবাদ সভায় নেতৃবৃন্দ দাবি করেন, পদোন্নতির আগ পর্যন্ত সকল প্রকার নিয়োগ বন্ধ রাখতে হবে। ৪০ তম বিসিএস থেকে নিয়োগের আগে ১৮ থেকে ২৩ বছরের অভিজ্ঞ কর্মরত শিক্ষকদের পদোন্নতি, টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড প্রদানের জোর দাবি জানান টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ।
ঢাকা বিভাগীয় কমিটির আহবায়ক মোঃ বোরহান উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন সমিতির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভাপতি সিদ্দিক আহাম্মদ, ঢাকা বিভাগীয় কমিটির আহবায়ক মো: বোরহান উদ্দিন এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দ । উক্ত সমাবেশে অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা বিভাগীয় কমিটির সদস্য হাসিনা ইয়াসমিন, মো:মানোয়ার হোসেন, মো: জহির আলম, নুরুল মোমেন সুমন, মো: শাহ আলম, মো: শিহাব উদ্দিন, মো: বশির আল হেলাল, মো: এনামুল হাসান কাজল, মো:মোনায়েম, মো: কামাল হোসেন প্রমুখ।