দশ দিনের যুক্তরাষ্ট্র সফরের সপ্তম দিনে ক্যালিফোর্নিয়া (বার্কলে) বিশ্ববিদ্যালয় এবং ম্যাসাচুয়েটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) পরিদর্শন করেছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। পাশাপাশি বহুজাতিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট পরিদর্শনে এই টেক জায়ান্টের সম্ভাব্য বিস্ময়কর উদ্ভাবনার সঙ্গেও পরিচিত হয়েছেন তিনি।
বৈঠক করেছেন মাইক্রোসফটের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে। মাইক্রোসফটের এআই সার্ভিসের সিনিয়র ডিরেক্টর সালমান কাজী, বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার ইমতিয়াজ ফারুক এবং এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের সিনিয়র লিড সহ জ্যেষ্ঠ নির্বাহীদের সঙ্গে দেখা করেছেন পলক।
এছাড়াও ইউসি বার্ক লে স্টার্টআপ অ্যাক্সিলেটর প্রোগ্রামস এবং সিলিকনভ্যালির ইনোভেশন ইকোসিস্টেম ঘুরে দেখেছেন তিনি। সেখানে বেশ কয়েকটি ইনোভেশন এক্সিলেটর এবং ইনকিউবেটর টিমের সঙ্গে আলাপ করেন প্রতিমন্ত্রী। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন এটুআই নীতি উপদেষ্টা আনীর চৌধুরী এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সির মহাপরিচালক মোঃ খাইরুল আমিন।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের লরেন্স বার্ক লে সুপার কম্পিউটিং ল্যাব ও স্টার্টআপ এক্সেলেরেটর প্রোগ্রাম কার্যক্রম পরিদর্শন করেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী পলক।
পরিদর্শন শেষে তিনি হ্যাস স্কুল অব বিজনেসের সনামধন্য টিমের সদস্য, ইনোভেটর এবং ইনকিউভেটরদের সাথে মতবিনিময় করেন। এ সময় তারা সরকারি সংস্থা, কর্পোরেশন, বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের (এনজিও) যৌথ অংশীদারিত্বের মাধ্যমে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ, মেশিন লার্নিং এর মাধ্যমে আর্থিক লেনদেনে জালিয়াতি সনাক্তকরণ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
মতবিনিময় সভায় হ্যাস স্কুল অফ বিজনেসের নির্বাহী পরিচালক ক্রিস বুশ, ড. নোজওয়ার্দি, মায়ো, আবদুল্লাহ মঈন, এপসিলন, মুনশট বাংলাদেশ, এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর স্কট শেনকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে ম্যাসাচুয়েটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি পরিদর্শনে গিয়ে সেখানে ন্যানোটেকনোলজির নানা উদ্যোগ অবলোকন করেন পলন। সেখানে মেটাভার্স রেনেসাঁর চেয়েও ব্যপক সৌর কোষের মতো কাজ করতে সক্ষম এক টুকরো কাপড় প্রতিমন্ত্রীকে দেখান প্রফেসর ভ্লাদিমির বুলোভিচ। এছাড়াও প্রফেসর টমাস প্যালাসিওস তার ভবিষ্যত ইলেকট্রনিক্স উপস্থাপনার সময় একটি গ্যালিয়াম নাইট্রাইড (GaN) দেখান, যেখানে চিপস পূর্ণ ওয়েফার যা প্রচলিত Si-ভিত্তিক চিপগুলির তুলনায় বৈদ্যুতিক যানকে ১০০ গুণ দ্রুত চার্জ করতে পারে।
এছাড়াও তিনি একটি ছোট পানি বোতলও দেখিয়েছেন তিনি; যেটির চারপাশে ভাসমান দ্বি-মাত্রিক উপাদান দিয়ে তৈরি ছোট কৃত্রিম কোষ রয়েছে। এই জলের দ্রবণটি মানুষের স্বাস্থ্যের নিরীক্ষণের জন্য সম্ভাব্যভাবে মানবদেহে ইনজেকশন দেওয়া যেতে পারে। তবে মানবদেহে এটি ব্যবহার করার আগে আরও গবেষণা করা দরকার বলে জানান তিনি। তিনি এসময় একটি স্মার্ট ফ্যাব্রিকও দেখিয়েছিলেন যেটিতে চিপগুলি এম্বেড করা আছে এবং মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম ব্যবহার করে চিপগুলি ব্যবহৃত কাপড় পরিহিত ব্যক্তির সঠিক ভঙ্গি বলতে পারে৷
এসময় অপর অধ্যাপক ভ্লাদিমির বুলোভিচ জানান, এমআইটির প্রাক্তন ছাত্ররা বিশ্বব্যাপী ২৫ হাজার ৮০০টি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছে এবং প্রতিষ্ঠানগুলোতে ৩৩ লাখ লোক নিয়োজিত রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে প্রতি বছর প্রায় ২ ট্রিলিয়ন ডলার আয় হয় যা বিশ্বের দশম বৃহত্তম অর্থনীতির মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) এর চেয়েও বেশি। আর এসব উদ্যোগের কারণেই এমআইটি এখন বিশ্বে বিশ্ববিদ্যালয় র্যাঙ্কিংয়ে প্রথম স্থানে রয়েছে।
এই পরিসংখ্যানে উদ্বুদ্ধ হয়ে বুয়েটেও এই উদ্যোক্তা সংস্কৃতি গড়ে তুলতে আগ্রহ প্রকাশ করেন বাংলাদেশে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
এসময় সম্প্রতি এমআইটি থেকে পিএইচডি অর্জনকারীদের মধ্যে প্রথম হওয়া বুয়েটের শিক্ষক ড. নাদিম চৌধুরীর উদ্ভাবিত প্রযুক্তি সম্পর্কেও অবহিত হন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী। এসময় ড. নাদিম জানান, এই প্রযুক্তিটি প্রচুর পরিমাণে শক্তি সঞ্চয় করতে হয়। এটি ডেটা সেন্টার, বৈদ্যুতিক যান এবং ৬জি ওয়্যারলেস যোগাযোগে ব্যবহার করা যেতে পারে বলে জানান ড. নাদিম।