বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের নিরাপদ ভার্চুয়াল ইকোসিস্টেম তৈরিতে তরুণদের নলেজ শেয়ারিং প্লাটফর্ম ইয়ুথ পলিসি ফোরামের (ওয়াইপিএফ) সঙ্গে কাজ করেছে শর্ট ভিডিও-শেয়ারিং প্লাটফর্ম টিকটক। এর অংশ হিসেবে টিকটকের পক্ষে একটি সিরিজ সংলাপ, ক্যাম্পেইন এবং কর্মশালা করছে ওয়াইপিএফ। এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের সামাজিক মাধ্যমের দায়িত্বশীল ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
‘ডিজিটাল স্পেসের দিকে এগোনো’ শিরোনামে সিরিজের প্রথম সংলাপ সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের পরিচালক ও বিজ্ঞানী ডা. সেঁজুতি সাহা। প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ; ব্র্যাক ইয়ুথ প্ল্যাটফর্ম কারিকুলাম এবং ম্যাটেরিয়াল ডেভলপমেন্ট বিশেষজ্ঞ সাকিব বিন রশিদ এবং সাপোর্টিং পিপল অ্যান্ড রিবিল্ডিং কমিউনিটি (SPaRc) এর প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক মুক্তাশ্রী চাকমা সাথী।
আলোচকদের সবাই ডিজিটাল যুগে সবার কল্যাণকে সর্বাধিক করার উপায় নিয়ে আলোচনা করেছেন।
সংলাপে ডিজিটাল সুস্থতা বিষয়ে ডা. সেঁজুতি সাহা একটি সহজবোধ্য তুলনা উপস্থাপন করেন। আমরা কীভাবে বাচ্চাদের স্কুলে সব ধরণের সামাজিক শিষ্টাচার শেখানো হয়, সেখানে টেবিলের আচার-আচরণ থেকে শুরু করে সাধারণ আচার-আচরণও শেখানো হয়, যা কিন্তু অনলাইনে প্রচলিত নেই। ডিজিটাল শিষ্টাচারের জন্য কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই বাচ্চাদের। এই ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল যুগে এটি একটি বড় সমস্যা হতে পারে।
সেঁজুতি বলেন, মানুষকে এটা বুঝতে হবে যে, আপনি কোথায় আছেন সেটা স্ক্রিনে (অনলাইনে) নাকি কোনো রুমে কারো পাশে বসে, সেটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়, ‘হয়রানি মানে হয়রানিই, নিরাপত্তা মানে নিরাপত্তাই, গোপনীয়তা মানে গোপনীয়তাই।
সাকিব বিন রশিদ মনে করেন, পর্যাপ্ত নিয়ন্ত্রণ সংস্থার অভাব ইন্টারনেট স্পেসে নিরাপত্তা ও ডিজিটাল সুস্থতার জন্য হুমকি। আমাদের বাস্তব জীবনে দেখি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী কোনো অন্যায় রুখতে হাজির হন, অথচ এটি ইন্টারনেটে দেখা যায় না।
যেকোনো সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীর ‘ভিজুয়াল ডায়েরি’-তে অন্য কারো কতটা অনিয়ন্ত্রিত অ্যাক্সেস রয়েছে তা ব্যবহারকারীর সুস্থতা ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি। এটা কনটেন্ট মডারেশনের মাধ্যমে একটি সমাধান হতে পারে বলে মনে করেন সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ।
তিনি বলেন, আমরা যখন কনটেন্ট মডারেশন বা নিয়ন্ত্রণ করব তখন অবশ্যই গণতান্ত্রিকভাবে করতে হবে এবং তার একটি বহুত্ববাদী মূল্য থাকতে হবে। কনটেন্ট মডারেশনের সময় অবশ্যই সম্মান জানানো উচিত আমাদের বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং জাতিগত পটভূমি থেকে আসা লোকদের প্রতি। সত্যই সর্বোত্তম সমাধান, এ ধারণাটিও সত্য নয়। আমাদের ফৌজদারি বিচার প্রতিষ্ঠানগুলো এখনও ডিজিটাল বিশ্বের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারেনি। ডিজিটাল অপরাধ খুব সহজেই নথিভুক্ত করা যায়, কিন্তু মানুষ জানে না কার কাছে এটি রিপোর্ট করতে হবে এবং কীভাবে এর বিচার পাওয়া যাবে।
মুক্তাশ্রী চাকমা সাথী উল্লেখ করেন, সংখ্যালঘুদের জন্য কনটেন্ট মডারেশন করার ক্ষেত্রে প্রধান বাধা ভাষা। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভাষায় অনিরাপদ কনটেন্ট শনাক্ত করতে প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর অ্যালগরিদমের দক্ষতা খুব কম। বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ ধরনের কনটেন্ট শনাক্ত করতে ব্যর্থতার দায় নিতে হবে এবং এর জন্য আরও ভালো সমাধান নিয়ে আসতে হবে।
সংলাপে অংশগ্রহণকারীরা ডিজিটাল নিরাপত্তার জন্য শিক্ষার উপর গুরুত্বারোপ করেন। একই সঙ্গে তারা সরকারকে ডিজিটাল আইন উন্নত করতে এবং এ সম্পর্কে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান। এর পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং ওয়াইপিএফের মতো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। প্যানেলিস্টরা উল্লেখ করেন যে, মানুষকে ইন্টারনেট থেকে দূরে রাখা কোনো কার্যকর সমাধান নয়। আমাদের ডিজিটাল স্পেস ব্যবহার করতে হবে এবং দায়িত্বের সাথে এটি ব্যবহার করা শিখতে হবে।