ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশের নাগরিক সমাজ। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে আইনটি নিয়ে আলোচনা করে এ দাবি জানিয়েছে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তবে আইনমন্ত্রী বলেছেন, ৩০ মার্চ আবারও বৈঠক করে তাদের জবাব দেবেন। সেদিন এর সমাপ্তি ঘটবে বলে তিনি মনে করেন। একইসঙ্গে মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় বৈঠক চলাকালেই ওয়েবে প্রকাশ করা হয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং ডিজিটাল মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধ শনাক্তকরণ, প্রতিরোধ, দমন, বিচার ও আনুষঙ্গিক বিষয়াদি সম্পর্কে বিধান প্রণয়নকল্পে প্রণীত আইনটি।
আজ বেলা সোয়া দুইটা পর্যন্ত সচিবালয়ে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন নাগরিক সমাজের পাঁচজন প্রতিনিধি- ইফতেখারুজ্জামান, ড. সি আর আবরার, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, রেজাউর রহমান লেনিন, সাইমুম রেজা তালুকদার ও শারমিন খান। বৈঠকে প্রস্তাবিত উপাত্ত সুরক্ষা আইন নিয়ে আলোচনার কথা থাকলেও সময়ের অভাবে তা হয়নি। এ জন্য এটি আরও পর্যালোচনা করে আগামী ৬ এপ্রিল তা নিয়ে আবারও বৈঠক হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠকে সরকারের পক্ষে আইনমন্ত্রী ছাড়াও তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, আইসিটি বিভাগের সচিব সামসুল আরেফিন, ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সির মহাপরিচালক আবু সাঈদ মো: কামরুজ্জামান, এটুআই কর্মসূচির নীতি উপদেষ্টা আনির চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রীর উপস্থিতিতে দুর্নীতিবিরোধী সংগঠন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, কথা ছিল আজ দুটি আইন নিয়ে কথা বলা হবে। একটা ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট, যেটা অলরেডি বলবত আছে। সেটা নিয়ে যে উদ্বেগের বিষয়, সেগুলো নিয়ে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সম্পর্কে গণমাধ্যমসহ দেশের সব নাগরিকের একটা বড় ধরনের উদ্বেগ আছে। মন্ত্রীও তার আলোচনায় বলেছেন এটার অপব্যবহার হচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রে, সেটা সরকার অবহিত আছেন।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, অত্যন্ত যৌক্তিকভাবে অনেকগুলো যুক্তি উপস্থাপন করে আমরা বলেছি, আমরা মনে করি এ আইন বাতিল করা দরকার, তাছাড়া কোনো বিকল্প নেই। মৌলিক যে বিচ্যুতিগুলো আছে এবং উদ্বেগের জায়গাগুলো আছে, পাশাপাশি অপব্যবহারের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে আইনটিতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে।
সেটার প্রেক্ষিতে আমরা মনে করি যদি আইনটি ঢেলে সাজানোও হয়, তাহলেও হয়তো সেটা গ্রহণযোগ্য হবে না সবার কাছে। জনকল্যাণ মুখি হবে না বলে আমাদের উদ্বেগ আছে। সে কারণে আমরা মনে করি আইনটি বাতিল করা দরকার। তার প্রেক্ষিতেই আমরা আলোচনাটা করেছি বলে জনান ইফতেখারুজ্জামান।
তিনি বলেন, মন্ত্রী এটি বিবেচনায় নেবেন তার সঙ্গে যারা ছিলেন তারা আমাদের বলেছেন। কী অবস্থান হবে সেটি আমাদের জানার বিষয় মন্ত্রীর কাছ থেকে, সরকারের কাছ থেকে। দ্বিতীয় যে বিষয়টি ছিল সেটি হলো, খসড়া যে ডেটা প্রোটেকশন অ্যাক্ট সেটি নিয়ে আলোচনা করা। কিন্তু সময় স্বল্পতার কারণে সেটি নিয়ে আলোচনা হয়নি। এটির নতুন আরেকটি খসড়া হয়েছে সেটি আজও ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। আমাদের কাছে এটির একটি কপি হস্তান্তর করা হয়েছে।
অপরদিকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনের জন্য চেষ্টা চলছে। এই আইনের প্রয়োজনীয়তা আছে। তবে ত্রুটিগুলো দূর করার চেষ্টা চলছে। ৩০ মার্চ পরবর্তী মিটিং করে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। ডাটা প্রটেকশন অ্যাক্ট বা তথ্য সুরক্ষা আইন নিয়ে এরই মধ্যে বেশ কিছু মন্তব্য ও পরামর্শ এসেছে। আগামী ৬ এপ্রিল আবার মিটিং করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, আজ দুটি আইন নিয়ে আলাপ করার কথা ছিল। একটা হচ্ছে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট, আরেকটা হচ্ছে ডেটা প্রটেকশন অ্যাক্ট। যেহেতু ডাটা প্রটেকশন অ্যাক্টের একটা নতুন ড্রাফট হয়েছে, আজও ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে তারা সেটা দেখে আসেননি। সে কারণে মিউচুয়াল আলোচনার মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত পৌঁছেছি ডাটা প্রোটেকশন অ্যাক্ট নিয়ে আগামী ৬ এপ্রিল বসবো। সেখানে সেটা নিয়ে আলোচনা হবে। আমি যতটুকু জানতে পেরেছি আগের মিটিংয়ে যেসব সাজেশন দেওয়া হয়েছিল তার অনেকগুলোই সেখানে কনসিডারেশন করা হয়েছে।
বাতিলের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেখেন আলোচনা হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি সব পক্ষে কথা শোনার। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সাইবার ক্রাইমের বিরুদ্ধে লড়াই করতে করা হয়েছে, সেইখানে আমরা থাকতে চাই। এ আইনের প্রয়োজনীয়তার কথা সবাই বলেছেন। এটি যদি ভালো করা যায়, যে সমালোচনা হচ্ছে, তা যদি দূর করা যায়, সেটা চেষ্টা করছি।