ইতিহাসবিদ অ্যাডাম টুজ এর নতুন শব্দবন্ধ ‘পলিক্রাইসিস’ নিয়ে ২০২৩ সালে পা রাখলো বিশ্ব। এই বছরে বিশ্বব্যাপী আইটি বন্ধ করে দিতে পারে বিদেশী সরকারের হ্যাকাররা।
এছাড়াও ২০২৩ সালে পৃথিবীতে গ্রহাণু হামলার সম্ভাবনা রয়েছে। যেখানে আবার অনেকের ধারণা যে এলিয়েন পৃথিবীতে আসবে।
২০২৩ সালে বিশ্ব নিরাপত্তা ইস্যুতে এমনটাই জানিয়েছেন আমস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সামষ্টিক অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক রোয়েল বিটসমা।
বার্তাসংস্থা এএফপিকে তিনি বলেছেন, প্রায় অর্ধেক নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করেন, একটি দুর্বৃত্ত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রোগ্রাম যা বন্ধ করা যাবে না তা তাদের দেশে উল্লেখযোগ্য বিপর্যয় ঘটাবে যদিও, উত্সাহজনকভাবে, এই অনুপাতটি গত বছর থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। এখন এটা ১৫ শতাংশ পয়েন্ট নীচে। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাপী আইটি বন্ধ করে দিতে পারে বিদেশী সরকারের হ্যাকাররা।
মন ভাবনার পেছনে ২০১৫ সালের অভিজ্ঞতাকে সামনে এনেছেন বিশ্লেষকরা। ওইবছর রাশিয়ার হ্যাকারদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনের বিদ্যুৎ গ্রিড ব্যবস্থায় সাইবার হামলার অভিযোগ উঠে। এর প্রায় দুই বছর পর ইউক্রেনের একটি অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যারের মাধ্যমে কুখ্যাত ‘নোটপেটিয়া’ (NotPetya) ম্যালওয়্যার ছড়ানোর অভিযোগ উঠে রাশিয়ার বিরুদ্ধে। এই ম্যালওয়্যার খুব দ্রুত বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। এতে বিশ্বের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০২৩ সাল আরও বিবর্তিত র্যানসমওয়্যার নিয়ে আসবে,যা সাইবার নিরাপত্তার দিকে একটি ধাক্কা স্বরূপ, এবং এছাড়াও আরও অনেক ট্রেন্ড, কিছু পুরাতন ও কিছু নতুন।
দৃষ্টি দেয়া যেতে পারে সিএনএন এর খবরে, যেখানে গত বছরের মার্চে বলা হয়েছিলো- রাশিয়া ইউক্রেনে হামলার পরেই মার্কিন সরকার তাদের বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির প্রতি উচ্চ সতর্কতা জারি করেছে। গত কয়েক বছরের মধ্যে দেশটিতে যে কয়টি সাইবার হামলা হয়েছে তার অধিকাংশই ছিল রাশিয়ান হ্যাকারদের কাজ।
এমআইটি টেকনোলজি রিভিউ বলছে, ২০২৩ সালে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ান সরকার-অনুষঙ্গিক হ্যাকার গ্রুপ থেকে সাইবার অভিযান অব্যাহত থাকবে। মাইলস হাচিনসন, জুমিও সিআইএসও, বলেছেন তিনি বিশ্বাস করেন আরও বিদেশী সরকার অন্যান্য দেশকে টার্গেট করার জন্য তৃতীয় পক্ষের হ্যাকারদের তাদের কর্মসংস্থানে আনবে। আগামী বছরে, আমরা ধারনা করতে পারি যে সারা বিশ্বের সামরিক গোষ্ঠীগুলি অন্যান্য দেশের সমালোচিত অবকাঠামো এবং ক্রিয়াকলাপে আক্রমণ করার জন্য বিশেষজ্ঞ হ্যাকারদের উপর নির্ভর করবে। রাজনৈতিকভাবে অনুপ্রাণিত সাইবার আক্রমণের বিরুদ্ধে নিজেদের রক্ষা করার জন্য, সরকারী ও বেসরকারী সংস্থা উভয়কেই শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তুলবে।
এদিকে গুগল হোম’ স্মার্ট স্পিকার হ্যাক করে ব্যবহারকারীর আলাপচারিতায় আড়ি পাতা সম্ভব বলে জানিয়েছেন সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ম্যাট কুনজি। স্মার্ট স্পিকারের বাগ চিহ্নিত করার জন্য গুগলের কাছ থেকে এক লাখ ডলারের পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। ২০২২ সালের এপ্রিলে ‘ইনভাইট অনলি’ সংযোগ ব্যবস্থা চালু করে ওই বাগ সমস্যার সমাধানও করেছে গুগল। তবে এখনও ফার্মওয়্যার আপডেট না করায় হ্যাকিংয়ের ঝুঁকিতে আছেন স্মার্ট স্পিকার ক্রেতাদের অনেকেই।
অপরদিকে নাসার ডার্ট (ডবল অ্যাস্টোরয়েড রিডাইরেকশন টেস্ট) মহাকাশযান শব্দের চেয়ে বেশি গতিতে ছুটে গিয়ে পৃথিবী থেকে ৬৮ লাখ মাইল দূরে একটি গ্রহাণু পিণ্ডে সফলভাবে আঘাত হানার পর ওই গ্রহাণুটি এরই মধ্যে কয়েক হাজার কিলোমিটার বিস্তৃত ধ্বংসস্তূপ মহাকাশে ছড়িয়ে দিয়েছে। নাসার এ মহাকাশযানের আঘাতের পর গ্রহাণুটির গতিপথ বদলেছে কিনা, এখন তা-ই খতিয়ে দেখছেন বিজ্ঞানীরা।
মোটামুটি ১৬০ মিটার চওড়া ওই গ্রহাণুর নাম দেওয়া হয়েছে ডাইমরফোস। দশ মাস আগে পৃথিবী থেকে রওনা দেওয়া নাসার ‘ডার্ট মহাকাশযান’ গত ২৬ সেপ্টেম্বর সফলভাবে ওই গ্রহাণুর গায়ে আঘাত হানে ও ধ্বংস হয়ে যায়।
পৃথিবীর জন্য বিপদজনক গ্রহাণুর গতিপথ বদলে দেওয়ার এই কৌশলের নাম দেওয়া হয়েছে কাইনেটিক ইমপ্যাক্টর টেকনিক। নাসার বিজ্ঞানীরা বলছেন, ডাইমরফোসের ক্ষেত্রে গতিপথের পরিবর্তন কতটা হল, তা মাপতে কয়েক মাসও লেগে যেতে পারে।