রাজস্ব বোর্ডের কাছে ‘টাইপ-২’ প্যারেন্টিং প্রত্যাশা টেক স্টার্টআপদের
চলতি বছরের জুনের পর সফটওয়্যার ও আইটিইএস খাতের কর্পোরেট কর ছাড় সুবিধা উঠে গেলে মুখ থুবড়ে পড়বে দেশের প্রযুক্তি খাতের বিকাশমান স্থানীয় নবীন উদ্যোক্তারা। তাদের আর্জি- রাজস্ব আদায় প্যাঁচে বিকাশমান ‘স্টার্টআপ’ খাতকে যেনো ‘শাটআপ’ করা না হয়। তাদের মূল্যায়ণ বলছে, এই উদ্যোগ দেশে কমতে থাকা রিজার্ভ এর গলা চেপে ধরতে পারে। তাই রাজস্ব খাতে কর নির্ধারণ, অবকাশের ক্ষেত্রে ধারণা থেকে বেরিয়ে উপাত্ত নির্ভর সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরামর্শ খাত সংশ্লিষ্টদের।
এই খাতের বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তারা বলছেন, দুই বছর হলো স্টার্টআপ স্যান্ডবক্স চালু করলেও এখনো কোনো কোম্পানি এর অধীনে নিবন্ধিত হতে পারেনি। ফলে লাভ করুক বা না করুক আগামীতে তাদের মোট আয়ের ০.৬ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। এটা খুবই শঙ্কার ও উদ্বেগের বিষয়। এমন বাস্তবাতায় ২০২২ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে দেশে ভিসি ফান্ডিং কমেছে ৪২ শতাংশ। অথচ ট্যাক্স এক্সাম্পশনের কল্যাণে প্রতিবেশী দেশ ভারত, সিংগাপুর, মিশরের মতো দেশে বিকশিত হচ্ছে নবীন উদ্যোগরা। তাই দেশের প্রতিটি স্টার্টআপ এর জন্য অন্তত ৫ বছরে কর অবকাশ সুবিধা দাবি করেছেন এই খাতের ব্যবসায়ীরা। একইসঙ্গে পুরো বিষয়টি স্বয়ংক্রিয় করতে স্ব-উদ্যোগে রাজস্ববোর্ডকে সহায়তা করতে আগ্রহী প্রযুক্তি খাতের সংগঠনগুলো।
বুধবার রাজধানীর কাওরান বাজারে ডেইলিস্টার সম্মেন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত স্থানীয় প্রযুক্তি উদ্যোগ বিকাশে ট্যাক্স পলিসি নিয়ে অনুষ্ঠিত সভায় এই দাবি তুলেন তারা।
ভেঞ্চার ক্যাপিটাল অ্যান্ড প্রাইভেট ইক্যুইটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ভিসিপিইএবি), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস), ইন্সটিটিউট অফ ইনফরমেটিক্স এন্ড ডেভেলপমেন্ট (আইআইডি) এবং এডটেক সোসাইটি যৌথভাবে এই গোল টেবিল আলোচনার আয়োজন করে।
এডটেক সোসাইটি সমন্বয়ক ফাহিম মাশরুরের সঞ্চালনায় ভিসিপিইএবি প্রেসিডেন্ট শামীম আহসান, বেসিস সিনিয়র প্রেসিডেন্ট সামিরা জুবেরী হিমিকা, আইআইডি নির্বাহী প্রধান সাঈদ আহমেদ, এআর কমিউনিকেশনের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান নির্বাহী এম আসিফ রহমান, বিডস ইকোনোমি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জীশান কিংশুক হক, চালডাল ডটকম প্রতিষ্ঠাতা জিয়া আশরাফ, কন্টেন্ট ম্যাটার্স লিমিটেড সিইও এস এম রফিকুল ইসলাম সানা, ড্রিমার্স ল্যাব প্রতিষ্ঠাতা তানিভীর হোসেন খান, এসএসডি টেক প্রতিষ্ঠাতা ফিরোজ মোঃ জাহিদুর রহমান, বাংলাদেশ ভেঞ্চার ক্যাপিটেল লিমিটেডের সিইও শওকত হোসেন প্রমুখ সভায় অংশ নেন।
অনুষ্ঠানের মূল সঞ্চালনকারী বেসিসের সাবেক সভাপতি ফাহিম মাসরুর বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী সরকার আইসিটি খাতে কর অব্যাহতি বাবদ প্রতি বছর প্রায় ১,৪৭০ কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে। এই হিসাবে এই খাতের কোম্পানিগুলো বছরে ৫ হাজার কোটি টাকার লাভ করছে। তিনি বলেন যে – এই হিসাব কোনোভাবেই বাস্তব চিত্রের প্ৰতিফলন না। বর্তমানে সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবার ৫ হাজারের বেশি ক্ষদ্র উদ্যোক্তা সব মিলিয়ে বছরে সর্বোচ্চ ১,০০০ কোটি টাকা মুনাফা করে যা থেকে সর্বোচ্চ ৩০০ কোটি টাকা সরকার পাবে কর অব্যাহতি সুবিধা তুলে নিলে। তিনি রাজস্ব বোর্ডের কাছে আহবান করেন যাতে কোম্পানি লেভেলে জরিপ করে এই সেক্টরের প্রকৃত মুনাফার হিসাব নিরুপন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বেসিসের সাবেক সভাপতি শামীম আহসান বলেন, সরকার ইতিমধ্যেই যে সকল পলিসি সাপোর্ট তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দিয়ে আসছে তার সুফল সবেমাত্র আসা শুরু হয়েছে। তিনি বলেন যে কর অব্যাহতি অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত থাকুক সেটা এই খাতের কেওই চায় না। তবে এখনই তুলে নিলে সরকার অতি স্বল্প মেয়াদে যে পরিমান সামান্য অতিরিক্ত কর পাবে, তার থেকেও বেশি কর হারাবে আগামী পাঁচ থেকে দশ বছরে। এছাড়াও অনেক উদ্যোক্তা দেশে ব্যবসা করা ছেড়ে বিদেশে চলে যেয়ে ব্যবসা শুরু করবে, যাতে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হবে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির।
বক্তারা মনে করেন, রাজস্ব বোর্ড এর পুলিশিং প্রবণতাটা অ্যাসোসিয়েশনের ওপর দিয়ে দেয়া এবং অ্যাসেসমেন্ট, সার্কেল ম্যানেজার এবং রাজস্ব আদায়কারীদের সঙ্গে নলেজ শেয়ারিং করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। পলিসি ও রাজস্ব খাতে বিনিয়োগ উপদেষ্টা, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা চ্যানেলে ঘনিষ্ট যোগাযোগ করা দরকার। দেশে আইসিটি থাত থেকে বছরে ৯ হাজার কোটি টাকা বেতন দেয়া হয়। এখান থেকেও সরকরা কর পায়। দেশে এখন ৭২ হাজার কোটি টাকার কু ঋণ রয়েছে, সেখানে এই খাতের জন্য ২ হাজার কোটি টাকা ছাড় দেয়াটা বড় বিষয়। সব মিলিয়ে রাজস্ববোর্ড সফলদের ‘পা ধুয়ে পানি খাও’ টাইপের প্যারেন্টিং থেকে বেরিয়ে তাকে বিকশিত হতে ‘শিশু একাডেমি’র প্রতিযোগিতায়’ নিয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা করেন তারা।