রাজধানীর ঢাকার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে চলছে অনলাইন উদ্যোক্তাদের অফলাইন মহাসম্মেলন। “নিজের বলার মত একটা গল্প ফাউন্ডেশন” এর ষষ্ঠ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এই উদ্যোক্তা মহাসম্মেলনে চলছে ৬৪ জেলার বিখ্যাত খাবার ও পণ্য মেলা। এতে দেশের ৬৪ জেলা ও ১৮ টি দেশ থেকে উদ্যোক্তা হওয়ার ব্যতিক্রমী অনলাইন প্রশিক্ষণ নিয়ে মেলায় উপস্থিত হয়েছে সহস্রাধিক নবীন উদ্যোক্তা। সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চলবে মেলা।
দুপুরে সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের যে অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে উদ্যোক্তারাই পারে তাকে শক্তিশালী ভিতের উপর প্রতিষ্ঠিত করতে। কারণ উদ্যোক্তারা শুধু নিজে স্বাবলম্বী হয় না তারা সমাজের আরো দশজনকে স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ তৈরি করে দেয়। এ প্রসঙ্গে সুপার পাওয়ার আমেরিকার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, গুগল, ফেসবুক,মাইক্রোসফট ও টেসলার মত প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্যোক্তারা ছিল বলেই আজ সারাবিশ্বে আমেরিকা নেতৃত্ব করতে পারছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত হতে হলে বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদেরও বিভিন্ন নতুন নতুন ধ্যান-ধারণা নিয়ে কাজ করে সেগুলোর সঠিক বাস্তবায়ন করতে হবে।
উদ্যোক্তাদের দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক অগ্রগতির কান্ডারী উল্লেখ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী অর্থনৈতিক বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে বলেন, একসময়ের খাদ্য ঘাটতির বাংলাদেশ আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বে খাদ্যের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। বিএনপি আমলে বিদ্যুৎ উৎপাদন মাত্র ১৬০০ মেগাওয়াট ছিল, বর্তমানে বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক এর মাধ্যমে দেশের প্রান্তিক মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিয়েছে সরকার। এ ধরনের বিভিন্ন উদ্যোগ টেকসই করার জন্য অর্থনৈতিকভাবে আমাদেরকে আরো সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। মন্ত্রী ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট কথা উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যার যে বিশাল তরুণ-তরুণী জনগোষ্ঠী রয়েছে তাদের কর্মক্ষমতাকে কাজে লাগাতে পারলেই আমাদের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে।
মোঃ তাজুল ইসলাম নিজের ব্যবসায়িক জীবনের শুরুর দিকের স্মৃতিচারণ করে এ সময় উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, উদ্যোক্তা হতে গেলে সবচেয়ে বড় যে গুণাবলী নিজের মধ্যে ধারণ করতে হবে তা হচ্ছে আত্মবিশ্বাস এবং কোন বাধাতেই হাল না ছেড়ে দেওয়ার মনোবৃত্তি। উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের ব্যবসা দাড়া করাতে গেলে নানা রকমের প্রতিবন্ধকতা আসবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সামনে এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ় বিশ্বাসই একজন উদ্যোক্তার অন্যতম পুঁজি যা তাকে কখনোই পরাজিত হতে দিবে না। এ সময় মন্ত্রী তরুণ উদ্যোক্তারা তাদের প্রাণচাঞ্চল্য, কর্মস্পৃহা এবং জীবনী শক্তি দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন, এমপি, জারা মাহবুব, আমেরিকান এম্বেসির ইকোনমিক ইউনিট চিফ জোসেফ গিবলিন, গ্রামীণ ফোনের প্রধান নির্বাহী ইয়াসির আজমান ও স্টার্টআপ বাংলাদেশ ম্যানেজিং ডিরেক্টর সামি আহমেদ।
সভাপতির বক্তব্যে ‘নিজের বলার মতো একটা গল্প ফাউন্ডেশন’ এর প্রতিষ্ঠাতা ও মেন্টর ইকবাল বাহার জাহিদ বলেছেন, ‘চাকরি করবো না চাকরি দেব’ এই ব্রত সামনে রেখে গত ২৩০০ দিন ধরে একদিনের জন্যও আমাদের এই প্রশিক্ষণ কর্মশালা বন্ধ ছিল না। কোন ফি ছাড়া উদ্যোক্তা বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে এই প্লাটফর্ম থেকে। এটা কেবল বাংলাদেশ নয় সারা বিশ্বে অনন্য।
তিনি আরো বলেন, আমরা ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি ১৬৮টি জন নিয়ে শুরু করেছিলাম। সেই থেকে প্রতি সপ্তাহে সারা দেশে ও বিদেশে প্রায় ৪৯০০ মিটআপের মধ্য দিয়ে চলছে অনলাইন/অফলাইন কার্যক্রমও। এটা সারা বিশ্বে একটি ইতিহাস – এত লম্বা এবং টানা ৯০ দিন এবং টানা ২৩০০ দিন কোন প্রশিক্ষণ কর্মশালা পৃথিবীতে কেউ কোনোদিন করেনি। ইতিমধ্যে এই প্লাটফর্ম থেকে আমাদের লক্ষাধিক উদ্যোক্তা হয়েছেন এবং গত সাড়ে ৬ বছরে বদলে গেছে এই সাড়ে ১২ লাখ তরুণীদের জীবন, এখন যারা এক একজন দক্ষ,পজিটিভ ও ভালোমানুষ’।
“নিজের বলার মতো একটা গল্প” ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বাংলাদেশের ৬৪ জেলা, ৪৯২ টি উপজেলা ও ৫০টি দেশ থেকে সাড়ে ১২ লাখ তরুণ-তরুণীকে টানা ৯০ দিন ব্যাপী ২৬টি ব্যাচে অনলাইনে উদ্যোক্তা তৈরির কর্মশালার টানা ২৩০০ তম দিন উপলক্ষ্যে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। আয়োজনে প্রবাসীদেরকে বাংলাদেশের অক্সিজেন উল্লেখ করে তাদেরকেও উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার গল্পও শেয়ার করা হয়।