পলকা। আলু থেকে তৈরি পলিথিন। দেশীয় প্রযুক্তির পরিবেশ বান্ধব এই পলাকার পরীক্ষামূলক শিট তৈরির পদ্ধতিও সবাইকে জানিয়ে দিয়েছেন উদ্ভাবক মাহবুব সুমন। তরুণ এই গবেষক জানিয়েছেন রিনিউয়েবল এনার্জি, সাসটেইনেবল, বায়োডিগ্রেডেবল, রিসাইকেল প্রোডাক্ট তৈরি প্রতিষ্ঠান শালবৃক্ষ এই পলকা তৈরি করেছেন। সুমন ডিজিবাংলা-কে বলেন- বাণিজ্যিক ভাবে তৈরি করতে ২ কোটি টাকার মতো বিনিয়োগ দরকার। এ কারণেই কটেজ আকারে এই পণ্যটা বানাক। পলিথিন কে না বলুক। এ কারণেই প্রযুক্তি সহ পুরো প্রক্রিয়াটা আমি শেয়ার করলাম। আপনারা সবাই ঘরে ঘরে এই ব্যাগ বানালে দেশ জুড়ে পলেথিন, প্লাস্টিকের দূষণ অনেক কমে যাবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।
তিনি আরো বলেন, প্রতি কেজি আলু থেকে ১৩ থেকে ১৫ টা পলকা ব্যাগ বানানো সম্ভব। ব্যাগ বানানোর কাঁচামাল আলু থেকে নেয়ার পর বাকি আলুতে প্রচুর প্রোটিন ও ফাইবার থেকে যায়। যা খাদ্য হিসেবে অটুট থেকে যায়। ফলে পলকা ব্যাগ বানালে দেশে আলুর সংকট হবার কোনো সম্ভাবনা নেই।
পলকা কি?
পলকা কি তা বুঝতে হলে জানতে হবে প্লাস্টিক কি? অণুবীক্ষণ যন্ত্রে প্লাস্টিককে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে তাতে হাইড্রো কার্বনের খুব ছোট ছোট কনা বা মনোমার পরপর সজ্জিত হয়ে দীর্ঘ শেকলের পলিমার তৈরি করে আছে। এরকম অনেক পলিমার একত্র হয়ে প্লাস্টিক তৈরি করে। প্লাস্টিকের পাতলা ব্যাগ পলিমারের তৈরি বলে তাকে বলা হয় পলেথিন। এই হাইড্রোকার্বন পলিমার মাটিতে পচেনা ও অনেক দূষণ তৈরি করে। জীবাশ্ম জ্বালানী থেকে তৈরি এই পলেথিন। আমরা সবাই জানি জীবাশ্ম জ্বালানী অর্থাৎ তেল, গ্যাস, কয়লা পৃথিবী ধ্বংস করে সকল প্রাণ মেরে ফেলছে। এর বিকল্প দরকার।
ফলে আমরা যদি এমন পলিমার বানাতে পারি যা একই রকম লংচেইন পলিমার কিন্তু মাটিতে দ্রুত পচে যাবে এবং কোন দূষণ তৈরি করবেনা তাহলে ব্যাপারটা বেশ হয়।
পলকা বানানোর প্রক্রিয়াঃ
প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রঃ পলকা বানানোর জন্য লাগবে আলুর স্টার্চ, পানি, হোয়াইট ভিনেগার, গ্লিসারিন।
আলু থেকে স্টার্চ বানানোর প্রক্রিয়াঃ
বাজার থেকে গোল আলু কিনে এনে ভাল করে ধুয়ে পরিস্কার করে ছিলে নিতে হবে। তারপর ছিলা আলুকে কুচিকুচি করে কেটে বা গ্রিটারে গ্রিট করে পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে ১০ মিনিট। তারপর হাত দিয়ে চেপে বা অন্য যেকোন উপায়ে একে চেপে চেপে ভেতরের সমস্ত নির্যাস বের করে নিতে হবে। শেষে সেই পানিটা কোন পরিস্কার পাত্রে রেখে দিলে তলায় স্টার্চ জমে যাবে। এই স্টার্চটা
লালচে ময়লাযুক্ত থাকবে। একে কয়েকবার পাতন প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে নিলে ধবধবে সাদা পরিস্কার স্টার্চ পাওয়া যাবে। প্রতি ১০ কেজি আলু থেকে ১৩শত গ্রামের মত স্টার্চ তৈরি করা যাবে।
তৈরি হওয়া স্টার্চ থেকে পলকা (POLKA) বানানোর পরিক্ষাঃ
তৈরি হওয়া স্টার্চ জটলা পাকানো গাদা গাদা পলিমারের একটা দঙ্গল। এই দঙ্গলের সাথে পানি মেশালে তা মোটামুটি লাইনে চলে আসে। লংচেইন পলিমার যেমন হয় সেরকম হয় দেখতে। কিন্তু
অনুবিক্ষনিক লেভেলে এতেও প্রচুর শাখা প্রশাখা থেকে যায়। এই শাখা প্রশাখা ছেটে ফেলে একে একটা সিঙ্গেল লং চেইন পলিমারে রূপান্তরের জন্য আমরা এতে প্রয়োগ করবো ভিনেগার। এই অবস্থায় ‘পলকা’ বানালে প্লাস্টিকের মত একটা কিছু হবে কিন্তু তা হবে খুবই শক্ত ও ভঙ্গুর। ভঙ্গুর প্রবনতা কমানো ও জিনিসটাকে নরম বা ফ্লেক্সিবল করার জন্য এই মিশালে আমরা গ্লিসারিন প্রয়োগ করবো। গ্লিসারিনের অণুগুলো লং চেইন পলিমারের ফাঁকে ফাঁকে ঢুকে পড়ে একে নরম করে ফেলে। এই নরম পলকাকে কোন ফ্ল্যাট সারফেসে লেপ্টে দিলেই পেয়ে যাব আমাদের কাংখিত পলকা শিট। শিট থেকে পরে আমরা ব্যাগ বা Wrapping পেপার বানিয়ে নিতে পারবো সহযেই।
পরিক্ষা করার জন্য একটা পাত্রে ১০ গ্রাম স্টার্চ, ৫ মিলি ভিনেগার, ৫ মিলি গ্লিসারিন, ৬০ মিলি পানি ভাল করে মিশিয়ে গরম করতে হবে। কিছুক্ষন গরম করলে এটি ঘন থিকথিকে হয়ে উঠবে। গরম অবস্থাতেই একে কোন ফ্ল্যাট সারফেসে লেপে দিয়ে ওভেন বা ড্রায়ারে ৬৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ১ ঘন্টা শুকাতে হবে। শুকানোর পর হাতে নিয়ে দেখবেন আপনার পলকা তৈরি হয়ে গেছে। এখনতো বানানো শিখে গেলেন। এবার যেকোন আকৃতিতে বানিয়ে তাকে ব্যাগ, Wrapping Paper হিসেবে ব্যবহার করলেই হল।
বিঃদ্রঃ স্টার্চ তৈরিতে আলু থেকে কাসাভা ব্যবহার সাশ্রয়ী