প্রতিবেশী দেশগুলোকে পেছনে ফেলে করোনার অচলাবস্থায় ‘ই-কমার্স’ এর ‘ডিজিটাল’ কনসেপ্ট বাংলাদেশকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
কোভিডে ই-কমার্স এর বিস্তৃতি ঘটেছে পাঁচ বছর আগেই। আমি আশা করছি, ডিজিটাল পল্লীর মাধ্যমে মানিকগঞ্জের সাঁটুয়ারিয়া তাঁত বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভীষণভাবে সমাদৃত হবে। বেনরসী, জামদানির মতো তাঁতের শাড়িও মানুষ পছন্দ করবে। বিক্রি হবে। আজকে আমি যখন স্টলগুলো ঘুরেছি তখন ১২ আনাই বিক্রি হয়ে গেছে। এতে বোঝা যায়, আগামীতে এর জনপ্রিয়তা কোথায় পৌঁছবে। কোভিডে তাদের অবস্থা খুবই খারাপ ছিলো। এই উদ্যোগে তাদের ভাগ্য ফিরতে বাধ্য। আমি মনে করি আজকে যে ডিজিটাল পল্লী শুরু হলো এর সুবিধাভোগী হবে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারণা পূর্ণতা পেলো বলেও মন্তব্য করেন বাণিজ্য মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘‘করোনাকালীন সময়ে ই-কমার্স সেবা দিয়ে এ খাতের উদ্যোক্তারা প্রমাণ করেছে ই-কমার্স আমাদের জীবনের অংশ হয়ে গেছে। নারী উদ্যোক্তারা অনলাইনকে বিকল্প মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে তা সব সময়ের জন্য একটা উদাহরণ হয়ে থাকবে। ই-কমার্সের যেকোনো সমস্যা ও প্রয়োজনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অতীতে যেমন সাড়া দিয়েছে যেমন ভবিষ্যতে সাড়া দিবে। ই-কমার্স উদ্যোক্তারা ই-ক্যাবের সঙ্গে যুক্ত থেকে এই বিপদের সময় যেভাবে সেবা দিয়েছে তাতে আস্থার জায়গাটা বেশ শক্তিশালী হয়েছে।’’
অপরদিকে ‘ব্যক্তি ও পারিবারিক উদ্যোগে প্রচলিত অপচয়ের জায়গাগুলো নষ্ট করে ডিজিটাল পথ ধরে ই-কামর্স এর ক্ষুদ্র উদ্যোক্তরা সামেন এগিয়ে যাচ্ছে’ উল্লেখ করে ‘এখানে প্রতারণা করা যাবে না’ বলে সতর্ক করেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
তিনি বলেছেন, প্রতারণা করে কেউ টিকে পেরেছে তা আমার চোখের সামনে ঘটেনি। বরং সততার সঙ্গে ব্যবসা করলে সেখানে উন্নতি হবেই। সেখানে পরাস্ত হবার কোনো উপায় নেই।
মন্ত্রী আরো বলেন, প্রতারণার দায়ে চরম দুর্দশায় আমরা যখন ‘ডিজিটাল’ গালি খাচ্ছিলাম তখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যে উদ্যোগ নিয়েছে, পথ তৈরি করেছে, টাকা ফেরত দিতে শুরু করেছে এর জন্য অবশ্যই ধন্যবাদ পাবে। আর তাদেরকে এখন নিবন্ধিত করার যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তা তাদের লাইসেন্স দেয়ার প্রক্রিয়াকে সহজ করবে। বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রাম একদিন ডিজিটাল পল্লী হবে এবং ঘরে ঘরে গড়ে উঠব ডিজিটাল উদ্যোক্তা।
প্রধানমন্ত্রীর ভাবনা অনুযায়ী ই-কমার্সের মাধ্যমে সন্তানেরা শহরে বসেই মায়ের হাতের রান্না করা খাবারের স্বাদ নিতে পারবেন এমন স্বপ্ন নিজেও ধারণ করেন জানিয়ে মোস্তাফা জব্বার বলেন, এক্ষেত্রে ডিজিটাল পল্লী অসাধারণ উদ্যোগ।
রবিবার (২৯ মে ২০২২) রাজধানীর ধানমন্ডির মেরিয়ট কনভেনশন সেন্টারে ডিজিটাল পল্লী কর্মসূচীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন মন্ত্রীদ্বয়।
বিপিসি’র সমন্বয়ক ও অতিরিক্ত সচিব আবদুর রহিম খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জেষ্ঠ সচিব তপন কান্তি ঘোষ। তিনি, ডিজিটাল পল্লী বাস্তবায়ন উদ্যোগ নেয়ার পাশাপাশি ই-কমার্স খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ই-ক্যাবের ভূমিকার প্রশংসা করেন।
অপরদিকে দেশের ঐতিহ্য দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে দিয়ে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে এই উদ্যোগ ডিজিটাল বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে প্রান্তিক মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন বিপিসি’র সমন্বয়ক মোঃ আব্দুর রহিম খান।
অনুষ্ঠানে ডিজিটাল পল্লী কার্যক্রমের ওপর একটি উপস্থাপনা পেশ করেন ই-ক্যাব সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ তমাল। যেখানে কীভাবে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে তার রূপরেখা তুলে ধরা হয়।
ই-ক্যাব জেনারেল ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম শোভনের উপস্থাপনায় স্বাগত বক্তব্যে মেয়াদ বাড়ানোর পাশাপাশি প্রকল্পটির পুরো দেশে ছড়িয়ে দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান ই-ক্যাব সহ-সভাপতি সাহাব উদ্দিন শিপন।
ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বিজনে স প্রমোশন কাউন্সিলের (বিপিসি) যৌথ উদ্যোগে চলমান এই প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মানিকগঞ্জ জেলার পণ্য নিয়ে ইডিসি’র প্রেসিডেন্ট কাকলী তালুকদার সহ ৩০ জন উদ্যোক্তাকে নিয়ে সকাল থেকে ডিজিটাল পল্লী মেলার আয়োজন করা হয়। সেখানে উদ্যোক্তারা তাঁত দিয়ে তৈরি নান্দনিক নকশার বাহারি পোশাক প্রদর্শন করে। আগত দর্শকেরা এর প্রায় সবগুলোই কিনে নেন মেলা শেষ হওয়ার আগেই।