বর্তমানে পেমেন্ট গেটওয়েগুলোতে ই-কমার্স গ্রাহকদের প্রায় ২১৪ কোটি টাকার মতো আটকে আছে। ই-কমার্সে পণ্য কিনতে গিয়ে পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে পড়া গ্রাহকের টাকা ফেরত পাইয়ে দিতে জোরালো ভূমিকা পালন করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। চলতি মাসের ১৫ কার্য দিবসে মোট ৫ কোটি ৯২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮১ টাকা ৬০ পয়সা গ্রাহককে ফেরত পাইয়ে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ই-কমার্স সেল। ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত পাঁচ দফায় মোট ১২টি প্রতিষ্ঠান থেকে ৯৯০টি হিসাবের বিপরীতে ৮৫৪ জন গ্রাহককে এই অর্থ বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় ই-কমার্স সেলের উপসচিব মুহাম্মদ সাঈদ আলী জানিয়েছেন, আজ ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৮১১টি হিসাবের বিপরীতে ই-কমার্সের ৭ হাজার ৯৪৯ জন গ্রাহককে তাদের পাওনার মোট ৭৬ কোটি ৯৯ লাখ ২৯ হাজার ৯৯৬ টাকা ৭০ পয়সা ফেরত পাইয়ে দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে পাওনার সবচেয়ে বেশি অর্থ পরিশোধ করেছে কিউকম। শুধু এই প্রতিষ্ঠানটি থেকেই ফেরত পাওয়া গেছে ৫১ কোটি ৭৬ লাখ ৫৬ হাজার ৯৮৬ টাকা। এরপরের অবস্থানে থাকা আলেশা মার্ট ফেরত দিয়েছে ১৭ কোটি ৮৭ লাখ ৯৪ হাজার ৩৪ টাকা। এছাড়াও আলোচিত দালাল প্লাস ৫ কোটি ১১ লাখ ৭৪ হাজার ৮১৯ টাকা, বুম বুম ৭৮ লাখ ৮৭ হাজার ৪৪১ টাকা, আনন্দেরবাজার ৬ লাখ ৫৬ হাজার ৪৩ টাকা এবং থলে ডটকম ১২ লাখ ১৩ হাজার ২৪০ টাকা গ্রাহককে ফেরত দিয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, গত ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত পণ্য কিনতে গ্রাহকের বিভিন্ন পেমেন্ট গেটওয়েতে ২৫টি ই-কমার্সের ৫৫৯ কোটি ৫২ লাখ ৭২ হাজার ৩০৪ টাকা জমা ছিল। সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী পণ্য না পেলে টাকা পরিশোধের ১০ দিনের মধ্যে সেটা গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে ফেরত যাওয়ার কথা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত ২৪ জানুয়ারি বিভিন্ন পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে থাকা টাকা ফেরতের প্রক্রিয়া শুরু করে। এরপর গত ৮৫ দিনে ১২টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের মোট ৭৬ কোটি ৯৯ লাখ ২৯হাজার টাকা ফেরত পেয়েছেন ৭ হাজার ৯৪৯ জন গ্রাহক। সে হিসাবে বাকি ৪৮২ কোটি ৫৩ লাখ ৪৩ হাজার টাকা ফেরত দিতে অন্তত বছর খানিক লাগার কথা। তবে এ টাকা কতজন গ্রাহকের পাওনা, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বা ই-ক্যাব কারও কাছে নেই। ই-ক্যাব ও গেটওয়ে সূত্রগুলোর ধারণা, টাকা আটকে যাওয়ায় অন্তত ৪০ হাজার লোক ক্ষতির শিকার।
জানা গেছে, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির প্রাপ্ত ক্রয়াদেশের বিপরীতে ২৮ কোটি ৬১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা আটকে আছে বিকাশ ও নগদসহ বিভিন্ন গেটওয়েতে। এ বিষয়ে বিকাশের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেছেন, টাকা ছাড়ে তাঁদের নিজেদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ই-কমার্স সেলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারা ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত আগস্ট থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ছয় মাসে ৪২টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান এবং ফেসবুক পেজের বিরুদ্ধে ১১ হাজার ৩৫৫টি অভিযোগ জমা পড়েছে। এর মধ্যে ১০ হাজার ৮৩টিই হলো ইভ্যালি এবং ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে। মালিকপক্ষ কারাবন্দী ছিল বলে এ সব অভিযোগের কোনোটিই নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়নি। যেসব প্রতিষ্ঠানের মালিকপক্ষকে পাওয়া যাচ্ছে, সেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগগুলো নিষ্পত্তি করা হচ্ছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ই-কমার্স সেলের প্রধান ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান জানিয়েছেন, বিভিন্ন অভিযোগ থাকার পরেও ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে তারা ৩১ মার্চ পর্যন্ত সুযোগ দিয়েছিলেন। যারা এই সময়ের মধ্যে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এবং গ্রাহকদের টাকা ফেরতের উদ্যোগ নিয়েছে, তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার জন্য সহযোগিতা করা হবে। আর যারা যোগাযোগ করেনি তাদের তালিকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অপরদিকে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম শোভন জানিয়েছেন, ই-কমার্স প্রতারণা নিয়ে প্রাথমিকভাবে তারা ৫০টি প্রতিষ্ঠান ও ফেসবুক পেজের একটা তালিকা করেছেন। শিগগির এই তালিকা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কথা রয়েছে।
এছাড়াও বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানে আটকে থাকা গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ই-কমার্স সেল। বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত ডিজিটাল কমার্সের মাধ্যমে সংঘটিত ব্যবসা-বাণিজ্যের লেনদেনে সৃষ্ট ভোক্তা বা বিক্রেতা অসন্তোষ ও প্রযুক্তি সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে গঠিত কারিগরি কমিটির চতুর্থ বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ওই বৈঠকেই প্রতারণায় জড়িতদের তালিকা দিতে ই-ক্যাবকে সাত দিনের সময় বেধে দিয়েছিলো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।