ব্যতিক্রমী চ্যালেঞ্জ হিসেবে বৃহস্পতিবার প্রথম বঙ্গবন্ধু ইন্টারন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি অ্যাওয়ার্ড ২০২৩ প্রদান করা হলো এক ব্যক্তি ও পাঁচ প্রতিষ্ঠানকে। পুরস্কার গ্রহণ করেন তামজিদ রহমান, আনির রাজামালা, আফাসানা আক্তার কানিস, ডিআইজি আমেনা বেগম, শ্যাম সুন্দর সিকদার এবং মনীষা মিন নিপুন।
রাজধানীর হোটেল রেডিসন ব্লু-তে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
শিক্ষার্থী ক্যাটাগরিতে প্লেন্টি প্রোজেক্ট নিয়ে স্মার্ট স্টুডেন্ট হিসেবে সেন্ট জোসেভ স্কুলের শিক্ষার্থী তামজিদ রহমান। ১২ বছর বয়সী এই বালক বললেন, ডিজিটাল বাংলাদেশে জন্ম নেয়ায় নিজেদের বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আমাদের দায়িত্ব অনেক। তাই বাবা-মায়ের কাছ থেকে সিড মানি নিয়ে স্কুলে একটি সচেতনতা কর্মশালা করি। এরপর কমিক বেস ই-বুক লঞ্চ করি।
এছাড়াও এন্টরপ্রেনিউর্স ক্যাটাগরিতে অনলাইনে যুক্ত হয়ে ভারতের এন্ড নাও ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠাতা আনির রাজামালা এই পুরস্কার গ্রহণ করেন। এসময় তিনি এই পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে ডিজিটাল স্বাধীনতা সুরক্ষায় তিনি আরো সোচ্চার হবেন বলে মন্তব্য করেন।
একই ক্যাটাগরিতে স্টার্টআপ হিসেবে বিজয়ী হয় বাইট ক্যাপসুল। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করায় এই পুরস্কার গ্রহণ করেন উদ্যোক্তা সাকিব হক জিসান ও আফাসানা আক্তার কানিস।
সরকারি ক্যাটাগরিতে পুরস্কৃত হয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়র্ক। পুরস্কার গ্রহণ করেন স্পেশাল ব্র্যাঞ্চের ডিআইজি আমেনা বেগম। পুরস্কার গ্রহণের পর তিনি বলেন, অনলাইনে ১২০০ ব্যাংকার্স ও ৬ হাজার নারী পুলিশকে সচেতনতা করতে পেরেছি। একই ক্যাটাগরিতে সাইবার সিকিউরিটি প্রসেসে নেতৃত্ব দেয়া প্রতিষ্ঠান বিটিআরসি’র ডিজিটাল সিকিউরিটি সেল এই পুরস্কার পেয়েছে। বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার এই সম্মাননা গ্রহণ করেন।
তিনি বলেন, আমাদের নিরাপদ ইন্টারনেট এবং সুরক্ষিত ডিজিটাল স্পেস দরকার। এজন্য ২০২১ সালে আমরা ১০ জন অফিসার নিয়ে ডিজিটাল সিকিউরিটি সেলা তৈরি করি। এরই মধ্যে আমরা বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে ৩৫ হাজার কন্টেন্ট সরিয়েছি। ফেসবুক থেকে ৪০০টি বেটিং লিংক মুছতে সক্ষম হয়েছি।
এছাড়াও বিশেষ ক্যাটাগরিতে পুরস্কৃত হয়েছে পথচলা ফাউন্ডেশন। পুরস্কার গ্রহণ করেন তৃতীয় লিঙ্গ কমিউনিটির প্রতিনিধি মনীষা মিম নিপুন। নিপুন বলেন, সাইবার বুলিং রুখতে তিন হাজারের বেশি তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে প্রশিক্ষণের আওতায় এনেছে পথচলা ফাউন্ডেশন। আমাদেরকে পাশে সরিয়ে না রেখে কাছে রাখুন।
ইউএনডিপি বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফেন লিলার বলেছেন, বাংলাদেশে প্রযুক্তি খাতে রেঁনেসা সৃষ্টি হয়েছে। উদ্ভাবনী ও সৃজনশীল নিজস্ব সল্যুশন দিয়েই ডিজিটাল বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তবে এখন ডিজিটাল খাতেও সুশাসন নিশ্চিত করার সময় এসেছে। লিঙ্গ বৈষম্য, বিদ্বেষ ছড়ানোর মতো বিষয়ে ইউএনডিপি বাংলাদেশের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করবে। সাইবার হুমকি মোবাবেলায় আমাদের একক উদ্যোগকে সম্মিলিত ভাবে কাজ করতে হবে।
আইসিটি সচিব শামসুল আরেফিন বলেন, ডিজিটাল শক্তিকে ব্যবহার করে মহামারির পরও বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। ইন্টারনেটের এই যুগে সোশ্যাল মিডিয়ার বাড়ন্ত অবস্থায় আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। এজন্য সচেতনতা তৈরিতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সির মহাপরিচালক আবু সাঈদ কামরুজ্জামান বলেন, সাইবার সুরক্ষা কোনো একক দেশের বিষয় নয়; এটি একটি বৈশ্বিক উদ্যোগ। কেননা সাইবার সুরক্ষার কোনো সীমানা নেই। তাই আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সফলতা আমাদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার ওপর নির্ভর করবে। তাই আমাদের সাইবার আকাশের সুরক্ষায় সবাইকে নিরলস কাজ করতে হবে।
হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জি এস এম জাফর উল্লাহ দুই শতাধিক থেকে ৩৫টি সাইবার উদ্যোগ যাচাই বাছাই করে ১২টি পুরস্কার দেয়ার কথা থাকলেও তা অর্ধেকে নামিয়ে ছয় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেন ইউএনডিপি’র প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর শাহরিন তিলোত্তমা। অনলাইনে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন গুগল এশিয়া প্যাসিফিক সাইবার সিকিউরিটি কর্মকর্তা মার্ক জনস্টন।
প্রতিটি বিভাগে বিজয়ীরা পেয়েছেন ১০ হাজার ডলারের আর্থিক পুরস্কার। ২০২২ সালে নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে অনুষ্ঠিত ‘গোল্ডেন জুবিলি বাংলাদেশ কনসার্ট’-এর মাধ্যমে এই অর্থায়ন সংগৃহীত হয়। সেই অর্থ দিয়ে সাইবার সুরক্ষায় কাজে নিয়োজিতদের পাশে থাকতে এই সম্মাননা দেয়ার জন্য এই উদ্যোগে সহযোগী ছিলো ইউএনডিপি, হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ ও ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সি।