‘বিগো লাইভ’ নামে সিঙ্গাপুরভিত্তিক অ্যাপের মাধ্যমে আপত্তিকর কনটেন্ট ছড়িয়ে দুই কোটি বাংলাদেশি ব্যবহারকারীর কাছে থেকে ২০ মাসে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে ১০৯ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের অক্টোবর থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে এই অর্থ। ‘বিগো’ এবং বিগো বাংলা লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক চীনা নাগরিক “ইয়ো জিও” এর নামে বাংলাদেশের দুটি ব্যাংকে চলেছে এই অবৈধ কারবার।
বিগো লাইভ অ্যাপের বিষয়ে ৩-৪ মাস ধরে তদন্ত করে এই কুকীর্তির আমলনামা ধরেছে সিআইডির অনুসন্ধান দল। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে হাতিয়ে নেওয়া এই টাকার মধ্যে ৭৯ কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন সময় ব্যাংক থেকে তোলা হয়েছে আর ও ১৪ কোটি টাকা।
সিআইডি সূত্র জানায়, বিগো লাইভ অ্যাপের মাধ্যমে অসামাজিক কার্যক্রমে জড়িত চীনা ব্যবসায়ীর সঙ্গে আরও কেউ জড়িত রয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অসাধু উপায়ে আয় করা টাকা পাচারের পাশাপাশি অন্য কোনও সংগঠন বা ব্যক্তির পকেটে এই টাকা ঢুকেছে কিনা, সেটাও তদন্ত করছে সিআইডির ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। পাশাপাশি বিগো কাণ্ডে লেনদেনের ২৯ কোটি ৬০ লাখ টাকাসহ বাংলাদেশের ২টি দুটি অ্যাকাউন্ট এরইমধ্যে স্থগিত করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ২৫ সেপ্টেম্বর সিআইডি সাইবার ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড অপারেশন বিভাগের তদন্ত কর্মকর্তা সোহেল রানা বাদী হয়ে এ বিষয়ে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করেছেন। এতে আসামি করা হয়— বিগো বাংলা অ্যাপ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক চীনা নাগরিক ইয়ো জিও,এস এম নাজমুল হক, আরিফ হোসেনসহ দুটি প্রতিষ্ঠানকে। প্রতিষ্ঠান দুটি হলো— বিগো বাংলা লিমিটেড ও মনসুন হোল্ডিং লিমিটেড। এছাড়া ১২ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ওই মামলায়।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, বিগো বাংলাদেশ নামের প্রতিষ্ঠানটি অর্থপাচারের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পেমেন্ট সিস্টেম অপারেটর হিসেবে অনিবন্ধিত মনসুর হোল্ডিং লিমিটেডের গেটওয়ে ব্যবহার করেছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিগো লাইভ অ্যাপ ব্যবহারকারীদের ভার্চুয়াল ডায়মন্ড ও বিনস কেনার টাকা বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মার্চেন্ট এজেন্টদের কাছ থেকে সংগ্রহে জড়িত ছিলো দেশি-বিদেশি নাগরিক। এই টাকা রাজধানীর গুলশানে এইচএসবিসি ও প্রাইম ব্যাংকের শাখায় বিগোর দুটি অ্যাকাউন্টে জমা করা হতো। পরে এই টাকা হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। এছাড়া বিগোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক চীনা নাগরিক ইয়ো জিও বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ থেকে অন্য দেশে যাবার সময়েও অবৈধ পন্থায় টাকার বিনিময়ে বিপুল সংখ্যক ডলার পাচার করেছে। এছাড়াও বিগো বাংলার কর্মকর্তা আরিফ হোসেনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে এক কোটি ২৬ লাখ টাকা। পরে সেই টাকা থেকে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইয়ো জিও-কে এক কোটি ২৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানের আরেক কর্মী নাজমুল হকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও মোবাইল ব্যাংক নম্বরে জমা থাকা ৬৩ কোটি টাকাও ইয়ো জিও-কে দেওয়া হয়।