দেশের প্রথম মেট্রোরেল উদ্বোধনের পরদিন ‘প্রযুক্তির সোপানে উৎকর্ষের শীর্ষে’ স্লোগানে শুরু হয় দশ দিনের ‘সিটি আইটি মেগা ফেয়ার ২০২২’। রাজধানীর আগারগাঁও এর আইডিবি ভবনে অবস্থিত দেশের বৃহত্তম কম্পিউটার মার্কেট বিসিএস কম্পিউটার সিটির স্থায়ী দোকানের পাশাপাশি; বাইরে বাউন্ডারি ঘেঁষে ছিলো আরো গোটা দশেক স্টল। স্টলগুলোর মধ্যে ছিলো ইন্টারনেট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান স্টারগেট কমিউনিকেশন লিমিটেড এবং কন্সালটেন্সি ফার্ম এএইচজেড অ্যাসোসিয়েটও।
এছাড়াও বাংলাদেশ টেলিফোন শিল্প সংস্থার স্টলে ছিলো দেশে তৈরি তিন মডেলের দোয়েল ল্যাপটপ নিয়ে। ছিলে আসুস, এইচপি, লেনেভো ও ডেল এর মতো বৈশ্বিক ব্র্যান্ড, ঢাউস মনিটর, গেম কন্ট্রোলারের মতো কম্পিউটার পেরিফেরালস ব্র্যান্ড লজিটেক ও শিমো সিকিউরিটি প্রযুক্তি পণ্যের পসরা। ছিলো গিগাবাইট অরাস গেমিং প্যাভিলিয়নও।
ব্যবসায়ীদের বাসনা ছিলো মেট্রোরেলের গতিতে কেনাকাটা হবে তুড়িতে। সেই ইচ্ছে পূরণে দেয়া হয়েছিলো সর্বোচ্চ ছাড়, বাড়তি অফার ও উপহার। এছাড়া দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে র্যাফেল ড্র এর মাধ্যমে আকর্ষণীয় পুরষ্কার জেতার সুযোগ। উপহারে-উপহারে বৃহস্পতিবারের সন্ধ্যা রাঙিয়েছিলো গিাগাবাইট সন্ধ্যা। দর্শনার্থী মুখরতা ব্যবসায়ীরে মধ্যে নিয়ে এসেছে আশার ঝিলিক।
এ নিয়ে ইউটেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমান রাজু বললেন, দীর্ঘ দিন ধরে বিসিএস কম্পিউটার সিটিতে মন্দাবস্থা বিরাজ করছিলো মেলায় দর্শনার্থীর উস্থিতি আমাদের নতুন আশা দেখালো। আমরা বেশ খুশি। মেলা হওয়ায় সাধারণ সময়ে যে ক্ষতি হওয়ার কথা ছিলো তা পুষিয়ে গেছে। আপেক্ষিক ভাবে সাধারণের আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতির যে শঙ্কা করছিলেন মেলা তাদেরকে নিশ্চিত রক্ষা করেছে বলে মন্তব্য করেন কমপ্লিট স্মার্ট হোম সল্যুশন দেয়া প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার।
মেলার নবম দিন শুক্রবারে সপ্তাহের অন্যদিনের চেয়ে দর্শনার্থীদের ভিড় ছিলো একটু বেশি। তবে কেনাকাটা আর মেলা ঘুরে দেখতে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের আগ্রহের কমতি নেই। বেশ বিস্তৃত ও পরিপাটি মার্কেট হওয়ায় উপচেপড়া ভিড়ের মতো বিষয়টি অনভূত হয়নি মেলায় ঘুরতে বা কেনাকাটা করতে যাওয়া দর্শনার্থীদের। তারা দারুণ খুশী। পুরোন ঢাকা থেকে মেলায় আসা শিহাব আহমেদ বললেন, অনলাইনে খবর পড়ে মেলায় এসেছিলাম। মেলার পরিবেশ আমাকে মুগ্ধ করেছে। ঘুরতে আসলেও যাওয়ার সময় একটা ওয়্যারলেস মাউস কিনে নিয়ে গেলাম।
মেলায় দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে এমএসআই এর সৌজন্যে অনলাইস গেমিং কম্পিটিশন। এছাড়াও এক্সপি-পেন এর সৌজন্যে আজ হয়েছে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা। টেন্ডা রাউটার সৌজন্যে আছে ফটোগ্রাফি কম্পিটিশন। মেলা ঘুরে দেখার পাশাপাশি অনেকেই উপভোগ করেছেন এই আয়োজন।
উত্তরা থেকে মেলায় আসা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত হাসিব রহমান বললেন, চারদিকে অনেক মার্কেট হওয়ায় বিসিএস কম্পিউটার সিটিতে আসাই হয়ে ওঠে না। এবার মেট্রো রেল হওয়ায় সহজেই চলে এলাম। আমি তো তিন-চার বছর পর এই মার্কেটে এলাম। আগে তো কম্পিউটারের জন্য এখানেই আসতে হতো। তবে মার্কেটটা যে মেলাতোও এতো পরিপাটি সত্যি ভালো লাগছে। এখন থেকে প্রয়োজনের জিনিসগুলো এখান থেকে এসেই কিনবো।
মেলায় অংশ নেয়া এমএসআই বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার আনাস খান বললেন, আমরা প্রতিটি পণ্যের সঙ্গে ছাড় দিয়েছি। বৃহস্পতিবারের গিগাবাইট সন্ধ্যায় দর্শনার্থীদের কেউই খালি হাতে যায়নি। তাদের খুশী করতে পেরেই আমরা আনন্দিত। বিক্রি-বাট্টার চেয়ে আমরা দর্শনার্থীদের মন জয় করতে পেরেছি এটাই আমাদের সফলতা।
মেলা ঘুরে দেখা গেছে, ‘সিটি আইটি মেগা ফেয়ার ২০২২’ মেলাটি সাধারণ মেলা থেকে ছিলো অনেকটাই ভিন্ন। মেলায় একটা’র সঙ্গে আরেকটা ফ্রি টাইপের অফার ছিলো না। তারপরও দর্শনার্থী ও ক্রেতারা ছিলোন চ্যানেল ও জেনুইন পণ্য খরিদের বিষয়ে সচেতন। সব মিলিয়ে নয় দিনে মেলাটি ব্র্যান্ড আইটি পণ্যে মেলায় রূপ নিয়েছে। এই ব্র্যান্ডপণ্য ‘তুড়িতে’ বিক্রি কেমন হয়েছে জানতে চাইলে স্মার্ট টেকনলোজিস বাংলাদেশের চ্যানেল সেলস ডিরেক্টর মুজাহিদ আল বেরুনী সুজন বললেন, যেভাবে মার্কেট ড্রপ করেছিলো মেলায় আমাদের পরিবেশিত এইচপি-লেনেভো তার দ্বিগুন বিক্রি হয়েছে। এই মেলা দিয়ে আমরা ব্যাক করেছি। সবার ভেতরের টেনশন দূর হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে এ বছরটা ভালো যাবে আশা করি।