সাইবার দুনিয়ায় নিরাপদ ও অন্তর্ভূক্তিমূলক ডিজিটাল বাংলাদেশের অবস্থান সুসংহত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের অধীনে প্রধানমন্ত্রীর অফিসে মাল্টিস্টেক হোল্ডার মডেলে একটি ‘স্পেশাল ডিজিটাল উইং’ এবং ‘ডিজিটাল ডিপ্লোমাসি’ প্রণয়নে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের অধীনে স্বতন্ত্র একটি সেল খোলার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরাম চেয়ারপার্সন হাসানুল হক ইনু। জলবায়ু ইস্যুর মতো জাতিসংঘের আগামী সাধারণ সভায় ইন্টারনেট, সাইবারক্রাইম বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি প্রস্তাব দেবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন জাতীয় সংসদের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি।
সোমবার বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরাম আয়োজিত ভার্চুয়াল জরুরী সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে ডিজিবাংলার এক প্রশ্নের জবাবে এমন অভিব্যক্তি তুলে ধরেন তিনি। সাইবার প্রচারণা বাড়াতে গণমাধ্যমে গণমানুষের উপযোগী প্রচারনলা চালাতে টেলিকম ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাদাতাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান সাবেক এই তথ্যমন্ত্রী।
ইন্টারনেটের বৈশ্বিক নীতি প্রণয়নে ৬০টি দেশের সাথে চুক্তি করলো যুক্তরাষ্ট্র
সভায় গত ২৮ এপ্রিল ইন্টারনেটের বৈশ্বিক নীতি প্রণয়নে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভুক্তদেশগুলোর পাশাপাশি এশিয়ার তাইওয়ান ও জাপান এবং দক্ষিণ এশিয়ার মালদ্বীপসহ মোট ৬০টি দেশকে সাথে যুক্তরাষ্ট্র যে ডিক্লারেশন প্রকাশ করেছে তা নিয়ে আলোচনা হয়। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান কী হওয়া উচিত সে বিষয়টিও উঠে আসে আলোচনায়। এক্ষেত্রে সামনে চলে আসে বাংলাদেশের ডিজিটাল কূটনীতি এবং ইন্টারনেটের সঙ্গে রাজনৈতিক স্বার্থ সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি ক্রমেই সামনে চলে আসা এবং সেখানে নিজেদের প্রস্তুতির ঘাটতির বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন আলোচকরা। আলোচনায় উঠে আসে রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যুতে প্রযুক্তির ব্যবহার ও এর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির বিষয়ে।
সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ এনজিও নেটওয়ার্ক ফর রেডিও অ্যান্ড কমিউনিকেশন (বিএনএনআরসি) এর প্রধান নির্বাহী এ এইচ এম বজলুর রহমান।
ডিক্লারেশন বিষয়ে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করে এই ঘোষণাপত্রটিকে ‘বড়দের অভিসম্পাত’ বলে আখ্যা দিয়েছেন আমাদের গ্রাম পরিচালক রেজা সেলিম। তিনি এই ঘোষণার প্রেক্ষাপট এবং ভবিষ্যত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ইত্যাদি বিষয়ে আরো নিবিঢ় পর্যালোচনায় সংশ্লিষ্টদের মনোনিবেশ করার আহ্বান জানান।
বিআইজিএফ মহাসচিব মোহাম্মাদ আব্দুল হক অনুর সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন এশিয়া প্যাসিফিক নেটওয়ার্ক ইনফরমেশন সেন্টার (এপনিক) কার্য নির্বাহী কমিটির সদস্য সুমন আহমেদ সাবির, ই-ক্যাব সভাপতি ইমদাদুল হক এবং সিটি ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের প্রধান শাফায়েত হোসাইন।
ডিক্লারেশন নিয়ে সতর্ক অবস্থানে বিআইজিএফ
সভায় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইন্টারনেটের ভবিষ্যত নিয়ে ৬০টি দেশের সঙ্গে করা চুক্তিতে সার্কভূক্ত ভুটান ছাড়া অন্যদেশগুলোর অংশগ্রহন না করার যৌক্তিকতা কিংবা সুযোগ না দেয়ার বিষয় উঠে আসে। ইন্টারনেট ব্যবস্থাপনায় যখন জাতিসংঘের অধীনে একটি সাবর্জনীন নীতি প্রণয়ন দ্বারপ্রান্তে রয়েছে তখন এই ঘোষণায় ইউরোপিয় ইউনিয়নকে যুক্তরাষ্ট্র পাশে পাওয়ায় শঙ্কা প্রকাশ করেন বক্তারা। ডেমোক্রেসি সামিটেই এটা প্রকাশ না করার বিষয়টিও তাদের মনে সন্দেহের উদ্রেক করেছে।
পরিস্থিতি আঁচ করে সার্কভুক্ত দেশগুলোকে নিয়ে আঞ্চলিক সেমিনার এবং ডিক্লারেশনের প্লান অব অ্যাকশন বিষয়ে আরো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। শঙ্কা প্রকাশ করা হয় ইন্টারনেটের সঙ্গে ‘রাজনীতি’-কে না টেনে একে এই ঘোষণা সাধারণ ব্যবহারকারীদের বিভাজন করতে পারে। তাই সরকারকে বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয় অংশীজনদের এই প্রাথমিক বৈঠকে।
এ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিআইজিএফ চেয়ারপর্সন হাসানুল হক ইনু বলেন, গুরুত্বপূর্ণ সব দেশ নিয়ে এই ঘোষণা পত্রের সূত্রপাত হয়নি। সবাইকে দাওয়াত দিয়েছে তারও প্রমাণ নেই। এর অর্থ বেছে বেছে করা হয়েছে। তাই এর উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দিহান হওয়ার অবকাশ রয়েছে। এ কারণেই অংশীজনদের অংশগ্রহণে জাতিসংঘের অধীনে অবিলম্বে সাইবার জগতের ওপর একটি সার্বজনীন বৈশ্বিক চুক্তি দরকার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি জাতিসংঘের সাধারণ সভার বক্তব্যে উত্থাপন করতে পারেন। এটা হয়তো শিগগিরই পাশ হয়ে যাবে।