সহসাই আসছে পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল ব্যাংক। এই ব্যাংকে থাকবে না কোন ব্রাঞ্চ। ঋণ দেওয়া থেকে আমানত গ্রহণ, লেনদেন সবই হবে ডিজিটালি। আর এই বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম পরিচালনা করতে এরই মধ্যে একটি নির্দেশিকা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু ফারাহ মো: নাসের জানিয়েছেন, এই নির্দেশিকা চূড়ান্ত হয়ে গেলে, ডিজিটাল ব্যাংক পরিচালনায় প্রস্তুত ও নিয়োজিতদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে লাইসেন্স দেয়া শুরু করবে।
তবে সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত হওয়ার অর্থ এই নয় যে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজন মূল্যায়ন ছাড়াই লাইসেন্স প্রদান শুরু করবে। সময় বাড়ার সাথে সাথে অনেকেই ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে কিন্তু তাদের এখন আর সিস্টেমের বাইরে থাকার সুযোগ নেই।
সূত্র মতে, এ জন্যই ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা দিতে ব্যাংক কোম্পানি আইনের অধীনে একটি নির্দেশিকা প্রণয়ন করা হচ্ছে এবং আইনের সমস্ত নির্দেশাবলী মেনে চলা একটি ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য অপরিহার্য হবে। উদাহরণস্বরূপ, একটি ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য পরিশোধিত মূলধনের প্রয়োজন হবে ৫০০ কোটি টাকা, কারণ এটি একটি প্রচলিত ব্যাংকের জন্য প্রয়োজন। এছাড়াও, ডিজিটাল ব্যাঙ্কগুলির জন্য অন্যান্য মূলধন-সম্পর্কিত প্রয়োজনীয়তাগুলিও প্রচলিত ব্যাঙ্কগুলির মতোই হবে৷
বাংলাদেশ ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা বলেছেন, সরকারের ইচ্ছা এবং সমকক্ষ দেশগুলিতে অনুরূপ পদক্ষেপের কারণে এই নির্দেশিকা প্রণয়ন করা হচ্ছে।
বস্তুত, ডিজিটাল ব্যাঙ্ক, নিওব্যাঙ্ক নামেও পরিচিত, একটি ইন্টারনেট-অনলি ব্যাঙ্ক বা ভার্চুয়াল ব্যাঙ্ক, হল এক ধরনের সরাসরি ব্যাঙ্ক যা প্রথাগত শারীরিক শাখা নেটওয়ার্ক ছাড়াই একচেটিয়া অনলাইনে কাজ করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গৃহীত ধারণা অনুযায়ী, ডিজিটাল ব্যাংকগুলোর কোনো শাখাভিত্তিক সেবা থাকবে না। পরিবর্তে, ব্যাংকগুলি অনলাইনে ঋণ প্রদান এবং আমানত সংগ্রহ সহ পরিষেবা দিয়ে থাকে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, এই নির্দেশিকা ডিজিটাল ব্যাংকের গ্রাহকদের যেকোন জরুরী পরিস্থিতিতে প্রকৃত মুদ্রা হাতে পেতে সক্ষম করে তোলার একটি উপায় তৈরি করতে কাজ করছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, অন্যান্য অনেক দেশও হয় ডিজিটাল ব্যাংক ধারণাকে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা করছে অথবা ডিজিটাল ব্যাংক হিসেবে কাজ করার জন্য ইতিমধ্যে একটি নতুন ব্যাংককে লাইসেন্স দিয়েছে। এই যেমন দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে, ডিজিটাল ব্যাংকিং লাইসেন্সের জন্য পাকিস্তানে নির্দিষ্ট সংস্থার কাছ থেকে আবেদন করার নিয়ম করেছে। জিটাল ব্যাংক লাইসেন্স প্রদানের জন্য একটি নিয়ন্ত্রক কাঠামো চূড়ান্ত করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অন্য অনেক দেশ ডিজিটাল ব্যাংক হিসেবে কাজ করার জন্য একাধিক লাইসেন্স দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, নতুন প্রজন্মের আর্থিক চাহিদা পূরণে ২০২০ সালে ‘ডিজিটাল ব্যাংক’ চালুর উদ্যোগ নেয় বেসরকারি খাতের ব্যাংক এশিয়া। এজন্য ডিজিটাল ব্যাংক চালুর অনুমতি চেয়ে ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আবেদনও করে ব্যাংকটি। ওই আবেদনে বলা হয় এই ডিজিটাল ব্যাংকটি হবে ব্যাংক এশিয়ার একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের ৫১ শতাংশ শেয়ারের অংশীদার হবে তারা। বাকি শেয়ারের অংশীদার হবে বিদেশি প্রযুক্তিবিদ, প্রতিষ্ঠান ও লেনদেন প্রতিষ্ঠান।
যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগ অনুযায়ী, প্রচলিত ব্যাংকিং কার্যক্রমের পাশাপাশি চালু থাকা ৬১টি ব্যাংকের প্রায় সব ব্যাংকই ডিজিটাল ব্যাংকিং ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তবে নির্দিষ্ট কাঠামোতে এখনো দেশে কোনো একক ডিজিটাল ব্যাংক নেই। পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল লেনদেন পরিচালনার কাজটা পুরোটাই করছে এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলো।