এবার তথ্যপ্রযুক্তি খাতে গর্জে উঠতে শুরু করেছে বাংলা টাইগারেরা। সেরা মানের ডিজিটাল ডিভাইস উৎপাদন করে বৈশ্বিক টেক ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে ‘প্রাণসঞ্চার’ করতে শুরু করেছে ভাইব্র্যান্ট। নকিয়া, ম্যাক্সিমাসসহ নামী ব্র্যান্ডের ফোন উৎপাদনের মধ্য দিয়ে হয়ে উঠছে বাংলার ফক্সকন। বাংলাদেশের কালিয়াকৈর বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্কের ভাইব্রেন্ট উৎপাদিত মোবাইল ফোনের ফল্ট রেট দশমিক ০৩ শতাংশের কম। ইতোমধ্যেই পেয়েছে আইএসও সনদ।
সবমিলিয়ে দেশের মাটিতেই জেমসবন্ড ফ্যান খ্যাত ফ্লাগশিপ স্মার্টফোন নকিয়া জি ১০ উৎপাদনের সক্ষমতা দেখিয়ে এবারের লন্ডনের বিনিয়োগ রোড শো-তে কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলো ভাইব্র্রান্ট।
এরইমধ্যে বাংলাদেশের হাইটেক পার্কের প্রথম বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ভাইব্রেন্টের কারখানায় তৈরি ফোনটি জায়গা করে নিচ্ছে লন্ডন জাদুঘরে।
স্বাধীনতা সুবর্ণ জয়ন্তীতে বাংলাদেশ থেকেই ফোনটির আনুষ্ঠানিক মোড়ক উন্মোচন হবে বলে ডিজিবাংলাকে একান্ত সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন ভাইব্রেন্ট সফট ইউকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মাদ মারবিন। আলাপকালে নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পেছনের শক্তি হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন তিনি।
জানিয়েছেন, কেবল নামী ব্র্যান্ডের তকমা দিয়েই নয়, বিশ্বমান দিয়েই ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে ভাইব্রেন্ট। হতে চাইছে যারা দেশী ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠায় প্রাণন্ত চেষ্টা করছেন তাদের স্বপ্ন পূরণে।
মোবাইলের পাশাপাশি যে কোনো ডিজিটাল ডিভাইসই তৈরি করতে প্রস্তুত এখন কারখানাটি। হয়তো অচিরেই ইউরোপের কোনো দেশের জন্য আইওেটি ডিভাইস তৈরি শুরু হবে কারখানাটিতে।
একক ব্র্যান্ডের পাশাপাশি কো-ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমেও কাজ করছে ভাইব্রেন্ট। দেশের সীমানা পেরিয়ে এখানে প্রস্তুতকৃত ডিজিটাল পণ্য বিশ্বময় রপ্তানির স্বপ্ন বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের ফক্সকন হতেই চলছে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা।
২০১৫ সালে ই-ক্যাবের আয়োজনে লন্ডনে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ই-কমার্স ফেয়ারে বাংলাদেশে কারখানা স্থাপনে হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তি করে ভাইব্রেন্ট সফটওয়্যার লিমিটেড ইউকে। এরপর বাংলাদেশেও যৌথমূলধনী কোম্পানি তালিকভুক্ত হয় কোম্পানিটি। বিনিয়োগ নিয়ে ব্রিটেন থেকে ঢাকায় ফিরে আসেন ভাইব্র্যান্ট ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মাদ মারবিন। তিনি জানালেন, দেশের প্রকৌশলীরাই গড়ে তুলেছে ভাইব্রেন্ট কারখানা। এখন পরিচালনাও করছে তারাই। মোবাইল ফোন উৎপাদনে মুন্সিয়ানা দেখানোর পর শিগগিরি ইলেকট্রিক কার থেকে শুরু করে বিভিন্ন আইওটি ডিভাইস তৈরিরও প্রস্তুতি চলছে। এরই মধ্যে ভাইব্রেন্ট কারখানায় ডিজিটাল ডিভাইস তৈরির আলোচনা এগিয়ে নিয়েছে আরো চারটি ব্র্যান্ড।
পদ্মা-চন্দনা বিধৌত রাজা সূর্যসেনের রাজবাড়ীর সন্তান মোহাম্মদ মারবীন। ঢাকা গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল এরপর ঢাকা কলেজ। অতঃপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে স্নাতক শেষে বৃত্তি নিয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য পাড়ি জমান ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অফ বেডফোর্ডশায়ারে। সেখান থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে ইউরোপ-আমেরিকায় গোটা দশেক বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানে টেক এক্সপার্ট হিসেবে কাজ করেছেন ভাইব্রেন্ট বাংলাদেশ ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মারবীন। কিন্তু দেশের টান অনুভূব করেছেন সবসময়।
সেই টানেই মাতৃভূমিতে ফক্সকনের মতো মেড ইন বাংলাদেশ পণ্য উৎপাদনের হাব গড়ে তুলতে লন্ডনে ই-কমার্স ফেয়ারে চুক্তি করেন হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। গাজীপুরে কারখানা স্থাপনে চুক্তি করেন দেশীয় প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন গ্রুপের সঙ্গে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠি থেকে সহধর্মিনী আঁখি খানের অনুপ্রেরণায় দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে ২০১৭ সালে জমি বুঝে নিয়ে শুরু হয় কারখানা স্থাপনের কাজ। এখন সেই কারখানাটিকেই নিজেদের ডিজিটাল পণ্য উৎপাদনে বেছে নিতে শুরু করেছে নকিয়ার মতো বিশ্বনন্দিত ব্র্যান্ডগুলো।