সংগঠন গঠনের দীর্ঘদিন পর প্রথমবারের মতো সংশোধিত গঠনতন্ত্রে বর্ধিত পরিসরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে দেশের ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবির কার্যকরী কমিটির ২০১৯-২১ মেয়াদের নির্বাচন নির্বাচন। এবারের নির্বাচনে সাধারণ এবং সহযোগী দুই ক্যাটাগরিতে ১৩টি পদের বিপরীতে ২৫ প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। আগামী ২৬ অক্টোবর রাজধানীর ইমানুয়েলস (বর্তমানে ঢাকা নিউ হল) কনভেনশন হলে (বাড়ি নং -০৮, রোড নং- ১৩৫, গুলশান-০১, ঢাকা-১২১২) নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন ৪৪১ জন ভোটার। সাধারণ ক্যাটাগরিতে দুটি প্যানেলে ৯ পদের বিপরীতে ১৭ এবং সহযোগী ক্যাটাগরিতে চার পদের বিপরীতে দুটি প্যানেলে ৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সাধারণ ক্যাটাগরিতে ভোটার ১১৪ হলেও সহযোগী ক্যাটাগরিতে ৩১৭ জন।
এর আগে গত ৬ জুলাই নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও ভোটার তালিকায় ত্রুটি থাকার অভিযোগে নির্বাচন স্থগিত করা হয়। ভোটার তালিকা সংশোধনে যাচাই-বাছাই শেষে সাধারণ ক্যাটাগরিতে দুই ভোটার বাড়লেও সহযোগী ক্যাটাগরিতে ১২ জন ভোটাধিকার হারিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে এবারের নির্বাচনকে খুবই গুরুত্ব পূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করছেন ভোটাররা। তাদের মতে, এই নির্বাচনে যোগ্য নেতৃত্ব খুঁজে নেবেন তারা। ব্যালটে দীর্ঘ দিনের পুঞ্জিভূত সমস্যা সমাধানে রায় দেবেন।
সিটি অনলাইন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নবীন খান বলেন, এবারের নির্বাচনটি আইএসপি পরিবারের জন্য মাইলফলক। কেননা আমরা এখন প্রতিদিনিই বিভিন্ন রকমের ব্যবসায় প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হই। তাই আগামীতে যারা সংগঠনে বেশি সময় দেবেন, সরকারের সঙ্গে দরকষাকষির মাধ্যমে সামগ্রিক স্বার্থ আদায়ে সক্ষম তাদেরকেই আমরা নেতৃত্বে বসাতে চাই। কেননা, আমাদের ব্যবসায়টা এখন চ্যালেঞ্জের মুখে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ক্যাটাগরি লাইসেন্সধারীদেরও মূল ধারায় নিয়ে আসা হোক। দুই এনটিটিএন-এর কাছ থেকে জিম্মিদশার অবসান ঘটবে। পাড়া-মহল্লার মাস্তানী থেকে পরিত্রাণ দেবে। তাই প্রত্যাশা করি, কুটির শিল্প হিসেবে নয়; আইএসপিএবি গড়ে উঠুক এর কারিগরি সক্ষমতায়। এ কারণে প্রত্যেক ভোটারই এবার ভোট দিতে গিয়ে একটু সতর্ক থাকবে। চিন্তা ও বিবেচনা করেই তারা ভোট দেবেন।
ফাস্ট অ্যান্ড ফাস্ট আইটি লিমিটেডের পরিচালক রাজীব শাহরিয়ার রুবেন্স বলেন, অনেক দিন পর আইএসপিএবি নির্বাচন হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য একটা বড় পাওয়া। নিয়মিত নির্বাচন না হওয়ায় সংগঠনে সদস্যদের ভূমিকাও অনেকটা গৌন হয়ে উঠেছে। এই ব্যবসায় টিকে থাকাটাই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই চ্যালেঞ্জটা মোকাবেলা করতেই এবার ভোট প্রদানে আমরা সতর্ক থাকবো। প্রত্যাশা করবো, নতুন নেতৃত্ব অবশ্যই আমাদের কথা শুনবেন। চট্টগ্রামে যেন আইএসপিএবি’র অফিস স্থাপন করে এখান থেকেই বিটিআরসি’র সেবা পাওয়া যায়। ঢাকায় দৌঁড়াতে না হয়।
অনিক কম্পিউটার অ্যান্ড নেটওয়ার্কিং এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াহিদ মুরাদ বলেন, প্রত্যাশা করছি, অভিজ্ঞতা ও নতুনদের প্রাণ-প্রাচুর্যে ভরপুর হবে নতুন নেতৃত্ব। এবারে নির্বাচনে উভয় দল থেকেই যেন ৫০:৫০ করে নেতৃত্বে আসে। তাহলে অন্তত নিয়মিত ভোট না হওয়ার যে ট্রাজেডি আইএসপি-পরিবারে দেখা দিয়েছে তা থাকবে না। নিয়মিত ভোট হবে। ভোটার বাড়বে। আর যারা নেতৃত্বে যাবেন তারা যেন পুঞ্জিভূত সমস্যাগুলো একে একে সমাধান করেন। ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৫ শতাংশ হওয়ার বিড়ম্বনা থেকে সদস্যদের বাঁচাবে।
অগ্নি সিস্টেম লিমিটেডের পরিচালক জিয়া শামসি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে যেগ্য প্রার্থীরা নেতৃত্বের জন্য নির্বাচিত হবেন। তাই প্যানেলের চেয়ে প্রার্থীর যোগ্যতাকেই আমরা বেশি প্রাধান্য দেবে। যে প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়ে দীর্ঘ দিনের ভুল ভ্রান্তি কাভার আপ করতে পারবেন তাদেরকেই ভোট দেবো। আশাকরি ভোটে নির্বাচিত নেতৃত্ব এনটিটিএন এর বাহাদুরি ও ভ্যাট ইস্যুর সমাধান করতে আন্তরিক হবেন। সর্বোপরি ব্যবসায়কে প্রতিযোগিতামূলক করতে ঢালাও লাইসেন্স দেয়ার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবেন। নতুন নেতৃত্বের কাছে প্রত্যাশা থাকবে, সংগঠনকে একটি কাঠামোর ওপর দাঁড় করাবেন। সাংগঠনিক কাঠামোকে শক্তিশালী করবেন। বেসিস এর মতো উচ্চতায় নিয়ে যেতে সক্ষম হবেন। এখন সংগঠনের ওয়েবসাইটে যেমন ভোটের কোনো আলামতই নেই তা থাকবে না। আগামীতে নির্বাচনে প্রার্থী পরিচিতি সভার মতো আনন্দমুখর সময়ের ছবি সেখানে শোভা পাবে।
ইনফো লিংক লিমিটেডের পরিচালক সাফিক আহমেদ বলেন, এবারের নির্বাচনে যে দুইটি প্যানেল অংশ নিচ্ছে তাদের একটি প্যানেলে ৮ জন প্রার্থী রয়েছে। তাই আমরা চাইলেও পূর্ণ প্যানেলে ভোট দিতে পারছি না। আশা করি, একবার ব্যর্থ হলেও এবার শান্তিপূর্ণ ভাবে হবে ভোট হবে। আর নতুন নেতৃত্বের জন্য কমিটিকে অ্যাক্টিভ করাটা চ্যালেঞ্জের হবে। প্রত্যাশা থাকবে- পুরোনো ধ্যান ধারণা থেকে বেরিয়ে দেশজুড়ে যে ১৭০০ লাইসেন্সধারী আইএসপি প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাদেরকেও সদস্য করা হবে এবং পাড়া মহল্লায় ৫ হাজার অবৈধ আইএসপি ব্যবসায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে। আইএসপিএবি হবে সবার জন্য সমান সুবিধার স্থল। ছোট-বড়-মাঝারি সকলকেই সমান ভাবে মূল্যায়ণ করবে এমন নেতৃত্ব নির্বাচনেই এবার আমরা ভোট দিবো।