রাজধানীর রামপুরা থেকে মেরাদিয়ার দিকে বয়ে যাওয়া নড়াই নদী এখন নেই। বালি-আর নাগরিক বসত তৈরিতে ভরাট হয়ে নড়াই খালটি এখন শরতের কাশফুলে মতোয়ারা। বিকেল হলেই নগরক্লান্ত মানুষ বেড়াতে যান একটু বিনোদনের জন্য। সেখানেই বিজয় ৫২তম বছরে, জলে-স্থলে- অন্তরীক্ষে প্রযুক্তিতে নিজেদের সক্ষমতা দেখালো একদল রোবটিয়ান। নিজেদের তৈরী রেসকিউ রোবট, রোভার ও ড্রোন নিয়ে তাক লাগানো ‘বিজয়ের রোবোচক্র’ প্রদর্শনীতে বিজয় দিবসকে উদযাপন করলো ভিন্ন মাত্রিকতায়।
শরতের আকাশে ওড়ালো লাল-সবুজের বিজয় কেতন। গোল দিলো রোবো সকার দিয়ে। পিচঢালা পথে যান্ত্রিক গাড়ির পাশে রেসকিউ রোভার ছুটলো উদ্ধার কাজে। পানির ময়লা পরিষ্কার করে দেখালো সদ্য তৈরি রিভার ক্লিনিং হোভার রোবো ভেসেল দিয়ে। তারুণ্যের এই বিজয়ে মৃতপ্রায় নড়াই খাল যেনো খিল-খিল হাসিতে পড়ন্ত বিকেলে গাইলো বিজয়ের কলতান।
শনিবার বিকেলে রাজধানীর আফতাব নগরের ঝিলপাড়ে এই আয়োজন করে রোবো উদ্ভাবন প্রদর্শনীতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ও তিনবার স্বর্ণজয়ী টিম এটলাস। দলনেতা সানি জুবায়ের নেতৃত্বে প্রদর্শনীতে নিজেদের তৈরি সকার রোবট দিয়ে ফুটবল খেলায় অংশ নেয়া শিশুসহ সাধারণ দর্শনার্থীরাও। কখনো কখনো জাতীয় পতাকাবাহী রোভার যখন রাস্তার পিচ কামড়ে এগিয়ে যাচ্ছিলো; আকাশে চক্কর দিচ্ছিলো আরেকটি ড্রোন- তখন উপস্থিতির কণ্ঠে ধ্বনিত হয় ‘জয় বাংলা’। এ যেনো নতুন যুদ্ধ জয়ের আনন্দ।
প্রদর্শনীতে একটি টেবিলের ওপর থরে থরে সাজানো প্রায় এক ডজন ভিন্ন ভিন্ন রোবট। প্রবেশ পথেই আগত দর্শনার্থীদের অভ্যর্থনা জানাচ্ছে হলিউড মুভি ‘ওয়াল ই’ এর আদলে তৈরী দুইটি রোবট। এর একটি ব্যবহার করা হয়েছিল দেশের প্রথম সাইবার থ্রিলার মুভি ‘অন্তর্জাল’-এর প্রচারণায়। অন্য হিউমানয়েড রোবটরি তৈরি করেছে অর্ধশতাধিক সদস্যের টিম এটলাসের সর্বকনিষ্ঠ ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী নাজিফ আহিয়ান।
পড়ন্ত বিকেলে জাতীয় সঙ্গীতের সুরে পতাকা উড়িয়ে নিজেদের তৈরি ড্রোন আবারো দেখিয়ে দিলো বাঙালী ‘দাবায়ে রাখা যাবে না’। এই আয়োজনে উপস্থিত ছিলো টিম এটলাসের উইমেন ইউংস- কোড ব্ল্যাক টিম লিডার জান্নাতুল ফেরদৌস। সেখানে বিজয় দিবসে নারীদেরও প্রযুক্তি অজ্ঞতা থেকে মুক্তি পাবার অঙ্গিকার করলেন তিনি।
প্রদর্শনীতে ইজহার হোসেন ইফতি ওড়ালো ড্রোন। সাকিবুল আহসান তেহাম পরিচালনা করলো সকার রোবট। রোভার পাইলটের দায়িত্ব পালন করে ফাহিম শাহরিয়ার এরিখ। ওয়াটার ক্লিনিং রোবট পরিচালনা করে দলনেতা সানি জুবায়ের। আগামীতে আরও বড় পরিসরে পুরোদেশে এ ধরনের আয়োজন করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন তিনি।