তিন বছর ধরে ৩০টি ইউনিয়নে ছিলো ‘কমিউনিটি ইনফরমেশন সেন্টার’ নামে। অভিজ্ঞতার সুফল হিসেবে ২০১০ সালের ১১ নভেম্বর ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার নামে আত্মপ্রকাশ। শুরুটা হয়েছিলো ভোলার চর-কুকরি মুকরি থেকে। ওই দিন দেশের সাড়ে ৪ হাজার ইউনিয়নে একযোগে ‘ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্র’ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন এই সেন্টারগুলো পরিচালনা করতো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন প্রকল্প।
জনগনের ক্ষমতায়নে অবাধ তথ্য প্রবাহের এই ডিজিটাল উদ্যোগটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে অল্পদিনেই। এটুআই আত্মপ্রকাশ করে অ্যাসপায়ার টু ইনোভেশন কর্মসূচি নামে। আইসিটি বিভাগের অধীনে নিত্য উদ্ভাবনায় টেকসই একটি উদ্যোক্তা মডেল হয়ে ওঠে ডিজিটাল সেন্টারগুলো।
ধীরে ধীরে ইউনিয়ন থেকে বিস্তার ঘটে পৌরসভায়। কেন্দ্রে ঘাঁটি স্থাপনের পর; যুগপূর্তীতে ডিজিটাল সেন্টার ধারণা যুক্ত হয়েছে রফতানির তালিকায়। ছড়িয়ে পড়ছে ইউনিয়ন থেকে গ্রামে গ্রামে; ডিজিটাল বাংলাদেশের বাতিঘর হয়ে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্তী জুনাইদ আহমেদ পলক বললেন, “ডিজিটাল সেন্টারগুলোকে আরো বেশি সাশ্রয়ী করা, টেকসই করা এবং উদ্ভাবনী নতুন নতুন সেবা দিয়ে মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো তাদের ঘরে ঘরে হাতে হাতে পৌঁছে দেয়াই আমাদের স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্য। দেশের ৮৭ হাজার গ্রামে একটি করে ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করা হবে, যাতে প্রতি ৫ কিলোমিটারের পরিবর্তে প্রতি ২ কিলোমিটারের মধ্যে একটি করে ডিজিটাল সেন্টার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জনগণের হাতের নাগালে সকল সেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়। ইন-লাইনের সেবা অনলাইনে, শহরের সেবা গ্রামে এবং দেশের সেবা বিদেশে নিয়ে যেতে কাজ করেছে ডিজিটাল সেন্টার। নারী-পুরুষের মধ্যে অংশীদারিত্বমূলক পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে প্রতিটি ডিজিটাল সেন্টারকে গ্রামীণ অর্থনৈতিক হাব হিসেবে প্রতিষ্ঠায় উদ্যোক্তারা যেন কাজ করতে পারেন, সেজন্য আমাদের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।”
অংশীজনদের নিয়ে শুক্রবার কেক কেটে যুগপূর্তী উৎসব পালনের আগে এমনটাই বলছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। বক্তব্যে ইউডিসি গুলোকে গ্রামীণ অর্থনীতির হাব হিসেবে গড়ে তোলার পারিকল্পনাও তুলে ধরেন প্রতিমন্ত্রী। এর মাধ্যমে ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তারাই জব সিকার না হয়ে জব ক্রিয়েটর হবে বলে মনে করেন পলক।
অংশীজনদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন, বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সমিতির সভাপতি মো. বেলায়েত হোসেন গাজী বিল্লাল; মহাদেবপুর ইউডিসি’র সৈয়দ এনায়েত করিম টিটু; সাভারের শিমুলিয়া ইউডিসি’র নারী উদ্যোক্তা নাসরিন সুলাতানা ঐশী। অনলেইনেও সংযুক্ত ছিলেন অনেকেই।
প্রযুক্তি খাতের প্রতিনিধিত্বকারীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস) এর সভাপতি ইঞ্জি. সুব্রত সরকার এবং ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) প্রেসিডেন্ট জনাব শমী কায়সার।
ইউডিসি নিয়ে নিজেদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন গণমাধ্যমকর্মীরাও। বক্তব্য রাখেন সময় টিভির স্টাফ রিপোর্টার শুভ খান, দৈনিক সমকাল আইসিটি পেজ ইনচার্জ হাসান জাকির এবং এনটিভি’র বিশেষ প্রতিনিধি মুকলিমূল আহসান অপু।
গণমাধ্যম কর্মীদের মূল্যায়ন শুনে নিউইউর্ক থেকে সংবাদ সম্মেলনে যোগ দিয়ে এটুআই নীতি উপদেষ্টা আনীর চৌধুরী তুলে ধরেন ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের পরবর্তী গন্তব্য।
তিনি বলেন, গ্রাম এবং প্রবাসী ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন, সকল উপজেলা ও বিদেশের মাটিতেও কুটির ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ডিজিটাল সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হবে। আগামী তিন বছরের মধ্যে ১৭০টি জাতিসংঘ সদস্য দেশের ৫০টি দেশে রপ্তানি হবে বাংলাদেশের ডিজিটাল সেন্টার ধারণা। পাশাপাশি দেশের ৭৯ লাখ ক্ষুদ্র ও কুটির উদ্যোক্তাকে ডিবিএন এর আওতায় আনা হবে।
ডিজিটাল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (ডিজিটাল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস স্পেন) হেড অফ ডিজিটাল সেন্টার তহুরুল হাসানের সঞ্চালনায় সভাপতির বক্তব্যে ডিজিটাল সেন্টারের সক্ষমতার চিত্র তুলে ধরেন এটুআই প্রকল্প পরিচালক দেওয়ান মুহাম্মাদ হুমায়ুন কবীর।
তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এবং প্রবাসে বর্তমানে ৮ হাজার ৮০৫টি ডিজিটাল সেন্টার রয়েছে। এসব সেন্টারের ১৬ হাজারের বেশি উদ্যোক্তা রয়েছেন। প্রতিমাসে গড়ে ৭০ লাখেরও অধিক সেবা দিচ্ছে। সেবার তালিকায় সব মিলিযে তিন শতাধিক সরকারি-বেসরকারি সেবা রয়েছে। প্রবাসে ডিজিটাল সেন্টারের সংখ্যা ১৫টি।)
ইউএনডিপি’র সহায়তায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আওতায় বাস্তবায়ন হচ্ছে ‘এটুআই’ কর্মসূচি। এটু্আইকে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থায় রূপ দিতে ইতোমধ্যে আইনের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে সরকার।