আইটি ও আইটিইএস খাতকে কর ও ভ্যাটমুক্ত রাখাতে বাজেট পুনর্বিবেচনার বিকল্প নেই বলে মনে করেন এই খাতের ব্যবসায়ীরা। ইন্টারনেট, হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার প্রযুক্তি খাতের রসদ। ফলে ইন্টারনেটকে আইটিইএস এর অন্তর্ভূক্তি, ল্যাপটপ, প্রিন্টার ও টোনারের ওপর ১৫ শতাংশ হার প্রত্যাহার এবং ২০৩০ সাল পর্যন্ত আইটিইএস-সব ধরনের কর থেকে মুক্ত রাখতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তাফা কামালের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন তারা। তারা বলছেন, বাজেট নিয়ে বলতে গেলে সংগঠনগুলোর কোনো প্রস্তবনাই বাস্তবায়িত হয়নি। তবে ডিজিটাল কারেন্সি ও ব্যাংকিং আশা জাগিয়েছে উল্লেখ করে নেতারা স্মার্টবাংলাদেশ গড়তে তাদের প্রস্তাবনাগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়ে বাজেটে পুনর্বিবেচনার আবেদন জানিয়েছেন প্রযুক্তিখাতের ব্যবসায়ী।
মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া অডিটরিয়ামে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়।
বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের সভাপতি সুবত্র সকারের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে বেসিস ভাইস প্রেসিডেন্ট আবু দাউদ খান, আইএসপিএবি সভাপতি ইমদাদুল হক, বাক্কো সভাপতি ওয়াহিদ শরীফ, ই-ক্যাব সভাপতি শমী কায়সার এবং বিসিএস পরিচালক জহিরুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন।
এদের মধ্যে ডলারেরে দর বৃদ্ধিতে জাহাজীকরণ ভাড়া বৃদ্ধির সময়ে ল্যাপটপ, প্রিন্টার ও টোনারের ওপর ১৫ শতাংশ হার প্রত্যাহারের মাধ্যমে তরুণ জনশক্তির শিক্ষা-বাণিজ্যের পথকে উন্মুক্ত করে কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে প্রত্যক্ষভাবে সুবিধা দিয়ে পরোক্ষ আয় বৃদ্ধির পরামর্শ দেন স্মার্ট টেকনোলজিস এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিসিএস পরিচালক জহিরুল ইসলাম।
বেসিস ভাইস প্রেসিডেন্ট আবু দাউদ খান বলেন, করোনার অভিঘাত কাটাতে মাঝারি উদ্যোক্তা এবং প্রযুক্তি দক্ষজনশক্তি গড়ে তুলতে ইন্ডাস্ট্রি ইন্টারর্নশিপে সরকার বিশেষ প্রণোদনা দিলে দীর্ঘ মেয়াদে এর সুফল মিলবে। স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের স্বার্থেই আমরা যে প্রস্তবনাগুলো দিয়েছি তা সংশোধিত বাজেটে পুনর্বিবেচনা করা হবে।
বাজেটে ট্রেনিং ইনস্টিটিউট গুলোকে ২৭ শতাংশ ট্যাক্স ভ্যাটের অধীনে আনার বিষয়ে তুলে ধরে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বাক্কো সভাপতি ওয়াহিদ শরীফ বলেন, এটা স্কিলসেট ডেভলপমেন্টে অন্তরায়। এটা কোয়ালিটি ট্রেনিংয়ে বাধা সৃষ্টি করবে। এ কারণে স্কিল ডেভলপমেন্টে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সমান ট্যাক্স-ভ্যাট থাকা উচিত। উদ্যোক্তা সংস্কৃতি উন্নয়নে এআইটি’র মতো ৫ শতাংশ ভ্যাটও উঠিয়ে নেয়া উচিত। এটা করা না হলে আউটসোর্সিং এর বিকাশ ঘটবে না। এটা ইন্ডাস্ট্রি গ্রোথ বাধাগ্রস্ত করবে।
বাজেট সম্মেলনে ই-ক্যাব সভাপতি শমী কায়সার বলেন, করোনায় ই-কমার্স ৭০-৮০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আমরা সবগুলো সংগঠন একসঙ্গে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে কাজ করায় তখন জীবন ও জীবিকা একইসঙ্গে রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু বাজেটে ইন্টারনেট সেবা এখনো আইটিইএস এর অন্তর্ভূক্ত নয়। ২০১৬ সাল পর্যন্ত ই-কমার্স এর অন্তর্ভূক্ত ছিলো। ফলে রাজস্ববোর্ডের সঙ্গে বৈঠক করে আমরা ই-কমার্স উদ্যোক্তার বাড়িভাড়া, ডেলিভারি ও শর্টিং সেন্টারের ওপর আরোপিত ভ্যাট মুক্তির আবেদন জানানো হয়। আগামী বছরের বাজেট পর্যন্ত এটা নতুন করে না বাড়িয়ে ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিসের ওপর ৫ শতাংশই বলবৎ রয়েছে। কিন্তু ইন্টারনেট সেবায় ১০ শতাংশএবং হার্ডওয়্যারের ওপর ভ্যাট আরোপ করা হচ্ছে তখন কস্টঅব ড্যুয়িং বেড়ে যাচ্ছে। এ কারণে রাজস্ব বোর্ড এর কাছে আমরা ই-কমার্স খাতকে আলাদা খাত হিসেবে সংযুক্ত করার জন্য বিনীত আবেদন করা হলে তা আগামী বছর পূনর্বিবেচনার কথা জানানো হয়েছে। আমরা আশা করবো এসব বিবেচনায় নিয়ে বাজেট পুনর্বিবেচনা করা হবে।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা সত্বেও বাজেটে ইন্টোরনেট সেবাকে এর অন্তর্ভূক্ত না করে বরং আরো চাপ সৃষ্টি করায় বিস্ময় প্রকাশ করে আইএসপিএবি সভাপতি ইমদাদুল হক বলেন, সরকারে রাজস্ব বাড়াতে অবশ্যই আমরা ট্যাক্স দিবো। তবে সে জন্য সময় দিতে হবে। যাদের ১০ শতাংশ লাভই হয় না তাদের ওপর যদি আগেই ১০ শতায় আগাম আয়কর কেটে নেয়া হয় তাহলে ব্যবসাই তো দাঁড়াবে। ঝরে পড়বে।
তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্স বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইন্টারনেট সেবাকে আইটিইএস এর অন্তর্ভূক্ত করার কথা প্রধানমন্ত্রী স্বাক্ষরিত মিটিং মিনিটসে থাকলেও বাজেটে তার প্রতিফলন নেই। বরং অতিরিক্ত ১০ শতাংশ ইআ্িটি আরোপ করা হয়েছে। ফাইবার অপটিকে অরিরিক্ত ১০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক যুক্ত হয়েছে। ডায়াল আপ মডেম ব্যবহৃত না হলেও তাতে শুল্ক মুক্তি সুবিধা থাকলেও প্রতিস্থাপিত অনু’র ওপর অতিরিক্ত শুল্ক ৩৮ শতাংশ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে উন্নত বা স্মার্ট বাংলাদেশ হতে একটি দেশের ৫৪ শতাংশের বেশি ব্রডব্যান্ড সংযোগের অধীনে আনার যে মান বৈশ্বিক ভাবে স্বীকৃত তার ধারে কাছেও যাওয়া সম্ভব হবে না। দেশে এখন ব্রডব্যান্ড ব্যবহারের হার মাত্র ৭ শতাংশ।
বক্তব্য শেষে যৌথভাবে বাজেট প্রস্তাবনা পেশ করেন বিসিএস সভাপতি সুব্রত সরকার।