খুব অল্প খরচে সারাদেশে ৪ লক্ষ জিপন সংযোগ দেওয়া সম্ভব
গিগাবিট প্যাসিভ অপটিক্যাল নেটওয়ার্ক বা জিপনের মাধ্যমে সারাদেশে প্রায় ৪ লক্ষ উচ্চগতির সংযোগ খুব অল্প খরচে দেওয়া সম্ভব। জিবন কানেক্টিভিটির মাধ্যমে সুলভ মূল্যে সারাদেশে ৪ লক্ষ সংযোগ দেওয়া সম্ভব হবে। এই জিবন কানেক্টিভিটি হবে বিটিসিএলের লাইফলাইন, এর মাধ্যমে আমরা বিটিসিএলকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে পারবো। সাথে সাথে অ্যাক্টিভ নেটওয়ার্ক শেয়ারিং এর মাধ্যমে টেলিটককে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা সম্ভব।
মেহেরপুরে উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ সক্ষমতা সেবা GBon এর শুভ উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
তবে এর আগে মেহেরপুর পোস্ট অফিস পরিদর্শন করে ক্ষুব্ধ হয়েছেন তিনি। পোস্টের সকল অভিযোগ জানতে ৩৩৩-তে ডাকঘরকেও সংযুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী।
মেহেরপুর পোস্ট অফিস পরিদর্শনে একটি নোটিশ বোর্ড দেখে কর্মকর্তাদের প্রতি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, পোস্টের জায়গা ব্যবহার করে উদ্যোক্তা বাপ্পি (শাহিনুর রহমান) ব্যক্তিগত ব্যবসা করছেন। পোস্টার টানিয়ে ‘দারাজ’ এর পণ্য ডেলিভারি দেন তিনি। কিন্তু পোস্ট অফিস কর্মকর্তারা তা কেন দেখছেন না!
কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথপোকথনের মাধ্যমেই এভাবে প্রত্যেক মাসে শুধু খুলনা অঞ্চলে ডাক বিভাগের ২০ লাখ টাকা ক্ষতি হচ্ছে বলে হিসেব কষে দেন জুনাইদ আহমেদ পলক।
কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, খুলনা অঞ্চলে ডাকে কর্মরত রয়েছেন আড়াই হাজার কর্মী। তাদের মাসিক আয় লাখ খানেক টাকা হলেও ব্যায়ের পৌনে চার লাখ টাকার মতো। অর্থাৎ আয়ের তুলনায় ব্যয় এক তৃতীয়াশ হলেও তৃতীয় পক্ষ সেখান থেকে লাভ করে নিচ্ছে এমন অবস্থা দেখে উষ্মা প্রকাশ করেন প্রতিমন্ত্রী।
মেহেরপুর প্রধান ডাক ঘরের পোস্টমাস্টার আবু সাইদ মোঃ জহুরুল হককে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, একই ধরনের সেবা দিয়ে এস এ পরিবহন, দারাজ লাভ করছে। অথচ আপনার বেতন কাটা হয় না। কিন্তু দারাজ তার মাল যদি ঠিক মতো ডেলিভারি না হয়.. দেখলেন না কয়দিন আগে ৫০০ জন ছাঁটাই করিছে। তাই বলছি, যারা অ্যাক্টিভ, ইফিসিয়েন্ট ও অনেস্ট তারা থাকবে। আসলে ওভারসি মনিটরিং না থাকায় এ অবস্থা।
এসময় উপস্থিত খুলনা দক্ষিণাঞ্চলের পোস্ট মাস্টার জেনারেল মোঃ শামসুল আলম-কে সতর্ক করে প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ডাক অধিদপ্তরের ব্যাপারে অত্যন্ত আগ্রহী। এটাকে উনি মানুষের সেবায় সচল করতে চান। কিন্তু ম্যানেজমেন্ট না থাকায় কোটি কোটি টাকার অপচয় হচ্ছে। আগামী ৩০ জুনের মধ্যে অবস্থার পরিবর্তন না হলে আপনাদের পরিবর্তন হবে। সুযোগ ও সময় কাজে না লাগালে আমরা কোনো দায়িত্ব নিতে পারবো না।
প্রতিমন্ত্রী মনে করেন বর্তমানে প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে মোবাইল এবং ইন্টারনেট ফোনের ওপর বেশী ঝুঁকে পড়েছে। যার ফলে বিটিসিএলের ল্যান্ড টেলিফোন কম ব্যবহার করছে। এ কারণে বিটিসিএলের আয় কমলেও ব্যয় আগের মতোই রয়ে গেছে।
তাই সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় এবং মাননীয় আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় ভাইয়ের পরামর্শে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে যতগুলো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান আছে, প্রতিটির জন্য নতুন করে ব্যবসায়িক কৌশল গ্রহণ করেছি। যাতে সেবার মান ও সংখ্যা বাড়িয়ে লাভজনক করা সম্ভব হয়।
পুরাতন টেলিকম আইনকে সংশোধন করে আধুনিক এবং ভবিষ্যৎমূখী আইন প্রণয়ণের কাজ চলছে জানিয়ে পলক আরো বলেন, ইতোমধ্যে এটাকে ড্রাফটিংয়ের পর্যায়ে আনা হয়েছে। এখানে ডাক অধিদপ্তরকে বেসরকারীকরণ না করে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের ভিত্তিতে ব্যবসায়ের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হবে। দেশ ও মানুষের সেবার উদ্দেশ্য নিয়ে বিটিসিএল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো সেই বিটিসিএলকে বর্তমান সংকটাবস্থা থেকে সম্ভাবনার দিকে দ্রুত এগিয়ে নিতে আমরা কাজ করছি। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমরা স্মার্ট বিটিসিএল গড়ে তুলবো।
এর আগে শনিবার (৯ মার্চ) রাত ৯টার দিকে কুষ্টিয়ার প্রধান ডাকঘর চত্বরে ডাক অধিদপ্তরের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় নবনির্মিত ডাকভবনের উদ্বোধন শেষে প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, ছয় মাসের মধ্যে দেশের ৬৪ জেলার ডাক বিভাগকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করা হবে।
সেসময় কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান, অতিরিক্ত ডেপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেল আমিনুর রহমান, কুষ্টিয়া ডেপুটি পোস্ট মাস্টার মিরাজুল হক, ডেপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেল (ইএমসি) খন্দকার মাহবুব হোসেন, কুষ্টিয়া প্রধান ডাকঘরের পোস্ট মাস্টার আবুল কালাম আছাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।