খাজা টাওয়ারে যন্ত্রপাতি পুড়ে যাওয়ার দৃশ্যমান ক্ষতির চেয়ে অদৃশ্য ক্ষতিই বেশি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। প্রাথমিক হিসাবে অগ্নিকাণ্ডে ওই ভবনের ব্যবসায়ীদের মোট ক্ষতির পরিমাণ শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশির ক্ষতিতে পড়েছে আইএসপি এবং আইসিএক্স। আর ঢাকা কোলো ও এনআরবি’র যে ডেটা সেন্টার আছে তা এখন আর ব্যবহারের পর্যায়ে নেই। আগুন নেভানো পানিতে নষ্ট হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম। সার্ভারগুলো না পুড়লেও এর ভেতরের র্যাম, সার্কিট গলে গিয়ে ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। বিদ্যুত না থাকায় ফাইবার, থেকে র্যাক, সার্ভার সরিয়ে নিচ্ছে। দিন-রাত একাকার করে চলছে ইন্টারনেট ও আইপিফোন সেবা সচল রাখার যুদ্ধ।
খাত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খাজা টাওয়ারে থাকা দুইটি ডেটাসেন্টারকে কেন্দ্র করেই টেলিকমের পাশাপাশি আইএসপি ব্যবসায়ীদের একটি হাবে পরিণত হয় ভবনটি। কিন্তু একটি ডেটাসেন্টারও আন্তর্জাতিক মানের নয়। ফলে ইন্স্যুরেন্স’র বিষয়টিও তাই থাকছে উপেক্ষিত। সেখানে নেই আপদকালীন সেবা সুবিধা। ফলে এখন অন্য কোথায় র্যাক স্থান্তরেও ভোগান্তিতে পড়ছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি আইএসপি ব্যবসায়ীরা। মিলছে না ডেটা সেন্টারে সুলভ কোনো স্থান। নিরবিচ্ছিন্ন সেবা দিতে না পেরে অনেকের গ্রাহকেই ছুটে যাবার অবস্থায়। এমন পরিস্থিতে ঢাকাতেই অন্তত চারটি ডেটা সেন্টার স্থাপন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণসহ ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সরকার এগিয়ে আসবে বলে প্রত্যাশা ক্ষতিগ্রস্তদের।
আইএসপিএবির সভাপতি ইমদাদুল হক জানিয়েছেন, ইন্টারনেট এখন গ্রাহকের মৌলিক চাহিদা পর্যায়ে চলে আসায় তারা দিন-রাত এক করে ক্ষতিগ্রস্ত নেটওয়ার্ক পূণরুদ্ধার ও সচল করার কাজ করছেন। এর ফলে দুর্ঘটনার ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে দেশের মোট ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর (১ কোটি ২১ লাখ ৫০ হাজার) মধ্যে ৮৫ শতাংশ গ্রাহক পূর্ণগতির ইন্টারনেট সেবা পেতে শুরু করেছেন। বাকি যে ১৫ শতাংশ ব্যবহারকারী ধীরগতির ইন্টারনেট পাচ্ছেন তাদের অবস্থাও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঠিক করতে প্রাণান্ত চেষ্টা করছে ফাইবার টিম ও প্রকৌশলীরা। যুথবদ্ধ প্রচেষ্টার ফলে আইসিএক্স (ইন্টার কানেকশন এক্সচেঞ্জ) নেটওয়ার্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপসহ অ্যাপ-নির্ভর যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের সমস্যাটাও সহসাই কেটে যাবে বলেই আশা করছেন আইএসপিএবি সভাপতি।
প্রাথমিক ভাবে সম্ভাব্য শতকোটি টাকা ক্ষতির ব্যাখ্যা জানতে চাইলে ইমদাদুল হক জানান, ভবনে থাকা দুইটি ডেটা সেন্টারই ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে গেছে। এগুলো নতুন করে করতে হবে। এক্ষেত্রে ক্ষতি ৫০ কোটি টাকা। এছাড়াও এই ভবনে থাকাই আইআইজি’গুলোর ১০০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ আছে। এর ৪৫ শতাংশই নতুন করে করতে হবে। আইসিএক্স (ইন্টার কানেকশন এক্সচেঞ্জ) এক্সচেঞ্জ, ১১টির মতো আইআইজি প্রতিষ্ঠান, ২০-২৫টি আইএসপি প্রতিষ্ঠান ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের (আইএসপি) অফিস, কলসেন্টার আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের ক্ষতি ৫০ কোটি টাকার বেশি।
ভবনে থাকা র্যাক, সার্ভার উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ার পর আইএসপিএবি জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলাম সিদ্দিক জানিয়েছেন, আন্ত:সংযোগ অপারেটর বা আইসিএক্সের নেটওয়ার্ক দিয়ে তারা কলসেন্টারগুলোর সেবা দেন। ফলে করপোরেট, স্বাস্থ্য সেবার মতো বিপিও খাতে সেবা দিতে গিয়ে তাদের হিমশিম খেতে হয়েছে। শুক্র ও শনিবার সেখান থেকে যে র্যাক ও সার্ভারগুলো উদ্ধার করেছেন তার মধ্যে সিংহভাগই ব্যবহারের অনুপোযোগী হয়ে গেছে। কোনো কোনো ডিভাইসের মধ্যে গরমে র্যাম, চিপ পর্যন্ত গলে নষ্ট হয়েছে। কোনো কোনোটি পানিতে নষ্ট হয়েছে।