ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার আধুনিক রূপই হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ যার বাস্তবায়ন শুরু হয় ২০০৯ সালে। বঙ্গবন্ধুই ডিজিটাল বাংলাদেশের বীজ রোপন করেন এবং তার কন্যা শেখ হাসিনা সেই বীজকে চারাগাছে রূপান্তর করেন।
পরবর্তীতে ২০০৯-২০২২ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তার উন্নয়ন দর্শনে প্রযুক্তির উৎকর্ষ ও বিকাশ, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন, দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, ডিজিটাল অর্থনীতি ও ক্যাশলেস সোসাইটিকে অগ্রাধিকার দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশের বাস্তবায়নকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে গেছেন। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ আয়োজিত “ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস” এর আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
ঢাকার আগারগাঁওয়ে ডাক অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবসের আলোচনা সভায় তিনি আরও বলেন, আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আগামী স্মার্ট বাংলাদেশের ভিত্তিই হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ।
মন্ত্রী আরও বলেন যে, ১৯৬৯ সালে ইন্টারনেট আবিষ্কারের ফলে শুরু হয় ডিজিটাল বিপ্লব। ইন্টারনেটের সাথে ডিজিটাল ডিভাইসের সংযুক্তি মানুষের দৈনন্দিন জীবন, সংস্কৃতি, ব্যবসা-বাণিজ্যের উপর ব্যাপক গতি নিয়ে আসে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর গুরুত্ব গভীরভাবে উপলব্ধি করেন। বঙ্গবন্ধু তার সোনার বাংলা বিনির্মাণে কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিসহ এমন কোন খাত নেই, যেখানে পরিকল্পিত উদ্যোগ ও কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেননি।
বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই রচিত হয় একটি আধুনিক বিজ্ঞানমনষ্ক ও প্রযুক্তির নির্ভর বাংলাদেশের ভিত্তি, যা বাংলাদেশকে ডিজিটাল বিপ্লবে অংশগ্রহণের পথ দেখায়। আমাদেরকে ডিজিটাল প্রযুক্তি গ্রহণ করলেই হবেনা প্রযুক্তির সাথে সম্পৃক্ততাও থাকতে হবে। জনগণ ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণাকে গ্রহণ করেছে বলেই আমাদের অনেক সেবাসমূহ আজ ডিজিটালী রূপান্তর হয়েছে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ (বিটিআরসি)এর চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) বলেন যে, ডিজিটাল বাংলাদেশের মানুষ এখন মোটিভেটেড। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ১৯৭৪ সালে বেতবুনিয়ার ভূ-উপগ্রহ উদ্বোধনের মাধ্যমেই ডিজিটাল বাংলাদেশের ভিত্তি রচিত হয়।
ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবসের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম।
প্রবন্ধে ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপরেখা ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের সুফল দেশের প্রত্যেক মানুষ কীভাবে পাচ্ছে সেই খাতগুলো সুনির্দিষ্টভাবে আলোচনা করেন তিনি।
তিনি দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, আইন ও শৃংখলা, পরিবহন সেক্টর, শিল্প ও উৎপাদন, মানব সম্পদ উন্নয়ন এবং সার্ভিস ও ই-গভর্নেন্সের ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার ও সংযুক্তির বিষয়ে বিশদভাবে পর্যালোচনা করেন। এছাড়াও তিনি চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের বর্তমান সময়ে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে দেশের প্রত্যেকটি সেবাখাতকে ডিজিটাল রূপান্তরের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বিষয়ে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন(বিটিআরসি), মহাপরিপালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো: নাসিম পারভেজ।
তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে প্রধান নীতিমালা, পরিকল্পনা ও ভিশন, ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি এবং ডিজিটাল গভর্মেন্ট সংশ্লিষ্ট উদ্যোগসমূহ আলোচনা করেন। টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশ অসাধারণ অগ্রগতি হয়েছে মর্মে মন্তব্য করে তিনি বলেন, যে ব্রডব্যান্ড পরিষেবার ‘এক দেশ এক রেট’ ট্যারিফ নির্ধারণ, দেশব্যাপী অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক, বাংলাদেশে সাবমেরিন ক্যাবলের সংযোগসমূহ এবং বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ সফলভাবে উৎক্ষেপণ এবং টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদানে এর ব্যবহার হয়েছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন বিষয়ে আলোচনা করে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো: রফিকুল মতিন বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের অনুপ্রেরণা এদেশের জনগণের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। ডিজিটাল ডাক সেবার মাধ্যমে ভূমির পর্চা মানুষের দুয়ারে পৌঁছে যাচ্ছে। কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের সময় ডিজিটাল কোর্টের মাধ্যমে বিচার ব্যবস্থা চালু হয়েছে। তিনি ৫জি এর জন্য শক্তিশালী ট্রান্সমিশন ব্যাকবোন, সুবিধা বঞ্চিত অঞ্চলে ওয়াই-ফাই ভিত্তিক ইন্টারনেট এবং প্রান্তিক পর্যায়ে নিরবচ্ছিন্ন ডিজিটাল সেবা ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো: হারুনুর রশীদ।
সভাপতির বক্তব্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো: খলিলুর রহমান বলেন, আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর। পরববর্তীতে তারই কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা জনাব সজীব ওয়াজেদ জয় এর নির্দেশনায় ডিজিটাল বাংলাদেশের সফল বাস্তবায়নে আমাদের ঈর্ষনীয় অগ্রগতি হয়েছে। আজকের বক্তাদের আলোচনায় ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের রূপরেখা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। এবার আমরা ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে একসাথে কাজ করি।