ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’র তোপে ডিজিটাল যোগাযোগ ব্যবস্থা সুরক্ষিত রাখতে পরামর্শ দিয়েছে ডাক ও টেলিযোগযোগ বিভাগ। মুঠোফোনে খুদে বার্তা দিয়ে বলা হয়েছে, ‘আন্দামান সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি রোববার রাতে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। সকলকে নিজ নিজ স্থাপনা ও টেলিযোগাযোগ সম্পদ রক্ষায় প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো।’
রোববার থেকেই টেলিযোগাযোগ বিভাগে যে সতর্ক বার্তা জনগণকে দিয়ে এসেছে তা সোমবার থেকেই তার ফল দেখা দিয়েছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ আরও ঘনীভূত হয়ে বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে আসছে। আজ সন্ধ্যায় ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। সোমবার (২৪ অক্টোবর) সকালে ঝড়টি উপকূল থেকে ৪৯৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিলো। ক্রমেই তা নিকটবর্তী হচ্ছে।
এদিকে প্রায় সারা দেশে ভারী বর্ষণ শুরু হয়েছে। বাতাসে তীব্রতাও ধীরে ধীরে বাড়ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ঝড়ের ঝুকি ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমাতে ভোলাসহ সাতটি সমিতিরই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)।
আরইবির চিফ ইঞ্জিনিয়ার আমজাদ হোসেন জানিয়েছেন, তাদের সাতটা পিবিএস ঝুঁকির মধ্যে আছে। তাই আপাতত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে কিছু কিছু পিবিএস এর হেড অফিসে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু রাখা হয়েছে। অবশ্য এর পরিমাণ খুবই অল্প। ভোলায় একেবারেই বিদ্যুৎ নেই৷ এই সাতটির বাইরেও বেশ কিছু পিবিএস ঝুঁকিতে আছে, যেমন কক্সবাজার। সেখানেও ঝড়ো হাওয়া বইছে।
তবে আগাম সতর্কবার্তা দেয়ায় টেলিকম অপারেটরগুলো রাত থেকেই সাধ্য মতো ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তারপরও বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন হওয়ায় ১০০টি বিটিএস চালিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেছেন, আইপিএস ও জেনারেটর দিয়ে অপারেটরগুলো তাদের সাধ্য মতো ব্যাকআপ দেয়ার চেষ্টা করছেন। তবে বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন থাকা ও ঝড়ের প্রকোপ বাড়ায় অপারেশনে থাকা ডিফিকাল্ট হয়। এ কারণেই আমরা গ্রাহকদের আগেই নিরাপদ অবস্থানে থাকতে সতর্ক বার্তা দিয়েছি। যার সুফল এখন মিলছে। এখন পর্যন্ত টেলিযোগাযোগ অবকাঠামোতে কোনো ক্ষতি হয়নি।
আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, সাগর আরও বেশি বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠায় মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৪ (চার) নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৭ (সাত) নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এছাড়াও চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরগুলোকেও ৬ (ছয়) নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এদিকে ঘুর্ণিঝড় সুত্রাং ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাতে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে জানিয়ে ইন্টারনেট সেবাদাতাদের সংগঠন আইএসপিএবি সভাপতি ইমদাদুল হক বলেছেন, বিদ্যুতহীন এলাকাগুলো নেটওয়ার্ক চালু রাখা সম্ভব হচ্ছে না। একই সাথে সারা দেশেই ঝড় আবহওয়ারর কারণে যে ত্রুটিগুলো হচ্ছে তার ট্রাবল শ্যুট করতে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে কর্মীরা স্লাইসার নিয়ে কাজ করতে পারছেন না। ফলে আমাদের সেবা কিছুটা বিঘ্ন হচ্ছে। এ জন্য আমরা গ্রাহকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি।
অপরদিকে মুঠোফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটব’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় “সিতরাং”র আঘাতের কারণে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়েছে। এমতাবস্থায় মোবাইল অপারেটররা বিকল্প পন্থায় ব্যাটারি এবং জেনারেটর ব্যবহার করে নেটওয়ার্ক চালু রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে। টেলিকম সেবাকে জরুরি সেবা হিসেবে বিবেচনায় রেখে জনস্বার্থে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে বিনীত অনুরোধ করছে সংগঠনটি।
তবে ঝড়ের প্রভাবে দক্ষিণাঞ্চলে মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সেবা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, ‘বিটিআরসি টাওয়ার কোম্পানিদের লাইসেন্স প্রদান করলেও এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎ এর ঘন ঘন লোডশেডিং চলমান থাকা সত্ত্বেও স্বয়ংক্রিয় অটোমেটিক জেনারেটর যার ডিজেল চালিত রাখার বাধ্যতা মূলক নির্দেশনা জারি না করা দুঃখজনক। যদিও টাওয়ার কোম্পানি এবং মোবাইল অপারেটররা দাবি করে তাদের পাওয়ার ব্যাকআপ রয়েছে পাঁচ থেকে ছয় ঘন্টা। কিন্তু বর্তমান সময়ে জ্বালানি সংকটের কারণে এই পাওয়ার ব্যাকআপ উপযোগী নয়। নিরবিচ্ছিন্ন মোবাইল ও ইন্টারনেট সেবা চালু রাখতে হলে স্বয়ংক্রিয় ডিজেল চালিত জেনারেটর রাখা বাধ্যতামূলক করতে হবে বিটিআরসিকে’।