একটি জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দিয়ে একজন মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী সর্বোচ্চ ১৫টি সিম নিবন্ধন করতে পারবেন। কিন্তু একটি এনআইডি’র বিপরীতে ২৩১টি সিমও পাওয়া গেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটি়আরসি’র অনুসন্ধানে। এমন পরিস্থিতিতে নিয়ম ঘোষণার ৫ বছরের মাথায় কঠোর অবস্থান গ্রহণ করতে যাচ্ছে কমিশন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, একটি পরিচয়পত্রের বিপরীতে ২৩টি, ২৭টি, ৩০টি, ৩২টি এমনকি সর্বোচ্চ ২৩১টি সিম নিবন্ধিত হযেছে। ২৬টি করে সিম আছে এমন গ্রাহকের সংখ্যা ১৫ হাজার ১৯৬ জন। ৩০টি করে সিম আছে ১৫ হাজার ২৫৭ জনের। ২৪টি করে সিম আছে এমন গ্রাহকের সংখ্যা ২০ হাজার ৭০০ জন। ২৩টি করে সিম আছে ২৪ হাজার ৬৭৯ জনের। অন্যদিকে ২০টি করে সিম আছে ৪৭ হাজার ৮২৫ জনের। একটি জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে ১৫টির বেশি সিম আছে, এমন গ্রাহকের সংখ্যা ৭ লাখ ২৩ হাজার ৯২৩টি।
প্রসঙ্গত, একজন মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী একটি এনআইডি দিয়ে ১৫টি মোবাইল সিম নিবন্ধন করতে পারতেন। ২০১৭ সালের ৪ ডিসেম্বর থেকে এই নিয়ম চলে আসছে। কিন্তু মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে ১৫টিরও বেশি সিম নিবন্ধনের অভিযোগ রয়েছে। গ্রাহকের অসততার পাশাপাশি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনেরও এক ধরনের ভূমিকা রয়েছে ১৫টির বেশি সিম নিবন্ধনের।
নির্বাচন কমিশন ১০, ১৩ ও ১৭ ডিজিটের জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে থাকে। এর আগে সিবিভিএমপি (সেন্ট্রাল বায়োমেট্রিকস ভ্যারিফিকেশন মনিটরিং সিস্টেম) সলিউশনে ১৭ ডিজিট ও ১০ ডিজিটের জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর এবং জন্মনিবন্ধন সনদের নম্বর, ড্রাইভিং লাইসেন্স নম্বর এবং পাসপোর্ট নম্বরের ম্যাপিং না থাকায় একজন গ্রাহকের পক্ষে ৭৫টি (প্রতিটি ডকুমেন্টের বিপরীতে ১৫টি করে) সিম নিবন্ধন করা সম্ভব ছিল। পরবর্তী সময়ে ২০২১ সালের ১৬ মার্চ জন্মনিবন্ধন সনদের নম্বর, ড্রাইভিং লাইসেন্স নম্বর এবং পাসপোর্ট নম্বর ব্যবহার করে সর্বোচ্চ দুটি সিম নিবন্ধনের বিষয়ে কমিশন নির্দেশনা প্রদান করে।
এ অবস্থায় বর্তমান পরিস্থিতিতে সিবিভিএমপি সলিউশনে ১৭ ও ১০ ডিজিটের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর এবং জন্মনিবন্ধন সনদের নম্বর, ড্রাইভিং লাইসেন্স নম্বর এবং পাসপোর্ট নম্বরের মধ্যে ম্যাপিং না থাকায় একজন গ্রাহকের পক্ষে ৩৬টি (১৫+১৫+২+২+২) সিম নিবন্ধন করা সম্ভব।
বিভিন্ন ধরনের পরিচিতি নম্বরের মধ্যে ম্যাপিং না থাকায় যেসব সমস্যা বর্তমানে হচ্ছে তা হলো গ্রাহকপ্রতি সর্বোচ্চ ১৫টি সিম অধিগ্রহণ সংক্রান্ত সরকারের নির্দেশনা যথাযথভাবে প্রতিপালন করা সম্ভব হচ্ছে না। একজন গ্রাহকের কাছে প্রকৃতপক্ষে কতগুলো সিম আছে তা নির্ণয় করা সম্ভব হচ্ছে না, সিম ব্যবহার করে কোনও অপরাধ সংঘটিত হলে অপরাধীকে শনাক্ত করা কঠিন হচ্ছে, একজনের নামে নিবন্ধিত সিম অন্যজন ব্যবহার করে অপরাধ ঘটাচ্ছে এবং সরকারের বিভিন্ন নাগরিক সেবা প্রদানের লক্ষ্যে বিভিন্ন সরকারি সংস্থাকে সঠিক তথ্য প্রদান সম্ভব হচ্ছে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র জানিয়েছেন, এক এনআইডির বিপরীতে যাদের ১৫টির বেশি সিম থাকবে তাদের বাড়তি সিমগুলো সিংক্রোনাইজ করা হবে। পুরোপুরি বন্ধ করার আগে গ্রাহককে সেগুলোর বিষয়ে সুযোগ দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, এছাড়া জন্মসনদ, ড্রাইভিং লাইসেন্স বা পাসপোর্ট- এসব ডকুমেন্ট দিয়ে দুটির বেশি সিম নেওয়া যাবে না। এটা সাময়িক ব্যবস্থা। যখনই মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর এনআইডি হয়ে যাবে তখন এই নিয়ম বদলে যাবে। তিনি তখন ১৫টি সিমের কোটায় অন্তর্ভুক্ত হবেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ২১ এপ্রিলে এপিআইয়ের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন থেকে সিবিভিএমপি সলিউশনে রাখা ১৭ ডিজিটের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বরের সঙ্গে ১০ ডিজিটের জাতীয় পরিচয়পত্রের ম্যাপিং কার্যক্রম শুরু হয় এবং ১৮ মে ম্যাপিংয়ের প্রাথমিক ধাপ সম্পন্ন হয়। এরমধ্যে দেখা যায় ভুল জন্ম তারিখের কারণে ম্যাপিং করা সম্ভব হয়নি এমন ১৭ ডিজিটের জাতীয় পরিচয়পত্রের সংখ্যা ১৭ লাখ ৪৪ হাজার ৪০২টি। এগুলো সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন মনে করে বিটিআরসি। এজন্য মোবাইল ফোন অপারেটরদের সঙ্গে আলোচনা ও প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশনের সহযোগিতা নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
জানা গেছে, মোবাইল ফোন অপারেটররা ইতোমধ্যেই যেসব গ্রাহকের সিম সংখ্যা ১৫টির বেশি তাদের মেসেজ পাঠাতে শুরু করেছে। নভেম্বর পর্যন্ত মেসেজ পাঠানো হবে। তারপর বেশি সংখ্যার সিমগুলো বন্ধ করা হবে।