জ্যামিতিক হারে বাড়তে থাকা দেশের ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ চাহিদা যেনো কোনো ভাবেই ঘাটতিতে না পড়ে সে জন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে সাবমেরিন ক্যাবলের লাইসেন্স দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে গত ২৯ মার্চ লাইসেন্স আবেদনের মেয়াদ বাড়ায় বাংলাদেশ টেলিযোগোযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বর্ধিত সময় অনুযায়ী মঙ্গলবার (১০ মে) পর্যন্ত লাইসেন্স পেতে ৬টি প্রতিষ্ঠানের আবেদন জমা পড়েছে। সূত্রমতে, এবার আবেদনগুলো নিয়ে বিউটি কনটেস্ট অনুষ্ঠিত হবে। তারপর লাইসেন্স পাওয়ার উপযুক্ততা বিচার করে নির্বাচন করা হবে দুটি প্রতিষ্ঠানকে।
বিটিআরসি সূত্র মতে, সাবমেরিন ক্যাবলের লাইসেন্সের জন্য সামিট কমিউনিকেশন্স লিমিটেড, ফাইবার অ্যাট হোম লিমিটেড, সিডিনেট টেকনোলজিস লিমিটেড, ম্যাঙ্গো টেলিসার্ভিসেস লিমিটেড, টোটাল সলিউসন্স লিমিটেড ও মেটাকোর সাবকম লিমিটেড আবেদনপত্র জমা দিয়েছে।
তবে এই নাম প্রকাশের পর বাংলাদেশে মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমের মাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছেন, নতুন করে সাবমেরিন ক্যাবল এর জন্য যে টেন্ডারা আহ্বান করা হয়েছে সেখানে এমন কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আছে যাদের এনটিটিএন, আইআইজি সহ অন্যান্য লাইসেন্স রয়েছে। এখানে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে কোনভাবেই মনোপলি ব্যবসার সৃষ্টি না হয়। বা কেউ এ সেবা কে জিম্মি করে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি না করতে পারে।
এই উদ্বেগের বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ডিজিবাংলাকে বলেন, এই অমূলক শঙ্কার কোনো কারণ নেই। দেশে ইন্টারনেট ব্যান্ডউথের চাহিদা ঘাটতি না হওয়া এবং বেসরকারি খাতগুলো যেনো এই ব্যবসায় আসতে পারে সেই সুযোগ তৈরি করতেই বেসরকারি খাতে লাইসেন্স উন্মুক্ত করে দিয়েছে। তবে এটা কোনো আলু-পটলের ব্যবসায় নয়; তাই যারা আবেদন করেছেন তাদের সক্ষমতা যাচাই করে তবেই লাইসেন্স দেয়া হবে।
এদিকে নীতিমালা অনুযায়ী দুটি প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেওয়ার উদ্যোগকে স্বাগত জোনিয়েছে আইএসপিএবি। এই উদ্যোগ তাদেরর মধ্যে আশার সঞ্চার করার পাশাপাশি চাহিদাও বাড়য়ে দিয়েছে। ফলে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বাজার প্রতিযোগিতা বাস্তবিক অর্থেই ফিরিয়ে আনতে আবেদনকারী সব প্রতিষ্ঠানকেই লাইসেন্স দেয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন সংগঠনটির মহাসচিব নাজমুল করিম ভূঁইয়া।
তিনি বলেছেন, সরকারি একটি কোম্পানি বিএসসিসিএল এর পরিবর্তে সরকার বেসরকারী ভাবে সাবমেরিন ক্যাবলের লাইসেন্স দেয়ার যে উদ্যোগ নিয়েছেন মুক্তবাজারের স্বার্থে এই তা প্রশংসনীয়। তবে আমরা আশা করি সরকার যেনো দুইটি কোম্পানির বেশি বা আবেদনে যারা যোগ্য বলে বিবেচিত হবে তাদেরকেই এই লাইসেন্স দেয়। এতে করে বাজারে সুলভ মূল্য ও সেবামান বজায় রাখা সম্ভব হবে।
প্রসঙ্গত, সাইবার ক্যাবল লাইসেন্স প্রদানের স্বার্থে ‘বিল্ড, অপারেট অ্যান্ড মেইনটেইন সাবমেরিন ক্যাবল ইন বাংলাদেশ’ নামে একটি গাইডলাইনও তৈরি করা হয়েছে। গাইডলাইন অনুযায়ী, বেসরকারি খাতের যে দুটি প্রতিষ্ঠানকে সাবমেরিন ক্যাবলের লাইসেন্স দেওয়া হবে তারা অপারেশন চালু করতে অন্তত ৪ বছর বা ৪৮ মাস সময় পাবে।
অবশ্য এর আগেই বাংলাদেশ তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলে (সি-মি-ইউ-৬) যুক্ত হয়ে যাবে। বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেডের (বিএসসিসিএল) তত্ত্বাবধানে এগুলো পরিচালিত হচ্ছে। সি-মি-ইউ-৪, সি-মি-ইউ-৫ এবং সি-মি-ইউ-৬, এই তিনটিই হবে সরকারি প্রতিষ্ঠানের সাবমেরিন ক্যাবল। অর্থাৎ বেসরকারি কোম্পানিগুলো এই থাকছে এই তিনটির বাইরে।
এ বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেছেন, ‘সি-মি-উই-৬-এ যে পরিমাণ ব্যান্ডইউথ আসবে, তা দিয়ে আমাদের চাহিদা ভালোভাবেই পূরণ হবে। ২০৩০ সাল পর্যন্ত নতুন কোনও সাবমেরিন ক্যাবল না হলেও চলবে। তারপরও আমরা বেসরকারি খাতের জন্য ব্যবসা উন্মুক্ত করে দিয়েছি। যোগ্যতা দেখিয়ে যদি কোনও প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স পায়, সেটা তো অবশ্যই ইতিবাচক একটি দিক হবে।
উল্লেখ্য, দেশে প্রথম সাবমেরিন ক্যাবল কমিশনিং করা হয় ২০০৬ সালের প্রথম দিকে। আর গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর সি-মি-ইউ-৬ কনসোর্টিয়ামে সই করেছে বাংলাদেশ। সি-মি-ইউ-৬ কনসোর্টিয়ামে যোগদানকারী ১৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে—সিংটেল সিঙ্গাপুর, বিএসসিসিএল বাংলাদেশ, টেলিকম মালয়েশিয়া, এসএলটি শ্রীলঙ্কা, ধিরাগু মালদ্বীপ, এনআইটুআই ভারত, টিডব্লিউএ পাকিস্তান, জিবুতি টেলিকম, জিবুতি, মোবিলিংক সৌদি আরব, চায়না মোবাইল ইন্টারন্যাশনাল চায়না, টেলিকম গ্লোবাল লিমিটেড চায়না, ইউনিকম চায়না, মাইক্রোসফট যুক্তরাষ্ট্র, টেলিকম ইজিপ্ট মিসর ও অরেঞ্জ ফ্রান্স। আর এই কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে ২০২৪ সাল নাগাদ ব্যান্ডউইথ সরবরাহ শুরু হবে। তখন এই ক্যাবল দিয়ে ১৩ দশমিক ২ টেরাবাইট ব্যান্ডউইথ আসবে দেশে। ওই সময়ে দেশে ৬ হাজার জিবিপিএস’র (গিগাবিটস পার সেকেন্ড) বেশি আন্তর্জাতিক ব্যান্ডউইথের প্রয়োজন হবে।