রাজধানীর ২১২টি সহ দেশের ৩২৫টি স্থানে অবৈধ জ্যামার ব্যবহারের বিষয় নিশ্চিত হয়েছে মোবাইল অপারেটররা। সংগঠনটি জানিয়েছে, পল্লবী থানার একটি অংশ, বনানী থানার দুটি আবাসিক এলাকা, নিকুঞ্জ, মহাখালী ডিওএইচএস ও পুরান ঢাকা। এ ছাড়া পুরানা পল্টন, বনশ্রী ও ধানমণ্ডিতে এসব অবৈধ প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে।
অবশ্য মোবাইল অপারেটররা নেটওয়ার্ক সমস্যা অনুসন্ধান করতে গিয়ে রাজধানীর এক হাজারের বেশি স্থানে প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি পর্যায়ে জ্যামার, রিপিটার ও বুস্টারের ব্যবহারের বিষয়টি চিহ্নিত করেছে। এর কারণে হুটহাট ব্যবহারকারী পর্যায়ে কল ড্রপ ও নেটওয়ার্ক না পাওয়ার সমস্যা কোনোভাবেই দূর করা যাচ্ছে না বলে মত মোবাইল অপারেটরদের।
সূত্রমতে, রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মার্কেট, স্টেডিয়াম মার্কেটসহ দেশের বিভিন্ন মার্কেটে ও অনলাইনে বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে এসব প্রযুক্তি বিক্রি করা হচ্ছে। আইন অমান্য করে অনেক অসাধু ব্যবসায়ী অবৈধভাবে মোবাইল জ্যামার, রিপিটার ও বুস্টার আমদানি ও বিক্রি করছেন। সেগুলো কিনে ব্যবহার করা হচ্ছে মসজিদ, হাসপাতাল, ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান।
টেলিকম বিশেষজ্ঞদের মতে, বুস্টার, রিপিটার বা জ্যামার ব্যবহারের ফলে মোবাইল তরঙ্গের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি হয়। ফলে যখন গ্রাহক তার মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন সেটা টাওয়ার থেকে আসা সিগন্যালকে বাধাগ্রস্ত করে জ্যামার থেকে আসা সিগন্যাল। এই দুই তরঙ্গ যখন এক সাথে হয় তখন আর তা বোধগম্য সিগন্যাল থাকে না। ফলে কলড্রপ, কলিং ইত্যাদি সমস্যায় পড়েন গ্রাহক।
এমটবের অভিযোগের ভিত্তিতে এরই মধ্যে এ বিষয়ে গ্রাহক পর্যায়ে সতর্কবার্তা দিয়ে জন সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান পরিচালনা শুরু করছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। সোমবার রাত পৌনে ৮টা থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত রাজধানীর তেজগাঁও থানার তেজকুনিপাড়া এলাকা ও পল্টন থানার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম মার্কেট এলাকায় পৃথক অভিযান পরিচালনা করে র্যাব-১০ ও বিটিআরসির কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে যৌথ আভিযানিক দল। এ সময় বিটিআরসির অনুমোদনবিহীন অবৈধ নেটওয়ার্ক জ্যামার, বুস্টার ও রিপিটার বিক্রি করার অপরাধে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। মঙ্গলবার র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আটককৃত মো. রানা হোসেন (৩৬), মো. মনিরুজ্জামান বাহার (৩৫), মো. আশরাফ হোসেন (২৯) ও রাজিবুল হক (২৩)। অভিযানের সময় তাঁদের কাছ থেকে আটটি সিগন্যাল শিল্ড, ৪০টি সিগন্যাল শিল্ড অ্যান্টেনা, আটটি পাওয়ার কেবলসহ এসি অ্যাডাপ্টর, ২১টি মোবাইল ট্রি ব্যান্ড রিপিটার, একটি ডুয়াল ব্যান্ড রিপিটার, ছয়টি হাইস্পিড নেট বুস্টার কন্ট্রোলার, দুটি জিএসএম থ্রিজি নেট বুস্টার, একটি মেগাডিসপ্লে নেট বুস্টার, তিনটি কানেক্টর, ২০টি আউটডোর অ্যান্টেনা, ১১টি ইনডোর অ্যান্টেনা, ২৮টি অ্যাডাপ্টর ও ১০টি ছোট/বড় কেবল উদ্ধার করা হয়।
এ বিষয়ে এমটব মহাসচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম ফরহাদ (অবঃ) বলেন- “বাংলাদেশ সরকারের আইন অনুযায়ী জ্যামার, রিপিটার বা বুস্টার জাতীয় রেডিও ইকুইপমেন্ট অবৈধভাবে আমদানি করা বা স্থাপন করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এসব রেডিও ইকুইপমেন্ট যত্রতত্রভাবে ব্যবহারের জন্য মোবাইল নেটওয়ার্কে ইন্টারফিয়ারেন্স তৈরি হয়। ফলে কল ড্রপসহ নেটওয়ার্কের মান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ব্যপারে বিটিআরসি বিভিন্ন সময়ে নোটিশ প্রদানসহ নানা ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। এজন্য ব্যপক জনসচেতনতা সৃষ্টি করা প্রয়োজন। আমরা বিটিআরসির সংগে এটা নিয়ে কাজ করছি।”