২০২৫ সাল নাগাদ দেশে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের চাহিদা পৌঁছবে ৩৪ হাজার জিবিপিএস। বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন-বিটিআরসি’র এর এই পূর্বাভাসকে গুরুত্বের সাথে নিয়ে দেশ যেনো ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ সঙ্কটে না পড়ে সে জন্য মাত্র ৪৫ শতাংশ বিনিয়োগ ব্যয় বাড়িয়ে সক্ষমতা দ্বিগুণ করার পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল)। জরুরী নীতি নির্ধারণী সভায় ( এক্সাঅর্ভিনারি জেনারেল মিটিং-ইজিএম) রোববার এই সিদ্ধান্ত নেয় বিএসসিসিএল পরিচালনা পর্ষদ। সোমবার বিষয়টি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) অবহিত করেছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশের ইন্টারনেট ব্যবস্থা নিরবচ্ছিন্ন করতে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের বাস্তবায়ন কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়। বহুল প্রত্যাশিত প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সি-মি-উই-৬ কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড মেইটেনেন্স অ্যাগ্রিমেন্ট এবং কনসোর্টিয়ামের সরবরাহকারীদের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর হয় গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর। ২০২৪ সালের মধ্যে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলটি চালু করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রথমে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের জন্য খরচ ধরা হয় ৫৬২কোটি টাকা। এখন প্রকল্পটি সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে ৮১২ কোটি টাকা। অর্থাৎ তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের খরচ বেড়েছে ২৫০ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে বিএসসিসিএল ব্যজস্থাপনা পরিচালক এ কে এম হাবিবুর রহমান ডিজিবাংলা-কে জানান, তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল সম্প্রসারণের ফলে ব্যান্ডউইথের সক্ষমতা বেড়ে হবে ১৩ হাজার ২০০ জিবিপিএস। প্রথমে এই সক্ষমতা নির্ধারণ করা হয়েছিলো ৬ হাজার ৬০০ জিবিপিএস। কিন্তু বিটিআরসি’র বাজার চাহিদা বৃদ্ধি বিশ্লেষণ থেকে ব্যান্ডউইথ বাড়ানোর দ্বিতীয় কোনো পথ খোলা না থাকায় পর্ষদ তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল প্রকল্প সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে ৪৫ শতাংশ খরচ বাড়লেও ব্যান্ডউইথ সক্ষমতা বেড়ে দ্বিগুণ হবে। আর এই খরচ মূলত বিনিয়োগ বৃদ্ধি।
প্রকল্প সম্প্রসারণের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ২৫ বছরের জন্য এই ক্যাবলিং করা হচ্ছে। আমাদের হাতে যে ব্যাণ্ডইউথ আছে এবং যোগ হওয়ার কথা ছিলো তা মিলে অর্ধেক চাহিদাও মেটাতে পারবে না।
ঈদের পরই পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প অনুমোদন করিয়ে কনসোর্টিয়ামের কাছে প্রস্তাব দেয়ার জন্য বিএসসিসিএল এখন প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানান তিনি।
সি-মি-উই-৬ কনসোর্টিয়ামে যোগদানকারী ১৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে—সিংটেল সিঙ্গাপুর, বিএসসিসিএল বাংলাদেশ, টেলিকম মালয়েশিয়া, এসএলটি শ্রীলংকা, ধিরাগু মালদ্বীপ, এনআইটুআই ভারত, টিডব্লিউএ পাকিস্তান, জিবতি টেলিকম, জিবতি, মবিলিঙ্ক-সৌদি আরব, চায়না মোবাইল ইন্টারন্যাশনাল, চায়না টেলিকম গ্লোবাল লিমিটেড চায়না, ইউনিকম চায়না, মাইক্রোসফট যুক্তরাষ্ট্র, টেলিকম ইজিপ্ট মিশর এবং অরেঞ্জ ফ্রান্স।
২০০৬ সালের প্রথমার্ধে দেশে প্রথম সাবমেরিন ক্যাবল কমিশনিং করা হয়। ২০২৪ সাল নাগাদ দেশে ৬০০০ জিবিপিএস-এর বেশি আন্তর্জাতিক ব্যান্ডউইথের প্রয়োজন হবে। এরই মধ্যে ভারতের রাষ্ট্রীয় কোম্পানি বিএসএনএল’র কাছে ১০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ রপ্তানির জন্য নতুন করে চুক্তি স্বাক্ষর
এছাড়া বিএসসিসিএল দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের পশ্চিম দিকের তথা ইউরোপের দিকের অব্যবহৃত ব্যান্ডউইথ দীর্ঘমেয়াদে লিজ দেওয়ার জন্য সৌদি আরব ও ফ্রান্সের সঙ্গে দুটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, মালয়েশিয়ার সঙ্গে এ বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর প্রক্রিয়াধীন আছে।