ভারতের কলকাতা বা দিল্লী এবং পাকিস্তানের লাহরের পর দক্ষিণ এশিয়ার তৃতীয় দেশ হিসেবে বাংলাদেশে চালু হলো বৈদ্যুতিক ট্রেন। বুধবার মেট্রো ক্লাবে নাম লেখালো ঢাকা। অর্থাৎ এই ট্রেন চালাতে এখন দরকার নিবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ। তাই জাতীয় গ্রিড থেকে ট্রেনে সরবাররহ করা হচ্ছে এই শক্তি।
কিন্তু জাতীয় গ্রিড থেকে নিরবিচ্ছন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা না গেলে! না, এই সমস্যার সমাধানে আগে ভাগেই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ঢাকা ম্যাস ট্রান্সপোর্ট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। শঙ্কাকে শক্তিতে রুপান্তরে জরুরি সময়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে রাখা হয়েছে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যাটারির ব্যবস্থা। ব্যবহার করা হয়েছে এনার্জি স্টোরেজ সিস্টেম বা ইএসএস প্রযুক্তি। ফলে ট্রেনের ব্রেক কষে পাওয়া শক্তি ইএসএস প্রযুক্তির মাধ্যমে সঞ্চিত হবে ব্যাটারিতে, যা পরে ব্যবহার করা যাবে।
ইএসএস মূলত ব্যাকআপ সিস্টেম, যা ট্রেনের রিজেনারেটিভ ব্রেকিং এনার্জি দিয়ে নিয়মিত চার্জ হতে থাকবে।
ডিএমটিসিএলের তরফে বলা হয়েছে, মেট্রোরেল পরিচালনায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতের জন্য উত্তরা ডিপো এবং মতিঝিল এলাকায় দুটি রিসিভিং সাবস্টেশন থাকবে। মতিঝিল রিসিভিং সাবস্টেশনে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) মানিকনগর গ্রিড সাবস্টেশন থেকে ১৩২ কেভির দুটি পৃথক সার্কিট; উত্তরা রিসিভিং সাবস্টেশনে পিজিসিবির টঙ্গী গ্রিড সাবস্টেশন হতে ১৩২ কেভির একটি সার্কিট এবং ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) এর উত্তরা গ্রিড সাবস্টেশন হতে ১৩২ কেভির অপর একটি সার্কিটের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পাবে।
উভয় রিসিভিং সাবস্টেশনে ব্যাকআপ হিসেবে একটি করে অতিরিক্ত ট্রান্সফর্মার থাকবে। পুরাতন বিমানবন্দর এলাকায় ডেসকোর ৩৩ কেভি সাবস্টেশন থেকে শেওড়াপাড়া মেট্রো স্টেশনে ৩৩ কেভি বৈদ্যুতিক সংযোগ থাকবে।
প্রকল্প নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ডিএমটিসিএল জানিয়েছে, এনার্জি স্টোরেজ সিস্টেম বা ইএসএস প্রযুক্তি ব্যবহার করায় চলাচলের সময় ট্রেনের ব্রেকিং সিস্টেম থেকে চার্জ হতে থাকবে ব্যাটারি। কোনো কারণে কোনো সময় জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া না গেলে মেট্রোরেলের ইএসএস থেকে বিদ্যুৎ সরাবরাহ করে মেট্রো ট্রেনকে নিকটবর্তী স্টেশনে নিয়ে আসা হবে। এভাবে এক দিকে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে, আবার জরুরি অবস্থায় ট্রেন চালু রাখার জন্যও ব্যবহার করা যাবে।
মেট্রোরেলের জন্য ইলেকট্রনিক ও মেকানিক্যাল সিস্টেম সরবরাহকারী মারুবেনি-এলঅ্যান্ডটি জেভির কর্মকর্তা রাসোনো তেতসুয়া জানিয়েছেন, এনার্জি স্টোরেজ সিস্টেম বা ইএসএস সরবরাহ করেছে জাপানি কোম্পানি তোশিবা। অন্যদিকে পাওয়ার ইউপিএসের সরবরাহ এসেছে ফুজি ইলেকট্রিক থেকে।
প্রসঙ্গত, দেশের প্রথম সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ-চালিত মেট্রো রেল চলাচল শুরু করেছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। এজন্য উত্তরার দিয়াবাড়িতে ডিপোয় একটি অপারেশন কন্ট্রোল সেন্টার (ওসিসি) স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও রেললাইনের প্রতি ২০০ থেকে ৩০০ মিটার পরপর রেডিও অ্যানটেনা স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি ট্রেনে আছে চারটি করে অ্যানটেনা। প্রতিটি অ্যানটেনা ট্রেন ও কন্ট্রোল সেন্টারের (নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র) সঙ্গে যোগাযোগ করবে। স্টেশনে এসে ট্রেন যেখানে থামার কথা, এর চেয়ে ছয় ইঞ্চিও এদিক-ওদিক হতে পারবে না। তাহলে ট্রেনের দরজা ও প্ল্যাটফর্মের দরজা বরাবর হবে না।
এর টিকেটিং ব্যবস্থাও পুরোপুরিই কম্পিউটারাইজড।