ঢাকায় সফলতার সঙ্গে ৪৫তম আসর সম্পন্ন করার মধ্য দিয়ে প্রোগ্রামারদের ‘মানবসম্পদ পুল’ হিসেবে মানবতার কল্যাণে সমস্যা সমাধানের সংস্কৃতি গড়ে তোলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন আয়োজকরা।
বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর ২০২২) ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার (আইসিসিবি) হল-১ গুলনকশায় অনুষ্ঠিত বিশেষ সংবাদ সম্মেলনে এই অঙ্গীকার করেন অংশীজনেরা।
সংবাদ সম্মেলনে চলমান আইসিপিসি ওয়ার্ল্ড ফাইনালস ঢাকার প্রধান ও উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো উপস্থাপন করা হয়। এসময় একই ভ্যোনুর ৪ নম্বর হলে সমস্যার সমাধানে ব্যস্ত ছিলেন প্রতিযোগীরা। ছোট ছোট খোপে একটি পিসির সামনে বসে তিন জনের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া একেকটি কম্পিউটার প্রোগ্রামার দল। সমস্যার সমাধান সমাধান করেছেন তখনই তাদের খোপে ঝুলিয়ে দেয়া হয় একটি করে রঙিন বেলুন।
সকাল ১১ টায় শুরু হয়ে প্রতিযোগিতা চলে বিকাল ৪টা পার্যন্ত। ১২টার পর শুরু হওয়া আইসিপিসির ৪৫তম ওয়ার্ল্ড ফাইনালস বিশেষ সংবাদ সম্মেলনে আইসিপিসি ফাউন্ডশনের প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম বি পাউচার। তিনি বলেন, ‘আমরা ছয় বছর আগে ওয়ার্ল্ড ফাইনালস ঢাকায় আয়োজনের যে যাত্রা শুরু করেছিলাম, আজ তা সত্যিই হচ্ছে। আমার কাছে এটি বিস্ময়কর ও আনন্দের। আইসিপিসি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সমস্যা সমাধানের আয়োজন। আগামীর পৃথিবীতে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং দিয়ে বড় বড় সমস্যার সমাধান করতে হবে। আইসিপিসিতে যারা অংশ নেন, তারা পৃথিবীর সেরা প্রোগ্রামার হয়ে থাকেন। তাদের মেধা মানবতার কাজে লাগবে।’
আইসিপিসির আয়োজক বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক (ইউএপি)। বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য এবং আইসিপিসি ঢাকার পরিচালক কামরুল আহসান বলেন, ‘এশিয়া মহাদেশে চতুর্থ দেশ হিসেবে বাংলাদেশে এই প্রতিযোগিতা হচ্ছে। যা দেশ হিসেবে আমাদের বড় এক অর্জন। এর আগে জাপান, চীন ও থাইল্যান্ডে চূড়ান্তপর্ব হয়েছিল।’ ইউএপির সাবেক উপাচার্য প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীকে এ আয়োজনের স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক রণজিৎ কুমার, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নাভিদ শফিউল্লাহ, আইসিপিসি ২০২২ ওয়ার্ল্ড ফাইনালসের পরিচালক মাইকেল জে ডনাহু, পৃষ্ঠপোষক হুয়াউয়ের যোগাযোগ বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ভিকি ঝ্যাং এবং জেট ব্রেইনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট অঁদ্রে ইভানভ। সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন লুসা মির্জা।
চলছে ঢাকায়। আজ এবার চূড়ান্ত পর্ব দলগুলোর জন্য ১২টি প্রোগ্রামিং সমস্যা বা প্রশ্ন করা হয়েছে। প্রতিোযোগিতায় প্রথম একটি প্রশ্নের সমধান করে গত বছরের স্বর্ণপদক বিজয়ী দল দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। এই প্রতিবেদন লেখা (বেলা ৩টা) পর্যন্ত ১০ টি সমস্যার সমাধান করে এগিয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি)। নয়টির সমাধান করে এর পরেই আছে চীনের পিকিং ইউনিভার্সিটি।
আইসিপিসি ওয়ার্ল্ড ফাইনালস ঢাকা আয়োজনের সুবিধা তুলে ধরে আইসিটি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জনাব মোহাম্মদ নাভিদ শফিউল্লাহ বলেন, “ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের জন্য একটি মানবসম্পদ পুল তৈরি করতে আমাদের তরুণ প্রজন্মের জন্য সমস্যা সমাধানের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। এ লক্ষ্যে আইসিটি বিভাগ সময়োপযোগী উদ্যোগ নিয়েছে এবং সম্প্রতি আমরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জাতীয় পাঠ্যসূচিতে সমস্যা সমাধানের দক্ষতা এবং কোডিং অন্তর্ভুক্ত করেছি।”
বিসিসি-র নির্বাহী পরিচালক রণজিৎ কুমার বলেন, “এই অনুষ্ঠানে আপনি এখন এখানে যা দেখেছেন, এমনকি প্রতিযোগিতার স্থানের যে চমৎকার পরিবেশ তৈরি হয়েছে তা হল কঠোর পরিশ্রমের ফল যার যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১৭ সালে। যদিও অপারেশনাল পরিকল্পনা এবং প্রস্তুতিপর্ব গত বছর থেকে শুরু হয়েছিল তারপরে এই অনুষ্ঠানে বাস্তবায়নের জন্য আমরা মুখোমুখি এবং অনলাইন উভয় ক্ষেত্রেই শত শত মিটিং করেছি।”
সন্ধ্যায় আইসিসিবিতে সমাপনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শেষ হবে এ বছরের আইসিপিসি চূড়ান্ত পর্ব। সেখানেই ঘোষণা করা হবে ফলাফল এবং চলবে পুরস্কার বিতরণী।