ডিজিটাল বাংলাদেশের ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে দক্ষ মানব সম্পদ তৈরির মাধ্যমে ২০১৪১ সাল নাগাদ উদ্ভাবনী স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার ধারাবাহিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে আগামী ১৮ অক্টোবর শেখ রাসেল দিবসে আরো ৫ হাজার ডিজিটাল কম্পিউটার ল্যাব উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রবিবার রাতে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে “ইন্টারন্যাশনাল কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং কনটেস্ট (আইসিপিসি)” ওয়ার্ল্ড ফাইনালস এর “বিনিয়োগকারীদের সমাবেশ” অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ তথ্য দিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী।
এসময় আইসিটি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব এনএম জিয়াউল আলম, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের (ইউএপি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামরুল আহসান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ, হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকর্ণ কুমার ঘোষ ও বাংলাদেশ কম্পিউার কাউন্সিলের (বিসিসি) নির্বাহী পরিচালক রণজিৎ কুমার। এছাড়া আইসিপিসি ফাউন্ডেশনের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ড. বিল পাউচার অনলাইনে যুক্ত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রতিযোগিতার আয়োজন নিয়ে বিস্তারিত উপস্থাপন দেন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের পরিচালক মোহাম্মদ এনামুল কবির। তিনি জানান, আগামী ৯-১৬ নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকায় বসবে এবারের আসর। এই আসরে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশের ৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
অন্যান্যের মধ্যে আইএসপিএবি সভাপতি ইমদাদুল হক, বাক্কো সভাপতি ওয়াহিদ শরিফ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে গভীর কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করা হয় বাংলাদেশে আইসিপিসি’র প্রবর্তক খ্যাতিমান প্রকৌশলী প্রয়াত জামিলুর রেজা চৌধুরীকে।
আইসিটি বিভাগের উদ্যোগে ইউনিভার্সিটি অফ এশিয়া প্যাসিফিক এর যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এই সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের আগামী প্রজন্ম সমস্যা সৃষ্টিকারী নয়; সমাধানকারী প্রজন্ম হবে। সে জন্য আমরা দেশে একটি উদ্ভাবনী সংস্কৃতি গড়ে তুলছি। ন্যাশনাল হাই স্কুল প্রোগ্রামিং কনটেস্ট শুরু করেছি। বিভিন্ন উপজেলা ও সংসদীয় আসনে ৩০০টি শেখ রাসেল স্কুল অব ফিউচার বাস্তবায়ন করছি; যেখানে ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি সম্পর্কে শিশু-কিশোর ছাত্র-ছাত্রীদের জ্ঞান ও দক্ষতা তৈরি হবে।
বক্তব্যে পলক আইসিপিসি ঢাকার চুড়ান্ত পর্বে পৃষ্ঠপোষকতার জন্য কর্পোরেট প্রতিনিধিদের আহবান জানান এবং ২০৪১ সালের মধ্যে জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশে বিভিন্ন উদ্যেগের সাথে যুক্ত হওয়ার তাগিদ দেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, “আন্তর্জাতিক পরিসরে ইন্টারন্যাশনাল কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং কন্টেস্ট (ICPC) ১৯৭৭ সালে শুরু হলেও বাংলাদেশ প্রথমবার অংশগ্রহন করেছিলো ২০ বছর পর ১৯৯৭ সালে। আমাদের বুয়েটের টিম ১৯৯৭ সালে প্রথমবার অংশগ্রহন করেই বিশ্বের সেরা ২৫টি টিমের মধ্যে অবস্থান গ্রহন করে, তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তাঁদেরকে সংবর্ধনা দিয়েছিলেন। তারও ২০ বছর পর ২০২২ সালের ICPC ফাইনালসের শুধু অংশগ্রহণকারী নয়, আয়োজক দেশ হিসেবে মর্যাদার আসনে বাংলাদেশ। বিশ্বের ৭৫ টি দেশের ১০০০ জন তরুণ প্রোগ্রামার, যারা হবে আগামী দিনের আধুনিক বিশ্বের রুপকার; তারা বাংলাদেশে এসে ICPC Finals এ অংশগ্রহন করবে”।
প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিক কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা হল বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দ্বারা পরিচালিত একটি বৈশ্বিক প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা। বৈশ্বিক এই প্রতিযোগিতা আইসিপিসি ফাউন্ডেশন দ্বারা পরিচালিত হয় যার সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের বেইলর বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত। ১৯৭০ এর পর থেকে বিগত চার দশকের বেশি সময় ধরে আইসিপিসি একটি পটপরিবর্তনকারী বৈশ্বিক প্রতিযোগিতামূলক শিক্ষা প্রোগ্রামে পরিণত হয়েছে যা গণিত, কম্পিউটিং বিজ্ঞান এবং প্রকৌশলে বিশ্বের সমস্যা সমাধানকারীদের আকাঙক্ষা এবং কর্মক্ষমতা অনেকগুণে বাড়িয়েছে।
বাংলাদেশ ১৯৯৮ সাল থেকে আইসিপিসিতে অংশগ্রহন করছে এবং গত বছর এশিয়া ওয়েস্ট চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিল। বাংলাদেশই এখন এশিয়ার ৪র্থ দেশ যারা এই ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার ইভেন্টের আয়োজক হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে।
আইসিপিসি ফাউন্ডেশন বিভিন্ন স্তরের প্রতিযোগিতা আয়োজন করে থাকে যেমন, স্থানীয় প্রতিযোগিতা, আঞ্চলিক প্রতিযোগিতা, আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপ এবং আন্তর্জাতিক চ্যাম্পিয়নশিপ। এই প্রতিযোগিতা প্রতি বছর শতাধিক দেশের ৩০০০ হাজারেরও অধিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৫০০০০ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে থাকে।