শোককে শক্তিতে পরিণত করে প্রযুক্তি নির্ভর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে তরুণ প্রজন্মের প্রতি আহবান জানিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর ৪৬তম শাহাদাত বার্ষিকী এবং জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বেসিসের আয়োজনে দোয়া ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই আহ্বান জানান তিনি।
২২ আগস্ট, রবিবার ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর। অনুষ্ঠানের শুরুতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের উপর নির্মিত তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরের কিউরেটর জনাব মো. নজরুল ইসলাম খান। তিনি “বঙ্গবন্ধুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ভাবনা” শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
অনুষ্ঠানে প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টকে বাঙালি জাতি ও বিশ্বের ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কতম দিন হিসেবে উল্লেখ করেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য উত্তরসূরি, প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য পুত্র কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক ভিসনারি উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয় ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের আর্কিটেক্ট। আমরা বাংলাদেশের সরকার ব্যবস্থকে পেপার লেস ব্যবস্থায় রূপান্তর করার চেষ্টা করছি। আগামীর বাংলাদেশে কোন লাল ফিতার দৌরাত্ম্য থাকবে না। দেশের আর্থিক লেনদেন সম্পূর্ণ ডিজিটাল করার ক্ষেত্রে একটা কমন প্লাটফর্ম তৈরিতে কাজ করছে সরকার।
তিনি আরও জানান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ “ মুজিব আমার পিতা” এনিমেশন মুভি তৈরি করেছে। এই মুভির মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ তুলে ধরা হবে।
অনুষ্ঠানে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে বেসিস এবং এর সদস্য প্রতিষ্ঠানের অবদান স্মরণ করেন মন্ত্রী। ফেসবুকের বিকল্প “ যোগাযোগ” অ্যাপ তৈরিতে বেসিসের সহযোগিতা চান তিনি।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। বৈষয়িক করোনা ভাইরাস মহামারীর এই সময় ডিজিটাল মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা সচল রাখাতে সরকারের সাফল্য তুলে ধরেন তিনি।
মহিবুল হাসান বলেন,বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর হতো। বঙ্গবন্ধু কমিউনিস্ট ছিলেন কিন্তু তিনি সমাজতন্ত্রকে রাষ্ট্র পরিচালনার মুলনীতি হিসেবে গ্রহণ করেননি, গণতন্ত্রকে তিনি রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি করেন। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে একাত্তরের পরাজিত শক্তি বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে হতে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হবে। দুর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে ডিজিটাল বাংলাদেশ হলো সমাধান। দুর্নীতির বিরুদ্ধে ডিজিটাল বাংলাদেশ হলো মহা ভ্যাকসিন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য অপরাজিতা হক । তিনি বঙ্গবন্ধুর জীবনী ও স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠায় তাঁর অবদান নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন,খুনিরা বঙ্গবন্ধুকে শুধুমাত্র শারীরিকভাবে হত্যা করতে সক্ষম হয়েছে, কিন্তু তাঁর চেতনা অমর। তিনি আমাদের মাঝে চিরদিন বেঁচে থাকবেন।
অনুষ্ঠানে বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর বঙ্গবন্ধুর জীবনের নানান দিক নিয়ে আলোচনা করেন। বেসিস সভাপতি বলেন, “ ১৯৪৭-১৯৭১ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের এনে দিয়েছেন স্বাধীনতা। স্বাধীনতা পরবর্তী “তলাবিহীন ঝুড়ি” থেকে স্বনির্ভর দেশে রূপান্তরিত হওয়ার সফলতার এক গল্পের নাম বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এখন দৃঢ়চিত্তে এগিয়ে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলার’ আধুনিক রূপান্তর ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে।” তিনি আরও বলেন, “ বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু আর মুক্তিযুদ্ধ—এই শব্দ তিনটি মূলত সমার্থক। এই তিনটির যেকোনো একটিকে আলাদা করে বিশ্লেষণ করার কোনো সুযোগ নেই।
অনুষ্ঠানের জাতীয় শোক দিবসে স্বপরিবারে নিহত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যসহ বাকী সকল শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এসময়
অনুষ্ঠানে জাতীয় শোক দিবসের শোককে শক্তিতে এবং শক্তিকে সমৃদ্ধিতে পরিণত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার নেপথ্য হোতাদের প্রকাশ্যে আনা ও পালাতক খুনিদের দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ারও প্রত্যয় ব্যক্ত করেন বক্তারা।