ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প বাস্তবায়নে নেয়া ইনফো সরকার প্রকল্পের অধীনে সরকারের ৮০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয়। অর্জিত হয়েছে তিনটি বৈশ্বিক সম্মাননা। সোমবার এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হলো দুই বেসকারি এনটিটিএন প্রতিষ্ঠান সামিট কমিউনিকেশন ও ফাইবার অ্যাট হোমকে। পিপিপি চুক্তির অধীনে আগামী ২০ বছরের জন্য দেশের ২৬০০ ইউনিয়নে উচ্চগতির স্মার্ট ইন্টারনেট সেবা দেয়ার লক্ষ্যে নিরবচ্ছিন্ন ডাটা ও ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করতে পিপিপি চুক্তিতে বাধ্যতামূলকভাবে ৯৯.৯% নেটওয়ার্ক আপটাইম বাস্তবায়ন করতে হবে চুক্তিবদ্ধ দুই প্রতিষ্ঠানকে। এজন্য অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল, পপ রুম, NMS, এগ্রিগেশন, জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে স্থাপিত সকল ইক্যুইপমেন্টসমূহের রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত, আপগ্রেডেশন, প্রতিস্থাপন ও পরিচালনা করবে এই দুই কোম্পানি। এর আয় ভাগাভাগি হবে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল।
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের উপস্থিতিতে সোমবার রাজধানীর আইসিটি টাওয়ারের বিসিসি সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল নির্বাহী পরিচালক (গ্রেড-১) রণজিৎ কুমার এবং ফাইবার অ্যাট হোম লিমিটেড এর পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্রিঃ জেঃ মোঃ রফিকুর রহমান এবং সামিট কমিউনিকেশন সিইও আরিফ আল ইসলাম চুক্তিতে সই করেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ ভাবে সম্মানিত হন এই প্রকল্পের সাবেক পরিচলাক ও সদ্য বিদায়ী হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকর্ণ কুমার ঘোষকে।
ইন্টারনেট ছাড়া ইনক্লুসিভ উন্নয়ন অসম্ভব : পলক
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, প্রথম আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির ভিত্তি রচনা করেছেন বঙ্গবন্ধু। আর তার অসমাপ্ত স্বপ্ন বাস্তবায়ন করছেন তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ডিজিটাল বাংলাতদেশের চারটি পিলার রচনার পর প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় সাড়ে চার হাজার ইউনিয়নে নেটওয়ার্ক স্থাপনে বিটিসিএল সফল না হওয়ায় ইনফো সরকার থ্রি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। তার পরামর্শেই একই খরচে এক হাজার ইউনিয়নের পরিবর্তে ২৬০০ ইউনিয়নে এই নেটওয়ার্ক স্থাপন করা সম্ভব হয়েছে। এটাকে টেকসই করতে অর্ধেক সরকার ও অর্ধেক বেসরকারি অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নের এই সিদ্ধান্ত নেয় হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, ইনফো সরকার থ্রি প্রকল্পটি স্মার্ট বাংলাদেশের চারটি পিলারকেই মজবুত করবে। নদীর তীর ও সমুদ্র বন্ধরকে কেন্দ্র করে সভ্যতা গড়ে উঠেছে। এরপর রেল ও বিদ্যুতকে নির্ভর করে গড়ে ওঠে শিল্প। কিন্তু কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের ফলে আমরা এখন গ্লোবাল ভিলেজে পরিণত হয়েছে। সামনে শতভাগ লেনদেন হবে কাগজের মুদ্রাহিন।
পলক বলেন, ইন্টারনেট ছাড়া ইনক্লুসিভ উন্নয়ন অসম্ভব। আর টেকসই উন্নয়নে ইনফো সরকার সবক্ষেত্রেই শতভাগ নম্বর পেয়েছে। এজন্য আমাদের অনেক কষ্ট-বেদনা সহ্য করতে হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের খরচ হয়েছে ১২০০ কোটি টাকা। ২০ হাজার কিলোমিটার ফাইবার টানা হয়েছে। এর মাধ্যমে শিক্ষা-চিকিৎসা-ব্যবসা-বিনোদন সেবা চলছে। এর মধ্যে থেকে আয়ও হয়েছে। ২০ বছর পর্যন্ত সরকারের সঙ্গে আয়ের ১০ শতাংশ ভাগাভাগি করবে।
সামিট কমিউনিকেশন সিইও আরিফ আল ইসলাম জানান, জেলা পর্যন্ত হলেও ইউনিয়ন পর্যায়ে এখনো লাভজনক নয়। তারপরও দেশের ১২৯৩ ইউনিয়নে ১৪ হাজার ৫০০ কিলোমিটার নেটওয়ার্ক স্থাপন করেছে সামিট কমিউনিকেশন। এ কারণেই এই লাইন থেকে আয় করাটা কঠীন। কেননা এই নেটওয়ার্ক দেখভালের জন্য মূলধন বিনিয়োগ সিএসআর থেকে কঠীন। হিসাব করে দেখেছি ১১ বছরের আগে মুনাফা সম্ভব নয়। তারপরও জাতীয় স্বার্থে আমরা এই গুরুভার নিয়েছি।
বক্তব্যে ফাইবার অ্যাট হোম চেয়ারম্যান মঈনুল হক সিদ্দিকী বলেন, আন্ডারগ্রাউন্ড ও ওভারহেড ক্যাবলিংয়ের মাধ্যমে এই নেটওয়ার্ক প্রান্তিক পর্যায়ের ডিজিটাল বৈষম্য কমবে। তবে এই নেটওয়ার্কের ডুপলিকেট ব্যবহার করা হলে এ থেকে কোনো সুফল মিলবে না। পুরো নেটওয়ার্ক হুমকীর মুখে পড়বে।
বিসিসির নির্বাহী পরিচালক রণজিৎ কুমারের সভাপতিত্ব অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পিপিপি কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মোঃ মুশফিকুর রহমানও মোহাম্মদ অতিরিক্ত সচিব নাভ শফিউল্লাহ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইনফো-সরকার ৩য় পর্যায় প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক প্রনব কুমার সাহা।
অনুষ্ঠানে ফাইবার অ্যটহোম ও সামিটের পক্ষ থেকে সাড়ে সাত কোটি টাকার চেক পিপিপি কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।