বিশ্ব ডাক সংস্থার (ইউনিভার্সেল পোস্টাল ইউনিয়ন- ইউপিইউ) সিএ পদে বিজয় অর্জন করেছে বাংলাদেশ। আইভরি কোস্টে অনুষ্ঠিত এই সংস্থার নির্বাচনে সিএ পদে ১২৯ ভোট থেকে এসেছে এই বিজয়। একইসঙ্গে সংস্থাটির সুবর্ণ জয়ন্তীতে চিঠি লিখে বিশ্বজয় করেছে বাংলাদেশের স্বর্ণকিশোরি নুবায়শা ইসলাম। সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিতব্য জমকালো অনুষ্ঠানে তার হতে তুলে দেয়া হবে পুরস্কার।
শুক্রবার (২৭ আগস্ট ২০২১) ইউপিইউ এর ওয়েবসাইটে এই ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
শোকের মাসে এমন দুই বিশ্বজয়কে মুজিববর্ষের অনন্য অর্জন হিসেবেই দেখছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। ইতোমধ্যেই স্বর্ণকণ্যা নুবায়শা ও তার পিতামাতা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে অভিনন্দন জানিয়েছেন মন্ত্রী।
তিনি বলেছেন, ১৪ বছরের মেয়ে তার অনাগত বোনকে উদ্দেশ্য করে যা লিখেছে তাতে আমি মুগ্ধ-দুনিয়াও তা-ই মুগ্ধ হয়েছে। এটি আমাদের মেধার বিশ্বস্বীকৃতি।
সিলেটের আনন্দ নিকেতনের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী নুবায়শা ইসলামের লেখা চিঠিটিও সবাইকে পড়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
নুবায়শার বাবা ব্যাঙ্কার ও মা শিক্ষিকা। ওর পছন্দের রং কালো। শখ বই পড়া।
চিঠিতে বোন আমালকে উদ্দেশ্য করে নুবায়শা লিখেছে- “যখন মা-বাবা আমাকে বলেছিলেন, আমি একটি ছোট বোন পেতে যাচ্ছি, তখন আমি মোটেই ঈর্ষান্বিত হইনি। এমনকি যখন তারা তোমার জন্য একটি ‘ক্রিব’ (বাচ্চাদের বিছানা) কিনেছিলেন যেখানে আমার জীবনের প্রথম দুই বছর কেটেছে মেঝেতেই একটি সাদামাটা তোষকের ওপর। কিন্তু যখন তুমি অবস্থান করছিলে বহির্বিশ্বের ভয়ঙ্কর ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশের তুলনায় এক নিরাপদ মাতৃগর্ভে, যেমনটি আমার ছিলো না; ঠিক তখনই আমি তোমাকে ঈর্ষা করেছিলাম।”
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে কোভিড -১৯ লকডাউন কীভাবে নুবায়শার জন্য একটি বসন্তকালীন অবকাশ থেকে নিজ গৃহে গৃহবন্দী অবস্থায় রূপান্তরিত হয়ে গেলো। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তার জীবন কীভাবে ‘ইউ-টার্ন’ নিয়েছিলো তা চিঠিটিতে তুলে ধরা হয়।
অনাগত বোনকে চিঠি লিখে, সে বলেছে, “তোমার অবশ্যই জানা দরকার যে আমি কী নিয়ে কথা বলছি। আমার মতো আরও লক্ষ লক্ষ মানুষের সংগ্রামের বিষয়ে নিশ্চয়ই তোমার সংগ্রহে সারি সারি বই থাকবে। কিন্তু এটা আমার গল্প; বোন থেকে বোন, আর কেউ কখনও যা জানবে না।”
নুবায়শার মনে প্রশ্ন, কোভিড ১৯ ভাইরাস প্রকৃতি মাতার পক্ষ থেকে বিশ্বে মানবসৃষ্ট বিপর্যয় সৃষ্টির শাস্তি হিসেবে এসেছে কিনা। “হতে পারে এটি আমাদের সতর্ক করছে; আমাদের মাথামোটা ভুলগুলো চেতনায় এনে দিচ্ছে ”।
কিন্তু নুবায়শা এটাতেও জোর দিচ্ছে যে, যদিও ভাইরাসটি মারাত্মক, তবে আশা হারানোও তেমনি মারাত্মক।
নুবায়শা ও তার পরিবারের মহামারী চলাকালীন সময়ে যে বুক-ভাঙ্গা পরিস্থিতির অবতারণা হয়, তার একটি রূপরেখা রয়েছে চিঠিটিতে। যেখানে তার মা তখন চরম বিষন্নতায় ভুগছিলেন এবং সে তার ফুপিকে হারিয়েছিলো কোভিড ১৯ ভাইরাসের সংক্রমণে। একই সময়ে মায়ের বিষণ্ন অবস্থায় মায়ের সঙ্গে নিজের আচরণ নিয়ে সংগ্রামের কথা তুলে ধরেছে নুবায়শা। ‘আমি জানতাম না যখন মা হতাশায় ডুবে থাকেন, তখন আমার কী করা উচিত। আমি সেখানে নিশ্চল দাঁড়িয়ে ছিলাম; যখন তিনি লড়ছিলেন ঘুম এবং ক্ষুধার সঙ্গে।
নুবায়শা তার ফুপ্পির মৃত্যুর কথাও লিখেছে এবং পরিস্থিতিটিকে “অকল্পনীয়” বলে বর্ণনা করেছে। ‘সকালে একটু অসুস্থ, সন্ধ্যায় জীবনকে আঁকড়ে ধরার চেষ্টা, এবং রাতে চলে যাওয়া – কোভিড -১৯ এমনটিই করে’ সে লিখেছে।
নুবায়শা তার ফুপ্পি সম্পর্কে বোনকে সব কিছু বলে- তিনি কতটা মহান ছিলেন, আর আমলের সঙ্গে দেখা করতে তিনি কতটা উচ্ছ্বসিত ছিলেন।
“একবার আমার তৃতীয় শ্রেণীর ইংরেজী শিক্ষক জিজ্ঞাসা করেছিলেন, আমি কিসে সবচেয়ে বেশি ভয় পাই। আমার মনে আছে, উত্তরে বলেছিলাম, বজ্রপাত এবং মাকড়সা। কিন্তু এখন আমি বলব, এটি মৃত্যু এবং কাউকে হারানোর ভয়” -এভাবেই এগিয়ে চলে চিঠিটি।
সবশেষে, চিঠিটি আমলকে দুর্ভাগ্যজনক এই সময়ে বিশ্বাস ও ধৈর্যের সাথে লড়াই করতে উৎসাহিত করে। ‘আমি হয়তো ফুপিকে হারিয়েছি কিন্তু তবুও আমি শীঘ্রই তোমার সাথে দেখা করার আশা করছি। তোমার নামের অর্থ ‘আশা’- আমল। আর এখানেই তুমি অনন্য। আসন্ন ভালো সময়ের ব্যাপারে তুমিই আমার প্রত্যাশাকে বাড়িয়ে তুলছো।