চলতি বছর ১১ জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশে ডিজিটাল প্রযুক্তি আইনের (ডিএসএ) মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে অন্তত ৪৩৩ জনকে। কারা অধিদপ্তরকে উদ্ধৃত করে সাম্প্রতিক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
সোমবার ‘বাংলাদেশ: ভিন্নমতের কোনো স্থান নেই—অনলাইনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অভিযান’ শিরোনামে এই প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রকাশিত ২৪ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনে লেখক মোশতাক আহমেদ, কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরসহ ডিএসএর আওতায় আটক ১০ জনের ঘটনার পর্যালোচনা করা হয়েছে।
অ্যামনেস্টির ব্রিফিং-এ বলা হয়, ২০২১ সালের জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশে ডিএসএ’র অধীনে হওয়া মামলায় অন্তত ৪৩৩ জন কারাবন্দি আছেন; যাদের বেশির ভাগকেই অনলাইনে ভুল এবং আক্রমণাত্মক তথ্য প্রকাশের অভিযোগে গ্রেফতারকরা হয়েছে। যাদের আইনটির লক্ষ্য বানানো হয়েছে, তাদের মধ্যে সাংবাদিক, কার্টুনিস্ট, গায়ক, অ্যাক্টিভিস্ট, উদ্যোক্তা, শিক্ষার্থী, এমনকি লেখাপড়া না জানা এক কৃষকও রয়েছেন। ২০১৮ সালের অক্টোবরে ডিএসএ প্রবর্তনের পর থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে ২ হাজার ব্যক্তির বিরুদ্ধে ১ হাজার ৩০০টি মামলা করা হয়েছে।
তাদের ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই আইনে কর্তৃপক্ষকে এতটাই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুধু ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের সমালোচনার অভিযোগে তাঁদের গুম, নিবর্তনমূলক গ্রেফতার, নির্যাতনসহ ব্যাপকতর মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল-এর দক্ষিণ এশিয়া ক্যাম্পেইনার সাদ হাম্মাদি বলেন, ‘ডিএসএ’র আওতায় কর্তৃপক্ষ যে ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা থেকেই স্পষ্ট- বর্তমানে বাংলাদেশে কোনো কিছুর প্রতিবাদ করা বা ভিন্নমত পোষণ কতটা বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন ধরনের মতপ্রকাশে এমন অন্যায্য বিধিনিষেধ আরোপ বাংলাদেশি সমাজের সর্বস্তরে ভয়ের বার্তা ছড়িয়েছে এবং স্বাধীন গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের কাজের পরিসরকে সংকুচিত করেছে। শুধু নিজেদের মতপ্রকাশের অধিকার চর্চার কারণে যাঁদের বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ বন্দি করেছে, তাঁদের অবশ্যই মুক্তি দিতে হবে।’
ব্রিফিংয়ে আরও বলা হয়- শুধু অনলাইনে মন্তব্য করার কারণে যেকোনো জায়গায় অভিযান চালানো; ডিভাইস এবং তাতে থাকা তথ্যাদি জব্দ করা এবং বিনা ওয়ারেন্টে কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করার মতো ক্ষমতা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দেয় ডিএসএ। এ ধরনের চর্চা ইন্টারন্যাশনাল কভেনেন্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটসের (আইসিসিপিআর) মাধ্যমে সুরক্ষিত মত প্রকাশের স্বাধীনতার লঙ্ঘন, যেখানে বাংলাদেশও আইসিসিপিআর-এ একটি স্বাক্ষরকারী পক্ষ।