সরকারি ক্রয়ে ই-জিপি’র প্রবর্তন একটি গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক পদক্ষেপ হলেও এখনো সব প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের ক্রয়ে এর ব্যবহার হচ্ছে না। এছাড়াও ই-জিপি’র ব্যবহার এখনো ক্রয়াদেশ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকায় দুর্নীতি হ্রাস ও কাজের মানের ওপর ই-জিপি’র কোনো প্রভাব লক্ষ করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
বুধবার ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রকাশিত ‘সরকারি ক্রয়ে সুশাসন: বাংলাদেশে ই-জিপি’র কার্যকরতা পর্যবেক্ষণ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপদেষ্টা-নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন টিআইবির গবেষণা ও পলিসি বিভাগের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাহজাদা এম আকরাম। এছাড়া, গবেষক দলের অন্য সদস্যরা হলেন গবেষণা ও পলিসি বিভাগের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার নাহিদ শারমীন ও মো. শহিদুল ইসলাম। সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক শেখ মনজুর-ই-আলম।
এলজিইডি, সড়ক ও জনপদ, পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড-আরইবি’র ই-জিপি প্রক্রিয়া ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে পরিচালিত জরিপ গবেষণায় টিআইবি বলছে, এই প্রক্রিয়ায় ক্রয় প্রক্রিয়া সহজতর হলেও কার্যাদেশ পাওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব, যোগসাজশ, সিন্ডিকেট এখনো কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করছে। একইসঙ্গে ই-জিপি প্রবর্তনের ফলে ম্যানুয়াল থেকে কারিগরি পর্যায়ে সরকারি ক্রয়ের উত্তরণ ঘটলেও সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের একাংশ দুর্নীতির নতুন পথ খুঁজে নিয়েছে।
এছাড়াও কার্যাদেশ বিক্রি, অবৈধ সাব-কন্ট্রাক্ট, কাজ ভাগাভাগির কারণে ই-জিপিতে কাজের মানের ওপর কোনো ইতিবাচক প্রভাব নেই এবং ই-জিপি ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো কোনো কোনো কাজে ম্যানুয়াল পদ্ধতির ওপর নির্ভরশীল বলে দাবি করা হয়েছে।
ফলে ই-জিপি’র মূল উদ্দেশ্য (অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, নিরপেক্ষ মূল্যায়ন) অনেকখানি ব্যাহত হচ্ছে এবং বিদ্যমান এই সকল সীমাবদ্ধতা থেকে উত্তরণ রা ঘটলে ই-জিপি’র সুফল পুরোপুরি পাওয়া যাবে না বলেও মন্তব্য করা হয়েছে প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণে।
গবেষণা অনুযায়ী, ই-জিপি প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি স্কোর পেয়েছে সওজ (৬৪ শতাংশ); এর পরেই রয়েছে পাউবো (৬০ শতাংশ)। ই-জিপি গাইডলাইন অনুযায়ী সব ই-জিপি ব্যবহারকারীদের ই-জিপি ব্যবস্থায় নিবন্ধিত হওয়া বাধ্যতামূলক হলেও তিন ধরনের প্রতিষ্ঠান ই-জিপিতে নিবন্ধিত- ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান, ঠিকাদার ও ব্যাংক। ই-জিপি চালুর প্রথম দিকে অধিংকাশ ঠিকাদারই সংশ্লিষ্ট অফিসের সহায়তায় ই-জিপিতে নিবন্ধিত হয়েছে, এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৬,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকার বিনিময়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার অপারেটরদের মাধ্যমে ই-জিপি আইডি খোলা ও নিবন্ধন সম্পন্ন করেছে। তবে কোনো কোনো ঠিকাদার নিজেই নিবন্ধন করেছে।