কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার এক যুবকের মাথা থেকে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে একটি ক্ষুদ্র ডিভাইস উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা লো ফ্রিকোয়েন্সির মাইক্রোচিপ শনাক্তকারী ডিভাইস দিয়ে তার মাথায় নিউরো চিপ শনাক্ত করা হয়। এ শনাক্তকরণ ডিভাইসটি APTek CC308+ Anti-Spy Signal Bug RF Detector মডেলের।
আলোচিত এই ‘ব্রেইন হ্যাক’ এর শিকার হওয়া যুবকের নাম হারুনুর রশিদ (৩৪)। সে আলী আকবার ডেইল ইউনিয়নের সিকদারপাড়ার বাসিন্দা ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য।
হারুনুর রশিদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহারিয়ার মাহমুদ তুহিন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। গণমাধ্যমকে কক্সবাজারে এক চিকিৎসকের চেম্বারে সম্প্রতি হারুনের মাথায় সফলভাবে এই অস্ত্রোপচার হয়। অস্ত্রোপচারের সম্পূর্ণ দৃশ্য তারা রেকর্ড করেছেন বলেও তিনি জানিয়েছেন।
এসময় হারুনের আইনজীবী শাহারিয়ার মোহাম্মদ তুহিনসহ আরও কয়েকজন সেখানে উপস্থিত ছিলেন। অস্ত্রোপচারের সম্পূর্ণ দৃশ্যও তারা রেকর্ড করেছেন। শাহারিয়ার মাহমুদ তুহিন বলেছেন, ‘প্রথম ও দ্বিতীয় অপারেশনের সময় আমি তার পাশেই ছিলাম। দ্বিতীয়বারের অপারেশনে মাইক্রো-চিপ উদ্ধার হওয়ার সব ঘটনা আমি নিজ চোখে প্রত্যেক্ষ করি। দেখলাম হারুনের মাথা থেকে একটি মাইক্রো চিপ শনাক্ত করেন চিকিৎসক। চার কোণ আকৃতির ছোট চিপটি বের করা হয়। এর নিচের কোণাগুলো একটু সূচালো। চিপটি বের করার সময় আমরা ভিডিও করেও রেখেছি।’
তিনি বলেন, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখে বিভাগীয় সাইবার ট্রাইব্যুনাল চট্টগ্রামে যাবতীয় বিষয় উল্লেখ করে হারুনের পক্ষে মামলা করি। ট্রাইব্যুনাল মামলাটি সিআইডিকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন। এখন সেটি তদন্তাধীন আছে।
মামলার অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট তুহিন বলেন, ‘মামলা চলমান রয়েছে। তদন্ত করছে সিআইডি।’
হারুনের মাথায় অস্ত্রোপচারকারী চিকিৎসক নিরাপত্তার স্বার্থে নাম গোপন রেখে বলেছেন, ‘মাথার চামড়া এবং অক্সিপেটাল বোনের মাঝখানে একটি ক্ষুদ্র ফরেইন বডি খুঁজে পেয়েছি। ফরেইন বডির নিচের অংশে দুটি সুচালো অংশ ছিল যার দ্বারা এটি অক্সিপেটাল হাড়ের পেশির পৃষ্ঠে সংযুক্ত ছিল। দুটি গর্ত স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান ছিল, যা এই দুটি তীক্ষ্ণ অংশের দীর্ঘস্থায়ী সংযুক্তির সম্ভাব্য ফলাফল। উদ্ধার হওয়া ‘ফরেন বডি’র দৃশ্যমান পৃষ্ঠটি স্টেইনলেস স্টিলের মতো চকচকে, কয়েকটি চালের দানার আকৃতির এ ছোট্ট ডিভাইস শক্তিশালী ম্যাগনেটিক শক্তিসম্পন্ন ছিল, এটি কাঁচির সঙ্গে খুব শক্তভাবে আটকে থাকে।’
হারুন দাবি করেন, হ্যাকাররা তার মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণ করতে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা নিউরো চিপ ব্যবহার করছে। তার এমআরআই পরীক্ষা চট্টগ্রামের এপিক হেলথ কেয়ার লিমিটেডে করেছে এবং সেই টেস্টেই মাথায় ডিভাইস শনাক্ত হয়েছে।
এ বিষয়ে ওই হাসপাতালে যোগাযোগ করলে প্রতিষ্ঠানের জনসংযোগ কর্মকর্তা (পিআরও) কাউসার আলম বলেন, হাসপাতালের সংরক্ষিত তথ্যভান্ডারে হারুনুর রশিদ নামে ওই রোগীর এমআরআই পরীক্ষার ‘সত্যতা’ রয়েছে।
এই এমআরআই পরীক্ষার রিপোর্ট পেয়ে সম্প্রতি অপারেশন করে মাথা থেকে ক্ষুদ্র একটি ডিভাইস বের করা হয়।
এর আগে বিভিন্ন মিডিয়ায় দেয়া ভিডিও সাক্ষাৎকারে মো. হারুনুর রশিদ বলেছিলেন, ‘চিকিৎসক, প্রশাসন ও পাড়া প্রতিবেশী আমাকে সিজোফ্রিনি কিংবা মেন্টাল বললেও আমি নিশ্চিত, আমার ব্রেইন হ্যাক করেছে হ্যাকাররা। এমআরআই পরীক্ষায় আমার মাথায় নিউরো চিপ শনাক্ত হয়েছে। তাদের দাবিকৃত অর্থ না দিলে মুছে দেওয়া হবে আমার মস্তিষ্কের সব স্মৃতি।’ এই অভিযোগ তুলে অঝোরে কেঁদেছিলেন তিনি।
কক্সবাজারের কুতুবদিয়ার সাবেক ইউপি মেম্বার মো. হারুনুর রশিদের দাবি, বছর তিনেক আগে শ্বশুরবাড়িতে গেলে তার শ্যালিকা আসমা উল হোসনা চায়ের সঙ্গে মিশিয়ে কিছু একটা খাওয়ালে ঘুমিয়ে পড়েন তিনি। এরপর শ্যালিকাসহ হ্যাকার চক্র তার মাথায় ইনজেকশন পুশ করে একটি ছোট ইলেকট্রিক যন্ত্র (কম্পিউটার ডিভাইস) বা নিউরো চিপ স্থাপন করে তার বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতিনিয়ত তাকে সাইবার নির্যাতন করা হচ্ছে।