চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ঝুঁকি মোকাবেলায় ব্যবসায়ের ডিজিটাল রূপান্তরের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়ের একটি প্লাটফর্ম গড়ে তুলছে সরকার। এই লক্ষ্য বাস্ত বায়নে নতুন উদ্যোক্তাদের ই-কমার্স ব্যবসায় পরিচালনায় বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ দিচ্ছে ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) । এরই ধারাবাহিকতায় ‘ই-বাণিজ্য করবো, নিজে ব্যবসা করবো’ স্লোগান বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এবার ১৭, ১৮ ও ১৯ তম ব্যাচের ৭৫ জন নির্বাচিত উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ দেয়া শুরু করেছে সংগঠনটি।
শনিবার (৩১ আগস্ট) সকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের অভিষেক অনুষ্ঠানে এমন কথাই জনান বক্তারা।
বাণিজ্যমন্ত্রণালয়ের বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) সেল মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মোঃ কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোঃ মোফিজুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ই-ক্যাব সভাপতি শমী কায়সার। অনুষ্ঠানে ই-কমার্স ব্যবসায়ে এসএমই, ইন্টারনেট, পেমেন্ট এবং লজিস্টিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে আলোকপাত করেন ডব্লিউটিও ডিজি (অন লিভ) মুনীর চৌধুরী।
এসময় প্রশিক্ষণ কর্মসূচির নানা দিক তুলে ধরেন ‘ই-বাণিজ্য করবো, নিজে ব্যবসা করবো’ ডব্লিউটিও সেল এর প্রকল্প পরিচালক মোঃ হাফিজুর রহমান। তিনি জানান, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে সরকার গৃহীত পদক্ষেপ বাস্তবায়নের নিরিখে তরুণ উদ্যোক্তাদের মেধা ও প্রাণশক্তিকে কাজে লাগিয়ে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে এগিয়ে থাকতেই এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এটি সরকারের মেধা ভিত্তিক কর্মসংস্থান গড়ে তোলার একটি প্রয়াস। সেই প্রয়াস বাস্তবায়নে ইতিমধ্যেই ৪০০ উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে ই-ক্যাব।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোঃ মোফিজুল ইসলাম বলেন, আমরা গরীব কেন। কারণ আমাদের টাকা নাই। কেন টাকা নাই। কারণ আমরা গরীব, তাইলে কিছু করার নাই। আসলে আমাদের টাকা নেই এই জন্য যে, আমাদের বিক্রি করার কিছু নেই। যদি বিক্রি করার কিছু থাকতো তবে টাকা পেতাম। তাই আমাদের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার বিক্রির উপযোগী পণ্য আমাদের তৈরি করতে হবে। তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার না করলে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকা যাবে না।
তিনি আরো বলেন, বর্তান সময়ে আমাদের সবারই লক্ষ্য টাকা রোজগার করা। এখানে মূল্যবোধ খুব বেশি কাজ করে না। টাকা দিলে কেনা যাবে না এমন কিছু নেই। কেবল মার্কেট অ্যাক্সেস থাকলেই টাকা দিয়ে সব কেনা যায়। কিন্তু আগামীতে মানুষ আর শপিং মলে যাবে না। ইন্টারনেট থিকে কিনবে। এখন ব্যবসায়িক সংস্কৃতি পাল্টাচ্ছে। তাই এই বাস্তবতাকে মোকাবেলা করেই বাণিজ্যমন্ত্রণালয়, ই-ক্যাব সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে ই-বাণিজ্য.গভ.বিডি নামে একটি মার্কেট প্লেস গড়ে তুলছি। আমরা আশা করছি অন্য সব কোম্পানি এই ব্যবসায় যোগ করবে। যারা বেকার তাদেরও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। সেজন্যই ১১ দিনের এই প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ই-ক্যাব কিভাবে তরুণ উদ্যোক্তাদের মধ্যে দক্ষতা ও বাণিজ্য কৌশলকে ছড়িয়ে দিচ্ছে সে বিষয়টি তুলে ধরেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল। আলোচনা করেন ই-ক্যাবের কার্য প্রক্রিয়া সম্পর্কে। তমাল বলেন, ৫০ থেকে ই-ক্যাব এখন প্রায় এক হাজার সদস্যের সংগঠনে পরিণত হয়েছে। ইতিমধ্যেই আমরা পোস্ট অফিসের কার্যক্রমকে ডিজিটালাইজ করতে শুরু করেছি। পাঁচ হাজার কর্মীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এর ফলে ট্রাকিং সিস্টেমের মাধ্যমে সারাদেশে এখন কম খরচে স্বল্প সময়ের মধ্যে ভোক্তার কাছে পৌঁছে দেয়া যাচ্ছে। এর আগেও আইসিটি বিভাগের মাধ্যমে আমরা হাইটেক পার্কের সহায়তা প্রায় এক হাজার জনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি।
তিনি জানান, বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিলের সার্বিক তত্বাবধানে এই প্রশিক্ষণ পরিচালনা করছে ই-ক্যাব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের কারিকুলামের ওপর ভিত্তি করে একটি ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ দিচ্ছে ই-ক্যাব। প্রায় ৫ হাজার উদ্যোক্তাকে আমরা এই প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে।
ই-ক্যাব সাধারণ সম্পাদক বলেন, গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী,২০২৫ সাল নাগাদ গতানুগতি ধারায় পরিচালিত বিশ্বের ৭০ শতাংশ ব্যবসায় অনলাইন মুখী হবে। বাংলাদেশে প্রায় ৭০ লাখের ওপর নিবন্ধিত ব্যবসায় রয়েছে। তাদেরকে এই ধারায় সংযুক্ত করাটা এখন সময়ের দাবি। কেননা অনলাইনে কেনাকাটায় স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতা বিদ্যমান হওয়ায় সবাই কোনো ব্যবসায় শুরু করতে গেলে কিংবা কেনা-কাটা করার আগে গুগল করেন।